ডলারের বিপরীতে টাকার দাম কমায় লাভ হচ্ছে দেশের রপ্তানিকারকদের। আর রপ্তানি আয়ের সিংহভাগ তৈরি পোশাক থেকে আসায় এই খাতের উদ্যোক্তাদের আগের চেয়ে লাভবান হওয়ার কথা। কিন্তু লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ায় কারখানায় উৎপাদন অব্যাহত রাখতে বেশি সময় জেনারেটর চালু রাখতে বাড়তি জ্বালানির জন্য লাগছে বাড়তি খরচ। তার ওপর সরকার তেলের মূল্যবৃদ্ধি করায় স্বভাবতই খরচ আরও বেড়েছে। তাই ডলারের মূল্যবৃদ্ধির বাড়তি লাভ বিদ্যুতে চলে যাচ্ছে বলে দাবি করছেন পোশাক রপ্তানিকারকেরা।
পোশাক রপ্তানিকারকেরা বলছেন, আগে জেনারেটরের ব্যবহার তেমন করতে হতো না। কিন্তু মাসখানেক ধরে চলা লোডশেডিং সামাল দিতে দিনে তিন-চার ঘণ্টা করে জেনারেটর চালাতে হচ্ছে। মাঝারি আকারের তৈরি পোশাক কারখানায় দিনে প্রায় ১৫০ লিটার ডিজেলের ব্যবহার হচ্ছে। এতে মাসে বাড়তি খরচ হচ্ছে অন্তত ৫ লাখ টাকা। এ তো গেল কারখানার খরচ। এর বাইরেও কাঁচামাল আমদানি ও তৈরি পণ্য বন্দরে পৌঁছানোর ব্যয় ও জাহাজের ভাড়াও বেড়েছে।
শিল্পমালিকেরা বলছেন, জ্বালানির দর অস্বাভাবিক হারে বাড়ানোর কারণেই পোশাকের উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে কমপক্ষে ১০ শতাংশ। খরচ বাড়লেও পোশাকের দাম বাড়ানোর কোনো উপায় নেই। কারণ, এখন উৎপাদনে থাকা পোশাকের দর আরও দুই-তিন মাস আগেই ঠিক হয়েছে।
গত মে মাসে অফিশিয়ালি ডলারের দাম ছিল ৮৭ টাকা। এখন তা ৯৫ টাকায় দাঁড়িয়েছে। ফলে রপ্তানির বিপরীতে প্রায় ১০ শতাংশ বেশি লাভ পাচ্ছেন মালিকেরা। কিন্তু তা মালিকদের কাছে থাকছে না।
বিজিএমইএর সহসভাপতি নাসির উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘করোনা থেকে আমরা যখনই ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছি তখনই শুরু হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। তবে, ডলারের দাম বাড়ায় আমরা কিছু টাকা বেশি পাচ্ছিলাম। কিন্তু এখন লাগাতার লোডশেডিং এবং এর সঙ্গে ডিজেলের যে দাম মেটাতে হচ্ছে তাতে বরং লোকসান হচ্ছে। আমার কারখানায় তো আগে ডিজেল বলতে গেলে লাগতই না। এখন কয়েক লাখ টাকার ডিজেল লাগছে। অন্য খাতেও খরচ বেড়েছে।’
নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আশঙ্কার কথা হচ্ছে এখন অর্ডার কমে যাচ্ছে, যুদ্ধের কারণে। ইউরোপ-আমেরিকায়, যেখানে আমরা এক্সপোর্ট করি সেখানে রেকর্ড মূল্যস্ফীতি হচ্ছে। মানুষ তো আগে খাদ্যদ্রব্য কিনবে, তারপরই পোশাক। ফলে সেখানে পোশাকের চাহিদা কমছে, অর্ডারও কমছে।’রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হিসাব বলছে, গত কয়েক মাস ধরেই স্থির নেই পোশাকের রপ্তানি আয়। কোনো মাসে বাড়ছে তো আরেক মাসে কমছে। তবে সর্বশেষ মাসে কমেছে রপ্তানি। জুলাইয়ে ৩৩৬ কোটি ডলারের রপ্তানি আয় হয়েছে, যা জুনে ছিল ৪০৯ কোটি ডলার, মে মাসে ছিল ৩১৬ কোটি ডলার, এপ্রিলে ছিল ৩৯৪ কোটি ডলার।
পোশাকের বড় দুই বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়ছে। জুলাই শেষে ইইউতে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৯ শতাংশ, যা ২৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। আবার যুক্তরাষ্ট্রেও মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ১ শতাংশ, যা ৪১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। রেকর্ড মূল্যস্ফীতির কারণে এসব দেশে পোশাকের চাহিদা কমছেই।
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, জুলাই-আগস্টে অর্ডার কম থাকে। তবে এবার বেশিই কম। অক্টোবর-নভেম্বরের আবার বেশি অর্ডার আসতে পারে। ফলে আগামী মাসগুলোতে রপ্তানি কমতে পারে। তবে এসব নিয়েই এ খাত টিকে আছে। ব্যবসায়ীরা চ্যালেঞ্জ সামলে চলতে শিখে গেছে।