ভূতত্ত্ব
ফ্লোরিডা ৬৫০ মিলিয়ন বছর আগে দক্ষিণ মেরুতে গন্ডোয়ানা নামের মহাদেশে অবস্থিত ছিল। যখন গন্ডোয়ানা মহাদেশের লরেন্টিয়া মহাদেশের সাথে সংঘর্ষ হয় তখন এটি আরও উত্তরে চলে গিয়েছিল, এর ফলে ফ্লোরিডা একীভূত মহাদেশের সাথে বিষুবরেখার উত্তরে চলে গিয়েছে। এ সময় ফ্লোরিডা মরুভূমি দ্বারা বেষ্টিত ছিল এবং একটি নতুন মহাদেশ পাঙ্গিয়ার মাঝখানে অবস্থান করছিলো। যখন পাঙ্গিয়া মহাদেশ ভেঙ্গে যায় ফ্লোরিডা তখন উপদ্বীপে পরিনত হয়। প্রায় ২৮ থেকে ৩৪ মিলিয়ন বছর আগে ফ্লোরিডার ভূখন্ড অরেঞ্জ আকার ধারন করে তার ফলে ফ্লোরিডা অরেঞ্জ আইল্যান্ড নামে পরিচিত হয়ে ওঠে।
২.৫৮ মিলিয়ন বছর আগে যখন হিমবাহের ফলে পৃথিবীর জল আটকে ছিলো তখন সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা দ্রæত নেমে গিয়েছিল। তখন জলের উচ্চতা বর্তমান স্তরের থেকে প্রায় ৩৩০ ফুট কম ছিল। ফলে তখন ফ্লোরিডা উপদ্বীপের স্থলভাগ ছিল আজকের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বড়। তখন এখানকার জলবায়ু সাম্প্রতিক সময়ের তুলনায় শুষ্ক এবং শীতল ছিল। বেশ কিছু নদী ও বহু জলাভূমি ছিল এখানে।
ফ্লোরিডার প্রথম আদিবাসী
প্যালিও-ইন্ডিয়ানরা ফ্লোরিডায় প্রবেশ করেছিল অন্তত ১৪০০০ বছর আগে, তখন শেষ হিমবাহের কাল চলছে। বিশুদ্ধ জল শুধুমাত্র সিঙ্কহোল এবং চুনাপাথর সমৃদ্ধ জলাশয়ে জমে থাকা বৃষ্টির জল থেকে পাওয়া যেত, এবং প্যালিও-ইন্ডিয়ানরা অপেক্ষাকৃত দুষ্প্রাপ্য জলের গর্তগুলির চারপাশে কেন্দ্রীভূত ছিল। আধুনিক নদীর তলদেশে সিঙ্কহোল এবং অববাহিকা (যেমন অসিলা নদীর পেজ-ল্যাডসন সাইট) ক্লোভিস পয়েন্ট সহ প্যালিও-ইন্ডিয়ান আর্টিফ্যাক্টের সমৃদ্ধ ভান্ডার পাওয়া গিয়েছিলো।
একটি প্রাচীন পাথর খনির (মেরিয়ন কাউন্টিতে আমেরিকার কনটেইনার কর্পোরেশন সাইট) খননের ফলে “অশোধিত পাথরের সরঞ্জাম” পাওয়া গিয়েছে, ধারণা করা হয় এগুলি প্যালিও-ভারতীয়রা নির্মান করেছেন। থার্মোলুমিনেসেন্স ডেটিং এবং আবহাওয়া বিশ্লেষণ করে অনুমান করা হয় এগুলো ২৬,০০০ থেকে ২৮,০০০ বছর আগে নির্মাণ করা হয়েছে। অবশ্য এ নিয়ে এখনো বিতর্ক রয়েছে, এবং আরো অনুসন্ধানের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ ফান্ড পাওয়া যায়নি।
প্রায় ১০০০০ বছর আগে হিমবাহগুলি গলতে শুরু করলে ফ্লোরিডার জলবায়ু উষ্ণ এবং আর্দ্র হয়ে ওঠে। হিমবাহ গলে যাওয়ার সাথে সাথে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়তে থাকে, এর ফলে ভূমির পরিমান কমে যায়। পুরানো উপকূলরেখা বরাবর অনেক প্রাগৈতিহাসিক আবাসস্থল ধীরে ধীরে নিমজ্জিত হয়, যার ফলে উপকূলীয় সংস্কৃতির আদি নিদর্শন পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। প্যালিও-ভারতীয় সংস্কৃতি প্রারম্ভিক প্রতœতাত্তি¡ক সংস্কৃতি দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছিল বা বিকশিত হয়েছিল। জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং জলের উচ্চতা বৃদ্ধি হওয়ায় তখনকার মানুষরা আরও ভিতরের দিকে অবস্থান নিয়ে বসবাস করতে থাকে। প্রতœতাত্তি¡করা উইন্ডওভার পুকুরে খনন করে প্রাপ্ত নিদর্শন থেকে ফ্লোরিডার প্রারম্ভিক প্রতœতাত্তি¡ক মানুষদের সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছে। প্রারম্ভিক প্রতœতাত্তি¡ক যুগ ৫০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মধ্য প্রতœতাত্তি¡ক যুগে বিবর্তিত হয়। তখনকার মানুষরা জলাভূমির কাছাকাছি গ্রামে এবং উপকূল বরাবর পছন্দের জায়গাগুলিতে বসবাস শুরু করে যা সম্ভবত একাধিক প্রজন্ম ধরে দখল করা হয়েছিল।
শেষ প্রতœতাত্তি¡ক যুগ শুরু হয়েছিল প্রায় ৩০০০ খ্রিস্টপূর্বে, যখন ফ্লোরিডার জলবায়ু বর্তমান অবস্থায় পৌঁছেছিল এবং সমুদ্র তার বর্তমান স্তরের কাছাকাছি পৌঁছেছিল। তখনকার লোকেরা সাধারণত তাজা এবং নোনা জলের জলাভূমি উভয়ই দখল করত। এই সময়ের মধ্যে বড় বড় শেল মিডেন্স জমা হয়। অনেক লোক মাটির ঢিবি নির্মাণ করে বৃহৎ গ্রামে বাস করত, যেমন হরর দ্বীপে, যেটি দক্ষিণ-পূর্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাচীন যুগে স্থায়ীভাবে অধিকৃত সম্প্রদায় থাকতো। এটিতে পূর্বের প্রাচীনতম কবরের ঢিবিও রয়েছে, যা প্রায় ১৪৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের। ২০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে ফ্লোরিডায় লোকেরা আগুনে পোড়া মৃৎপাত্র তৈরি করতে শুরু করে। প্রায় ৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে প্রাচীন সংস্কৃতি ফ্লোরিডা জুড়ে মোটামুটি অভিন্ন ছিল, এর পরেই ধীরে ধীরে আঞ্চলিক সংস্কৃতিতে বিভক্ত হতে শুরু করে।
মিকোসুকি উপজাতি
পূর্ব এবং দক্ষিণ ফ্লোরিডার উত্তর-প্রাচীন সংস্কৃতি আপেক্ষিক বিচ্ছিন্নতায় বিকশিত হয়েছিল। সম্ভবত প্রথম ইউরোপীয় যোগাযোগের সময় এই অঞ্চলে বসবাসকারী লোকেরা প্রতœতাত্তি¡ক এবং উডল্যান্ড যুগের শেষভাগে এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের সরাসরি বংশধর ছিল। ফ্লোরিডা প্যানহ্যান্ডেল এবং ফ্লোরিডা উপদ্বীপের উত্তর ও মধ্য উপসাগরীয় উপকূলের সংস্কৃতিগুলি মিসিসিপিয়ান সংস্কৃতি দ্বারা দৃঢ়ভাবে প্রভাবিত হয়েছিল, পেনসাকোলা সংস্কৃতি এবং ফোর্ট ওয়ালটন সংস্কৃতি নামে পরিচিত দুটি স্থানীয় রূপ তৈরি করেছিল।
সাংস্কৃতিক ইতিহাসের ধারাবাহিকতা ইঙ্গিত করে যে সেই অঞ্চলের লোকেরাও প্রাচীন যুগের অধিবাসীদের বংশধর। প্যানহ্যান্ডেল এবং উপদ্বীপের উত্তর অংশে লোকেরা ভুট্টার চাষ শুরু করেছি। টিমুকুয়ান-ভাষী লোকদের দক্ষিণে বসবাসকারী উপজাতিদের মধ্যে এর চাষ সীমাবদ্ধ ছিল (অর্থাৎ, বর্তমান ডেটোনা বিচ, ফ্লোরিডা থেকে টাম্পা উপসাগরের উত্তরে একটি লাইনের দক্ষিণে) জনগণ দক্ষিণ ফ্লোরিডা সমৃদ্ধ মোহনা পরিবেশের উপর নির্ভর করে এবং কৃষি ছাড়াই একটি অত্যন্ত জটিল সমাজ গড়ে তুলেছিল।
ইউরোপীয় যোগাযোগ এবং পরবর্তী সময়
১৬ শতকের গোড়ার দিকে প্রথম ইউরোপীয় যোগাযোগের সময় ফ্লোরিডায় আনুমানিক ৩৫০,০০০ জন উপজাতির বসবাস ছিল। (নৃতত্ত¡বিদ হেনরি এফ. ডবিন্স অনুমান করেছেন যে ১৪৯২ সালে ফ্লোরিডায় ৭০০০০০ জন লোক বাস করত। প্রায় ৫০০০০ জনসংখ্যা সহ কোন পরিচিত রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নেই এমন গ্রামে বাস করতো। টিমুকুয়া ভাষার উপভাষার আনুমানিক ১৫০০০০ জন মানুষ ছিলো, কিন্তু টিমুকুয়া গ্রামগুলির দল হিসাবে সংগঠিত ছিল এবং একটি নিজস্ব সংস্কৃতি গড়ে তোলে।
প্রথম যোগাযোগের সময় ফ্লোরিডার অন্যান্য উপজাতির মধ্যে আইস, ক্যালুসা, জায়গো, মায়াইমি, টেকুয়স্টো এবং টোকোবাগা অন্তর্ভুক্ত ছিল। আলভারো মেক্সিয়ার মতো প্রাথমিক অনুসন্ধানকারীরা তাদের সম্পর্কে লিখেছেন; অন্যান্য তথ্য প্রতœতাত্তি¡ক গবেষণার মাধ্যমে জানা গেছে। ফ্লোরিডায় স্প্যানিশ নিয়ন্ত্রণের সময়কালে এই সমস্ত উপজাতির জনসংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছিল, বেশিরভাগই নতুন প্রবর্তিত সংক্রামক রোগের মহামারীর কারণে যেখানে নেটিভ আমেরিকানদের কোন প্রাকৃতিক প্রতিষেধক ছিল না। মূল স্থানীয়দের হ্রাসকৃত জনসংখ্যা ১৭০০ থেকে শুরু করে সেমিনোলসের মতো বাইরের গোষ্ঠীগুলিকে এই অঞ্চলে চলে যেতে দেয়।
১৮শ শতাব্দীর শুরুতে আদিবাসীদের জনসংখ্যা অনেক কমে গিয়েছিল, তখন ফ্লোরিডার উত্তর অঞ্চল থেকে উপজাতিরা অস্ত্র সরবরাহ করেছিল এবং মাঝে মাঝে ক্যারোলিনা প্রদেশের শ্বেতাঙ্গ উপনিবেশবাদীদের সাথে ফ্লোরিডা জুড়ে অভিযান চালানো হয়েছিল। তারা গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়ে অনেক বাসিন্দাকে আহত করে এবং বন্দীদের চার্লস টাউনে দাস হিসাবে বিক্রি করার জন্য নিয়ে যায়। ফ্লোরিডার অধিকাংশ গ্রাম পরিত্যক্ত ছিল এবং বেঁচে থাকা ব্যক্তিরা সেন্ট অগাস্টিনে বা রাজ্যের চারপাশে বিচ্ছিন্ন জায়গায় আশ্রয় চেয়েছিল। এই সময়কালে এবং ১৮ শতকের শেষের দিকে অনেক উপজাতি বিলুপ্ত হয়ে যায়।
কিছু অ্যাপালাচি শেষ পর্যন্ত লুইসিয়ানা পৌঁছে সেখানে তারা একটি স্বতন্ত্র গোষ্ঠী হিসাবে কমপক্ষে আরও এক শতাব্দী ধরে বেঁচে ছিল। ১৭৬৩ সালে স্পেনীয়রা ফ্লোরিডা উপজাতির কিছু জীবিত সদস্যকে কিউবায় সরিয়ে নিয়ে যায় যখন স্পেন সাত বছরের যুদ্ধে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে বিজয়ের পর ফ্লোরিডার ভূখন্ড ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের কাছে হস্তান্তর করে। পরবর্তীকালে সেমিনোল ক্রিক জাতীর একটি শাখা অন্যান্য গোষ্ঠীকে নিজেদের সাথে একিভ‚ত করে নিয়েছিল, ১৮ শতকে এথনোজেনেসিস প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ফ্লোরিডায় একটি স্বতন্ত্র উপজাতি হিসাবে বিকশিত হয়েছিল। তাদের তিনটি ফেডারেলভাবে স্বীকৃত উপজাতি রয়েছে: বৃহত্তম ওকলাহোমার সেমিনোল নেশন, ১৮৩০-এর দশকে অপসারণের পর থেকে বংশধরদের দ্বারা গঠিত অন্যরা হল ফ্লোরিডার ছোট সেমিনোল উপজাতি এবং ফ্লোরিডার ভারতীয়দের।
চলবে….