ফের কৃষক আন্দোলনে উত্তাল ভারতের রাজধানী দিল্লি। ব্যাপক কৃষক বিক্ষোভের মুখে ২০২১ সালে পিছু হটে কৃষি বিল প্রত্যাহার করে কেন্দ্র সরকার। এরপর আলোচনা সাপেক্ষে কৃষক আন্দোলন তুলে নেয় সংযুক্ত কৃষাণ মোর্চা। তবে কৃষকদের দাবি, এরপর প্রায় এক বছর অতিক্রান্ত হলেও সরকারের দেওয়া কোনও প্রতিশ্রুতি রক্ষিত হয়নি। এই অভিযোগে সোমবার দিল্লির যন্তরমন্তরে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেয় সংযুক্ত কৃষাণ মোর্চার নেতৃত্বাধীন দেশের প্রায় ৪২টি কৃষক সংগঠন।
কৃষকদের দাবি, ফসলের ন্যায্যমূল্য এখনো নিশ্চিত করেনি কেন্দ্রীয় সরকার, লখিমপুর খেরি কাণ্ডে প্রধান অভিযুক্ত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অজয় কুমার মিশ্রকেও অপসারণ করা হয়নি, কৃষক আন্দোলনে যে সমস্ত কৃষকরা মারা গিয়েছেন, তাদেরও শহীদ সম্মান দেওয়া হয়নি। কৃষকদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা প্রত্য়াহার, বিদ্যুতের বিল মকওকুফসহ একাধিক দাবি থাকলেও সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা হয়নি।
রোববার থেকেই কৃষকরা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে বিক্ষোভস্থলে পৌঁছতে শুরু করেন কৃষকরা। এই পরিস্থিতিতে দিল্লি-হরিয়ানার টিকরি সীমান্তে, দিল্লি উত্তর প্রদেশের গাজীপুর সীমান্ত, দিল্লি রাজস্থান ভাষা সিংহু সীমান্তে নিরাপত্তা-ব্যবস্থা জোরদার করে দিল্লি পুলিশ। সিমেন্টের ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে গোটা এলাকা।
সড়ক পথের পাশাপাশি নজরদারি বাড়ানো হয় রেল এবং মেট্রোপথে। আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে রোববারই ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়নের মুখপাত্র রাকেশ টিকায়েতকে মধু বিহার থানায় প্রতিরোধমূলক হেফাজতে নেওয়া হয়। পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় রাজেশ টিকায়েত টুইট করে বলেন, ‘দিল্লি পুলিশ কৃষকদের কণ্ঠ দমন করতে পারবে না।’
এদিকে পুলিশের তীব্র প্রতিরোধের মুখেও সোমবার নির্ধারিত সময়ে সকাল ১০টা থেকেই দিল্লির যন্তরমন্তরে মহাপঞ্চায়েত শুরু করে কৃষকরা। যন্তরমন্তরের বিক্ষোভে উপস্থিত রয়েছে প্রায় দশ হাজার কৃষক। যন্তরমন্তরের সামনে ব্যরিকেড বসানো থাকলেও, তা ভেঙে ঢুকে পড়েন কৃষকরা।
দিল্লি পুলিশের বিশেষ কমিশনার দীপেন্দ্র পাঠক বলেন, ‘দিল্লিতে কৃষকদের ডাকে যে মহাপঞ্চায়েতের আয়োজন করা হয়েছে, তাতে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যন্তর মন্তরে যাওয়ার পথে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং ব্যারিকেডও বসানো হয়েছে। এখনও অবধি কোনও ক্ষয়ক্ষতির খবর মেলেনি।’
এদিন যন্তরমন্তরের ভেতরে কৃষকদের সংযুক্ত কৃষাণী মোর্চার পতাকা হাতে সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে দেখা যায়। এর মধ্যেই দিল্লির অভিমুখে যাতে আরও বেশি কৃষকরা না আসতে পারে তার জন্য উত্তর প্রদেশ,পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও রাজস্থান থেকে আগত গাড়িগুলিতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। দিনভর তিন রাজ্য সীমান্তে বহু বিক্ষোভকারী কৃষককে আটক করার খবর মিলেছে কিন্তু ঠিক কতজনকে আটক করা হয়েছে তা এখনো পর্যন্ত জানাতে চায়নি দিল্লি পুলিশ।
কৃষক নেতা শিব কুমার কাক্কা বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণই রাজনৈতিক বিক্ষোভ। সরকার এখনও অবধি আমাদের কোনও দাবি পূরণ করেনি। আমাদের দাবির হলফনামা আমরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছেও জমা দেব।’
প্রসঙ্গত সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার অধীনে ৪০টি সংগঠন রয়েছে। তাদের তরফে অনেক আগে থেকেই কৃষক বিক্ষোভের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ১৮ আগস্ট উত্তরপ্রদেশের লখিমপুর খেরিতে ৭৫ ঘণ্টা অবস্থান বিক্ষোভের ডাক দিয়েছিল সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা। ৩১ জুলাই পঞ্জাবের কৃষকরা ভাল্লা, ভাটিন্ডা, অম্বালা অঞ্চলে রেল অবরোধ করেন।
এরও আগে গেল এপ্রিলে রাকেশ টিকায়েত কেন্দ্রে ধান কেনার নীতির বিরুদ্ধে নয়াদিল্লিতে তেলেঙ্গানার নেতাদের এক বিক্ষোভে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি সেই সময় বলেছিলেন, ‘আরও বিক্ষোভের প্রয়োজন রয়েছে। সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা কৃষকদের জন্য লড়াই করা সব মুখ্যমন্ত্রীকে সমর্থন করবে।’
এদিকে রাজ্য সীমান্তে একাধিক ব্যারিকেড ও দিল্লির কেন্দ্রে যন্ত্ররমন্তরে কৃষকদের অবস্থানের কারণে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছে দিল্লির ট্রাফিক ব্যবস্থা। দিল্লি পুলিশের তরফে নাগরিকদের সুবিধার জন্য আপাতত টলস্টয় মার্দ, সংসদ মার্গ, জনপথ, আউটার সার্কেল কনট প্লেস, অশোক রোড, বাবা খড়ক সিং মার্দ, পণ্ডিত পন্ত মার্গ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়ছে।