এক সময় ছিলেন বিশ্বসেরা বক্সার। সেই তিনি এখন গাঁজা চাষী। বলছি মাইক টাইসনের কথা। গাঁজার বানিজ্যিক চাষ করে মাসে আয় তার প্রায় এক কোটি টাকা। আর নিজে সেবনে পেছনেই ব্যয় করে আটত্রিশ লাখ টাকা। একসময় যে মাদকে ভাগ্য ফিরেছিল সেই গাঁজার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বক্সিং কিংবদন্তী। এখন চলতে হচ্ছে হুইল চেয়ারে করে।
১৯৮৬ সালের নভেম্বর। দ্বিতীয় রাউন্ডেই ট্রেভর বার্ডিককে হারিয়ে দিলেন মাত্র ২০ বছর ৪ মাস বয়সী এক তরুণ। ইতিহাসের পাতায় নাম উঠলো মাইক টাইসনের। বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ বক্সার হিসেবে হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন হলেন টাইসন।
তার পরের গল্পটা কে না জানে। জেমস স্মিথ, টনি টাকার, মাইকেল স্প্রিংসদের হারিয়ে এক বছরে প্রথম বক্সার হিসেবে তিন টাইটেল ডাব্লিউ বিএ, ডাব্লিউ বিসি, আইবিএফ নিজের করে নিলেন। বক্সিং বাউটে তাকে হারানোর সাধ্য ছিল কার। ৫৮ ম্যাচে ৫০ জয়, মাত্র ৪ হারে সফলতার স্বর্ণশিখরে ছিলেন ক্যারিয়ারের পুরোটা জুড়ে। প্রতিটি ম্যাচে যার আয় ছিল ৩০ মিলিয়ন ডলার। ৯০ দশকে ৪০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি আয় করেছিলেন আয়রন মাইক। টাকায় যার মূল্য ৪ হাজার কোটিরও বেশি। তাই জশ, খ্যাতি বিশ্বের ধনী অ্যাথলিটের তালিকায়ও ছিলেন শীর্ষে।
শুধু বাউটেই নয়, আলোচিত ছিলেন বাউটের বাইরেও। কিট ডাইনামাইটের বিলাশ বহুল জীবন ছিল তৎকালীন সময়ের টক অব দ্য টাউন। জমকালো আয়োজনে নিজের ৩০তম জন্মদিন পালন করেন টাইসন। ব্যয় হয় ৫ লাখ ৮০ হাজার ডলার। যুক্তরাষ্ট্রের ৭০০ নামীদামি ব্যক্তিত্বকে আমন্ত্রণ জানিয়ে রীতিমতো সাড়া ফেলে দেন। সে তালিকায় ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্পও।
গাড়ির প্রতি আকর্ষণ ছিল টাইসনের। বেন্টলি কন্টিনেন্টাল, ল্যাম্বরগিনি, হ্যারিলাক্স, হেমারের মতো ব্যয়বহুল গাড়ি কিনতে গুনতে হয় প্রায় ৬৩ লাখ ডলার। একাধিক সাদা রংয়ের রয়েল বেঙ্গল টাইগারও পুষতেন তিনি। ছিল হরেক রকমের কবুতরের প্রতি ঝোঁক।
কিন্তু হঠাৎই ছন্দপতন। বে-হিসাবি উন্মত্ত জীবন কঠিন বাস্তবতায় ফেলে দেয় টাইসনকে। ২০০৩ সালে দেউলিয়া হয়ে পড়েন এই বক্সিং কিংবদন্তী। ছন্নছাড়া জীবনে নানা রকমের স্ক্যান্ডলও ছিল বেডেস্ট পারসন অব দ্য প্ল্যানেট খ্যাত মাইক টাইসনের। মারধরে জড়িয়েছে, ধর্ষণের মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জেলও খেটেছেন।
একটা সময় বিভিন্ন বক্সিং টুর্নামেন্টে অতিথি হিসেবে যেতেন। সিনেমায় নাম লিখিয়ে সুনাম অর্জন করেছেন। তবে অন্ধকার থেকেই নিজের পথটা বেছে নেন বিশ্বের অন্যতম সেরা বক্সার। ক্যালিফোর্নিয়ায় ৪২০ একর জমিতে শুরু করেন গাঁজার চাষ। ফের ভাগ্য ঘুরতে সময় লাগেনি। প্রতিমাসে সেখান থেকে আয় করেন ৯ লাখ ডলারেরও বেশি। কিন্তু অভ্যাস ফেরেনি টাইসনের, মাদকাসক্তিও পিছু ছাড়েনি। তাই তো মাসে ৩৮ লাখ টাকা ব্যয় করেন গাঁজা সেবনে। যদিও অন্য কোনও মাদকের অভ্যাস নেই কিংবদন্তীর।
যে মাদকে বদলে গেছে ভাগ্য সে গাঁজাই কাল হয়েছে টাইসনের জন্য। অতিরিক্ত নেশায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ৫৬ বছর বয়সী এই বক্সিং গ্রেট। তাইতো কিছুদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের মায়ামি বিমানবন্দরে হুইল চেয়ারে দেখা গেছে তাকে। হাতে লাঠিও ছিল। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম ডেইলি স্টার বলছে, টাইসনের অসুস্থতার নেপথ্যে অতিরিক্ত গাঁজা সেবন। মাস খানেক আগে নিউইয়র্কেও লাঠি হাতে চলতে দেখা গেছে তাকে। যদিও বেশ কিছুদিন ধরে মেরুদণ্ডের ব্যথায় ভুগছেন টাইসন।