নির্বাচনে ভারতের সহযোগিতা চাওয়ার অভিযোগ নাকচ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাকে যে অভিযোগে অভিযুক্ত করা হচ্ছে তার ধারেকাছেও আমি বলিনি। আমি ইলেকশন (নির্বাচন) নিয়ে কোনো কথা বলি নাই। ভারতে (গিয়ে) ইলেকশন নিয়ে কোনো সাহায্যের জন্য বলিনি।
সাংবাদিকরা আরো জানতে চান, ‘আপনি তাহলে কী বলেছেন?’ জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি স্থিতিশীলতার কথা বলেছি। আমি গ্লোবাল কন্টেক্সটে (বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে), সব জায়গায় যে অস্থিতিশীলতা হচ্ছে-স্ট্যাবিলিটির (স্থিতিশীলতার) কথা বলেছি। ’
সাংবাদিকরা তখন জানতে চান, ‘আপনার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দিল, এটা নিয়ে আপনি কী বলবেন?’ এর জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এগুলো তো একেবারে ডাহা মিথ্যা কথা! ’
গত রাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, কিছু গণমাধ্যম পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ওই বক্তব্য উল্লেখ না করে তা বিকৃতভাবে প্রচার করছে। প্রচারের মাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন গত শুক্রবার চট্টগ্রামে জন্মাষ্টমী উদযাপনের এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের আয়োজকরা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর চেয়েছিলেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি সম্প্রতি ভারত সফরের সময় ভারত সরকারের কাছে তার বক্তব্যের কথা তুলে ধরেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ওই সফরে নির্বাচন নিয়ে কোনো কথাই হয়নি। আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিয়ে আলাপ হয়েছে। তিনি গৌহাটিতে গিয়েছিলেন। সেখানে আসামের মুখ্যমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, সন্ত্রাসী তত্পরতা বন্ধ হওয়ায় আসামে স্থিতিশীলতা এসেছে এবং অনেক উন্নয়ন হচ্ছে। সে পরিপ্রেক্ষিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারত সরকারকে বলেছেন, উভয় দেশের মঙ্গলের জন্য, উন্নয়নের জন্য স্থিতিশীলতা খুবই প্রয়োজন। কোনো ধরনের সাম্প্রদায়িক ইস্যুকে অতিরঞ্জিতভাবে প্রচার করে যাতে উভয় দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি না হয় সে বিষয়ে বন্ধুপ্রতিম দেশ হিসেবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের সহায়তা চেয়েছেন।
শেখ হাসিনার সরকারকে টিকিয়ে রাখতে যা যা করা দরকার, তা করতে ভারতকে অনুরোধ করেছি—পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে গণমাধ্যমে এমন বক্তব্য প্রকাশিত হলে রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন মহলে আলোচনা-সমালোচনা হয়। বিরোধী দলগুলো পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের ব্যাখ্যা চেয়ে বিবৃতি দেয়। আওয়ামী লীগ নেতারাও নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হন। এরপর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ওই বক্তব্য সরকার বা দলের নয়। তাঁর ব্যক্তিগত মত।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন চট্টগ্রামে বক্তব্য দেওয়ার পরদিন তাঁর বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, স্থিতিশীলতা রক্ষায় তিনি ভারতের সহযোগিতা চেয়েছেন।এরপর আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আওয়ামী লীগের কেউ নন। তাই দলের বিব্রত হওয়ার কোনো কারণ নেই। এ নিয়ে আলোচনার মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে দুই দিনের মধ্যে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়ে গত রবিবার একজন আইনজীবী আইনি নোটিশ পাঠান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আওয়ামী লীগের কেউ নন—এমন বক্তব্যও আলোচনার জন্ম দেয়। কারণ তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির ১ নম্বর সদস্য।
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ এ বিষয়ে বলেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য কিন্তু দলের কেন্দ্রীয় কমিটির কেউ নন। তথ্যমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমি মনে করি, দায়িত্বপূর্ণ পদে থাকলে দায়িত্বশীলভাবে কথা বলা দরকার। আমি নিজেও কথা বলার সময় খুব সতর্ক থাকি। ’আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, গুরুত্বপূর্ণ আসনে থেকে অনেক সতর্কভাবে কথা বলা উচিত।