ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত নার্সিং কলেজগুলোর বিএসসি ইন নার্সিং (পোস্ট বেসিক) পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার ঘটনায় নার্সিং কলেজের সাবেক অধ্যক্ষসহ ছয় সদস্যকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। প্রশ্ন ফাঁস চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের অপকর্ম করে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব। অভিযানে ফাঁস করা প্রশ্নপত্রের কপি ও নয়টি মোবাইল উদ্ধার করা হয়।
সোমবার (২২ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল-মঈন এসব তথ্য জানান।
গ্রেফতার অন্যরা হলেন- ফরিদা খাতুন (৫১), মোছা. মনোয়ারা খাতুন (৫২), মোসা. নার্গিস পারভীন (৪৭), মোছা. মো. ইসমাইল হোসেন (৩৮) ও মো. আরিফুল ইসলাম (৩৭)।
খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ২০ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত নার্সিং কলেজের প্রথম বর্ষ ফাইনাল বিএসসি ইন নার্সিং (পোস্ট বেসিক) পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগেই বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আদান-প্রদান করার প্রমাণ পাওয়া যায়। পরে ওই দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি দল পরীক্ষা শুরুর আগে একটি নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থীদের মোবাইলে প্রশ্নপত্রের ছবি ও সাদা কাগজে হাতে লেখা প্রশ্নপত্রের ছবি উদ্ধার করে। র্যাব প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়।
গণমাধ্যম শাখার পরিচালক বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় রোববার রাতে র্যাব সদরদপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১০ অভিযান চালিয়ে রাজধানীর মহাখালী, ধানমন্ডি ও আজিমপুর এলাকা থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের মূলহোতাসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করে।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সর্বমোট ৯৮টি নার্সিং কলেজের মধ্যে বর্তমানে ৩৮টি কলেজে পরীক্ষা চলমান। প্রশ্নপত্রের গোপনীয়তা বজায় রাখতে প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন প্রশ্ন প্রণয়নকারী নিয়োগ দেওয়া হয়। যারা দুই সেট আলাদা প্রশ্নপত্র সরবরাহ করেন। পরবর্তীসময়ে এই প্রশ্নপত্রগুলোকে যাচাই-বাচাই করার জন্য একটি মডারেটর টিম নিয়োগ করা হয়। যাদের কাজ হচ্ছে প্রশ্নপত্রগুলো থেকে পরীক্ষার জন্য এক সেট পরিপূর্ণ প্রশ্নপত্র তৈরি করে সেগুলো সিলগালার মাধ্যমে চিকিৎসা অনুষদের ডিনের কাছে জমা দেওয়া।
‘চিকিৎসা অনুষদের ডিন বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্রের প্রশ্নপত্র সরবরাহের জন্য চার সদস্যদের একটি গোপনীয় টিম নিয়োগ করেন। যারা নির্বাচিত প্রশ্নপত্রটি প্রিন্টিং ও প্যাকিংয়ে নিযুক্ত থেকে পরীক্ষা কেন্দ্রের চাহিদা অনুযায়ী প্রশ্নপত্রগুলো প্রিন্ট করে আলাদা আলাদা প্যাকিং করে তার ওপরে কেন্দ্রের নাম লিখে সিলগালা করে দেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেই প্রশ্নপত্রগুলো বিভিন্ন কেন্দ্রে বিতরণ করেন।’
তিনি বলেন, চক্রের মূলহোতা গ্রেফতার ফরিদা খাতুন। তিনি রাজধানী মহাখালীর একটি নার্সিং কলেজের প্রশিক্ষক। প্রায় ১০ বছর ধরে তিনি এই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রিন্টিং ও প্যাকিংয়ের দায়িত্বে থাকেন। চক্রের অন্য সদস্য গ্রেফতার নার্গিস ও মনোয়ারা বেগম তার অন্যতম সহযোগী। তারা পরস্পর যোগসাজশে বেশ কিছুদিন ধরে শিক্ষকতার আড়ালে ওই প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে আসছেন। গ্রেফতার ফরিদা খাতুন গত ২০ আগস্ট অনুষ্ঠিতব্য বিএসসি ইন নার্সিং (পোস্ট বেসিক) প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষায় চিকিৎসা অনুষদের ডিন থেকে নির্বাচিত চার সদস্যদের গোপনীয় টিমের একজন সদস্য ছিলেন।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, গত ১৩ আগস্ট ফরিদা খাতুনের কাছে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র চান নার্গিস ও মনোয়ারা বেগম। এ সময় ফরিদা খাতুন প্রিন্টিং ও প্যাকিংয়ের সময় সংগ্রহ করে রাখা প্রশ্নপত্র দেন। পরে তাদের এই চক্রের আরেক সদস্য প্রশ্নপত্রটি গ্রেফতার ইসমাইলের মাধ্যমে কোহিনূর বেগমের কাছে প্রদান করে। ইসমাঈল কিছু কপি নিজের কাছে রেখে দিয়ে অর্থের বিনিময়ে তার ঘনিষ্ঠজনদের কাছে সরবরাহ করে। কোহিনূর বেগম ও আরিফ প্রশ্নপত্রটি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কাছে অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরীক্ষার আগেই প্রশ্নপত্র পৌঁছে দেন।
তিনি আরও বলেন, গ্রেফতার ইসমাঈল হোসেন রাজধানীর একটি নার্সিং কলেজের সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসেবে কর্মরত ও গ্রেফতার আরিফ ঢাকার একটি নার্সিং কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। তারা গত ২০ আগস্ট অনুষ্ঠিত বিষয়ে প্রশ্নপত্রটি ফাঁস চক্রের অন্যতম সদস্য কোহিনূর বেগমের কাছ থেকে সংগ্রহ করে বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের কাছে অর্থের বিনিময়ে সরবরাহ করে। গ্রেফতার আরিফ ২০১৭ সালের সিনিয়র স্টাফ নার্স নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করার অপরাধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়ে কারাবরণ করেন।
কমান্ডার মঈন বলেন, আমরা ফাঁস করা প্রশ্নে ১০ থেকে ১২ জন পরীক্ষার্থীর নাম পেয়েছি। তাদের মধ্যে তিন থেকে চারজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধেও অভিযান চলমান।