রাজশাহীতে কলেজছাত্রীকে উত্তক্ত্যের প্রতিবাদ করায় হামলার শিকার বাবা মাথায় ব্যান্ডেজ নিয়ে ঘুরছেন থানায় মামলা করার আশায়। কিন্তু গত ৬ দিনেও মামলা নেয়নি পুলিশ। গত ১২ আগস্ট রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনের এ ঘটনায় বখাটেদের হামলার শিকার হন নীল মাধব সাহা। এ সময় তাঁর স্ত্রীকেও মারধর করে বখাটেরা।
এ ঘটনার পরে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করতে থানায় থানায় ঘুরছেন নীল মাধব সাহা। কিন্তু নগরীর চন্দ্রিমা থানা, মতিহার থানা বা রাজশাহী রেলওয়ের জিআরপি থানা কেউই মামলাটি নেয়নি বলে জানা গেছে। বাধ্য হয়ে বুধবার দুপুরে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন নীল মাধব সাহা ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা।
এদিকে ঘটনার পর থেকে ক্লাসে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে ওই কলেজছাত্রী। একই সঙ্গে কলেজছাত্রীর বাবা নীল মাধব সাহার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটিও বন্ধ রয়েছে। নীল মাধব রাজশাহী নগরীর মেহেরচন্ডি এলাকার বাসিন্দা। তিনি নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অফিস সহকারী।
নীল মাধব সাহা সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার মেয়ে কলেজে যাতায়াতের সময় তাকে প্রেমের প্রস্তাববসহ নানাভাবে উত্ত্যক্ত করে আসছিল মেহেরচন্ডি কড়াইতলা এলাকার ইউসুফ আলীর বখাটে ছেলে এরফান খান মেরাজ, সামদের ছেলে রুহুল আমিন সরকার প্রিন্স, আক্তারের ছেলে রবিন। এ নিয়ে গত ১২ আগস্ট সকালে প্রতিবাদ করি আমি। এর পর ওইদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার ওই বখাটেরাসহ তাদের আরো চার-পাঁচজন সহযোগী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনে আমার পার্লারে গিয়ে হামলা চালায়। ’
তিনি দাবি করেন, হামলার সময় তাঁকে ছুরিকাঘাত ও হাতুড়ি দিয়ে পেটাতে থাকে বখাটেরা। এ সময় তাঁকে উদ্ধার করতে এসে হামলার শিকার হন তাঁর স্ত্রীও।
মাথায় ছুরিকাহত নীল মাধব সাহাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁর মাথায় ১২টি সেলাই রয়েছে। তবে ওই ঘটনার পরে নীল মাধব সাহা নগরীর মতিহার, চন্দ্রিমা ও রাজশাহী জিআরপি থানায় ঘুরছেন মামলার আশায়। কিন্তু পুলিশ মামলা গ্রহণ করছে না বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
নীল মাধব বলেন, ‘হামলাকারীরা নিজেদের ছাত্রলীগের কর্মী পরিচয় দিয়ে এলাকা দাঁপিয়ে বেড়ায়। এ কারণে পুলিশ মামলা নিচ্ছে না। আমরা হিন্দু মানুষ হওয়াই হয়তো আমাদের পক্ষে থাকছে না পুলিশ। আমি গরীব মানুষ। হামলার পরে টাকার অভাবে ঠিকমতো চিকিৎসা করাতেও পারছি না। আবার ভয়ে পার্লারেও যেতে পারছি না। ফলে ব্যবসা বন্ধ হয়ে আছে। ’
তাঁর স্ত্রী বন্ধনা রানী শাহা বলেন, ‘এখনো বখাটেরা ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে আমাদের পরিবার নিয়ে নানা আজেবাজে মন্তব্য করে যাচ্ছে। আমরা তাদের ভয়ে বাড়ি থেকে ঠিকমতো বের হতে পারছি না। ঘটনার পর থেকে মেয়েও কলেজে যেতে পারছে না। কিন্তু থানায় মামলা করতে গেলেও কোনো থানায় মামলা নিচ্ছে না। মতিহার থানা পাঠাচ্ছে চন্দ্রিমা থানায়, আবার চন্দ্রিমা থানা পাঠাচ্ছে রেলওয়ে থানায়। তবে কেউ গত ৬ দিন মামলা নেয়নি। ’
তবে নগর পুলিশের মুখপাত্র রফিকুল আলম বলেন, এই ধরনের অভিযোগ আমাদের জানা নেই। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চন্দ্রিমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমরান হোসেন বলেন, ঘটনাটি জিআরপি থানা এলাকায়।
তবে জিআরপি থানার ওসি গোপাল কর্মকার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ঘটনাটি মতিহার থানায়, সেখানেই মামলা হবে।
মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার আলী তুহিন বলেন, এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। তারা যে অভিযোগ করেছে লিখে দেন।