হার্টের রক্তনালিতে ব্লক খুবই জটিল সমস্যা। সময়মতো ধরা না পড়লে বিপদ হতে পারে। এটি এমন এক ধরনের রোগ যার শুরুর দিকে কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। কিন্তু ক্রমাগত হার্টের ক্ষতি হতে থাকে এবং এক সময় রোগী হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিতে পড়ে।
* হার্ট ব্লক কী
শরীরের প্রত্যেকটি কোষে রক্তের মাধ্যমে অক্সিজেন ও পুষ্টি উপাদান পৌঁছে দেওয়ার জন্য অসংখ্য রক্তনালি রয়েছে। রক্ত সঞ্চালিত প্রক্রিয়ার কেন্দবিন্দুতে রয়েছে হৃৎপিণ্ড যা ক্রমাগত সংকোচনের মাধ্যমে সারা শরীরে রক্ত প্রবাহ করে থাকে। হৃৎপিণ্ডের কোষে অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহের জন্য রক্তনালি রয়েছে, যাদের করোনারি আর্টারি বলা হয়। হৃৎপিণ্ডের রক্তনালি সংকুচিত হয়ে গেলে অথবা রক্তনালিতে কোলস্টেরল জমে রক্ত চলাচলে বাধার সৃষ্টি হলে তাকে হার্ট ব্লক বলা হয়। করোনারি আর্টারিতে সংকোচন বা কোলস্টেরল জমে এ সমস্যার সৃষ্টি বলে মেডিকেলের ভাষায় এটি করোনারি আর্টারি ডিজিস বলা হয়।
* কেস স্টাডি
৪০ বছর বয়স্ক আহসান ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ ও রক্তে উচ্চমাত্রায় কলস্টেরল রোগে ভুগছেন। তিনি দশ বছর ধরে ধূমপান করেন। একদিন সকালে পার্কে হাঁটার সময় কিছুক্ষণ পর বুকে চাপ অনুভব করেন। এরপর তিনি ডাক্তারের কাছে যান। ডাক্তার তাকে পরীক্ষা করে ইসিজি ও ইকো রিপোর্ট স্বাভাবিক পান, কিন্তু ইটিটি পজিটিভ হলে এনজিওগ্রাম করার পরামর্শ দেন। এনজিওগ্রামে তার LyCX রক্তনালিতে একটি (৮৫%) ব্লক ধরা পড়ে। এরপর তার মনে বেশ কিছু প্রশ্নের অবতারণা হয়। সে প্রশ্নগুলো নিয়ে নিম্নে আলোচনা করা হলো।
* কী কী কারণে হার্টের রক্তনালিতে ব্লকেজ হতে পারে
সাধারণত অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস থাকলে, ধূমপান করলে, অনিয়ন্ত্রিত উচ্চরক্তচাপ থাকলে বা রক্তে চর্বির আধিক্য থাকলে বা জেনেটিক (বংশগত) ও পারিবারিক কারণে হার্টের রক্তনালিতে চর্বির আস্তর জমে রক্তনালি ব্লকেজ হতে পারে।
* হার্টের রক্তনালিতে ব্লকেজ হলে কী কী সমস্যা হতে পারে
হার্টের রক্তনালিতে ব্লকেজ হলে রক্তনালি সরু হয়ে রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে হার্টের মাংসপেশিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন ও খাবার পায় না। ব্যায়াম বা অধিক পরিশ্রমের সময় যখন অক্সিজেন ও খাবারের চাহিদা বেড়ে যায় তথাপি রক্ত সরবরাহ না বাড়লে হার্টে এক ধরনের তীব্র Chest discomfort বা বুকে চাপা ব্যথা অনুভূত হয়, যাকে অ্যানজাইনা বলে, ফলে Chronic stable angina হতে পারে। এ ছাড়া রক্তনালির চর্বির স্তর ফেটে গিয়ে এর ওপর রক্তের দানা জমা হয়ে রক্তনালি আংশিক বা পুরো বন্ধ হয়ে অ্যাকিউট করোনারি সিনড্রোম বা হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।
* কোন কোন ক্ষেত্রে Stenting বা রিং লাগানো অথবা Angioplasty করা হয়
হার্টের রক্তনালির ব্লক যদি Left main coronary artery বা বাঁ দিকের মূল করোনারি ধমনিতে না হয় অথবা অন্যান্য করোনারির রক্তনালির উপযুক্ত জায়গায় হয় এবং তা একটি দুটি অথবা তিনটি রক্তনালিকেই আক্রান্ত করে তাহলে stenting বা রিং লাগানো সম্ভব। রক্তনালির তিন বা ততোধিক ব্লকের চিকিৎসায়ও Angioplasty বা রিং লাগানো যেতে পারে যদি ব্লকগুলো উপযুক্ত জায়গায় হয় বা রোগী অপারেশন করতে অস্বীকার করে এবং রিং লাগাতে চায়। Left main coronary artery stenosis বা বামদিকের মূল করোনারি ধমনিতে ব্লক হলে সাধারণত বাইপাস সার্জারি করা হয়। কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন কার্ডিয়াক সেন্টারে ইন্টারভেনশনাল হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ Interventional cardiologist left main বা বাঁ দিকের মূল করোনারি ধমনি অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে রিং (Stenting) করছেন, বিশেষ করে Drug Eluting Stent আবিষ্কার হওয়ার পর থেকে।
* হার্টের বাইপাশ অপারেশন না করে Stenting বা রিং বসানো যায় কি না
বাইপাস সার্জারি না করে রিং (Stenting) করা হয়, যদি ব্লকগুলো রিং- এর জন্য উপযুক্ত হয় অথবা রোগী বুক কেটে অপারেশন করতে রাজি না থাকে, তখন কোনো কোনো ক্ষেত্রে রোগীদের আংশিক Revascularization করা যেতে পারে।
* বেলুন এনজিও প্লাস্টি কী
বেলুন এনজিও প্লাস্টি এক ধরনের হার্টের রক্তনালির আধুনিক চিকিৎসা যেখানে রক্তনালিতে ব্লক হলে তা বেলুন দিয়ে ফুলিয়ে ব্লক দূর করা যায় বা ব্লকের মাত্রা কমানো হয়।
হার্ট ব্লক একটি গুরুতর সমস্যা। যার চিকিৎসা পদ্ধতি বেশ জটিল। আর তাই উত্তম হলো কীভাবে হার্ট ব্লক প্রতিরোধ করা যায় তা জেনে সে মোতাবেক জীবনযাপন করা। হর্টি ব্লক প্রতিরোধের কিছু টিপস নিচে দেওয়া হলো-
* হার্ট ব্লক এবং হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম প্রধান একটি কারণ হলো ধূমপান। তাই ধূমপানের অভ্যাস পরিত্যাগ করতে হবে।
* হার্টের জন্য ক্ষতিকর এমন খাবার বর্জন করতে হবে। যেমন সরল শর্করা, স্যাচুরেটেড ফ্যাট, ট্রান্স ফ্যাট ইত্যাদি।
* শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে হবে। এক্ষেত্রে বিএমআই (বডি মাস ইনডেস্ক) অনুযায়ী শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা।
* অহেতুক মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে।
* নিয়মিত রক্তচাপ মেপে দেখা উচিত এবং রক্তে কলস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
হার্ট ব্লক একটি জটিল ব্যাধি তবে প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দেওয়া মাত্রই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরনাপন্ন হলে ঝুঁকি কিছুটা কমে যায়।