দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকার পর শেরপুরের সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ফের চালু হয়েছে বিনামূল্যে সিজার অপারেশন কার্যক্রম। সরকারী হাসপাতালে পুনরায় বিনামূল্যে সিজার অপারেশন কার্যক্রম শুরু হওয়ায় সন্তানসম্ভবা দরিদ্র পরিবারের নারী ও তাদের পরিবারদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। এটি ঝিনাইগাতীবাসীর জন্য সত্যিই এক সুখবর।
গারো পাহাড় অধ্যুষিত ছোট্ট জনপদ ঝিনাইগাতীতে যেমন রয়েছে হতদরিদ্র ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বসবাস, তেমনি এ অঞ্চলের প্রায় ৬০ ভাগ মানুষ বসবাস করে দারিদ্র্যসীমার নিচে। আর এ জনপদে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসার সরকারী প্রতিষ্ঠান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত এক বছরের অধিক সময় যাবত নানা সমস্যার কারণে এখানকার অপারেশন থিয়েটারে সিজার অপারেশন কার্যক্রম ছিল না।
অপারেশনের জন্য ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ছিল অকেজো ও বিকল। অবশেষে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ রাজীব সাহার উদ্যোগে বিকল যন্ত্রপাতিগুলো মেরামত করে মঙ্গলবার থেকে চালু করা হয়েছে সিজার অপারেশন। সিজার অপারেশন কার্যক্রম পরিচালনা করেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ রাজিব সাহা, গাইনি কনসালট্যান্ট ডাঃ মায়া হোড়, অ্যানেস্থেসিয়া কনসালট্যান্ট ডাঃ নিলাদ্রী হোড় পার্থ, ডাঃ সাদ্দাম হোসেন, ডাঃ ফাতেমাতুজহুরা নিপা।
মঙ্গলবার দুপুরে এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিজারিয়ানের মাধ্যমে কন্যাসন্তান জন্ম দেয় উপজেলার নকশী গ্রামের রহুল আমিনের স্ত্রী। অপারেশনের পর প্রসূতির স্বামী জানান, তার সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করার পর নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে সন্তান প্রসব না হওয়ায় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডাঃ রাজিব সাহার নেতৃত্বে একদল চিকিৎসক তার স্ত্রীর সিজার অপারেশন করেন। তিনি আরও জানান, প্রথম দিকে কিছুটা নার্ভাস ছিলাম।
কিন্তু এখানকার অভিজ্ঞ ডাক্তার ও নার্সদের প্রচেষ্টায় আমার সন্তান সুস্থ ও সুন্দরভাবে জন্ম নিয়েছে। আমার স্ত্রী-সন্তান উভয়ই ভাল আছে। আমি এতেই খুশি। মহান সৃষ্টিকর্তা ও অপারেশনের সঙ্গে জড়িত সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। এছাড়া বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকে সিজার করালে প্রায় ১৫ হাজার টাকা ব্যয় হতো। যা আমার পক্ষে বহন করা সম্ভব ছিল না। সরকারী হাসপাতালে বিনামূল্যে এই সুযোগ পেয়ে আমি খুব খুশি। এজন্য তিনি সবার কাছে সন্তানের জন্য দোয়া চেয়েছেন।
দীর্ঘদিন পর সিজার অপারেশন শুরু হওয়া প্রসঙ্গে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ রাজিব সাহা জানান, অপারেশনের জন্য ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিগুলো মেরামত করে মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো সিজার অপারেশন শুরু করলাম। সন্তানসম্ভবা কোন নারী হাসপাতালে ভর্তি হলে প্রথমেই নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে সন্তান ভূমিষ্ঠ করাতে চেষ্টা করা হবে।
এক্ষেত্রে নরমাল ডেলিভারিতে ব্যর্থ হলেই কেবল সিজার করা হবে। বিনামূল্যে সিজার অপারেশন কার্যক্রম এ এলাকার জন্য অনেক ভাল একটা সুযোগ। ঝিনাইগাতী উপজেলার সন্তানসম্ভবা নারীদের বেসরকারী হাসপাতাল বা ক্লিনিকে ভর্তি না করে, এ হাসপাতালে ভর্তি করানোর জন্য পরামর্শ দেন।
এ ব্যাপারে শেরপুরের সিভিল সার্জন অনুপম ভট্টাচার্য্য বলেন, অনেকদিন ধরেই শেরপুর সদর হাসপাতালে এ সেবাটি চালু রয়েছে। অনেকদিন বন্ধ থাকার পর ঝিনাইগাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবাটি চালু করা হলো। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে অন্যান্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও একই সেবা চালু করা হবে বলেও জানান তিনি।