গানের লাইন দুটি যেন এখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডেরই প্রতিচ্ছবি। যে সম্পর্কটা ছিলো গোধূলি আর বৈদ্যুতিক বাতির মতো, সেখানে যেন আজ শুধুই আঁধার। যার এক কথার রূপ হতে পারে ‘বন্ধু যখন শত্রু!’ বন্ধু যখন শত্রু হয়, তখন তা সাপ থেকেও বিষাক্ত। বিসিবি-রাসেল ডমিঙ্গো বিতর্ক যেন তারই চরিত্র।
অথচ ক্রিকেটার, ক্রিকেটবোদ্ধা আর সমর্থকদের ইচ্ছের বাইরে গিয়ে কোনো এক অজানা কারণে, ‘কোচ পাওয়া যাবে না’- এই শিশুসুলভ অজুহাতে আরো দুই বছর চুক্তি বাড়িয়ে দেয় বোর্ড। যার একবছর আবার শর্ত সাপেক্ষে চুক্তি। ছেড়ে যেতে পারবে না কেউ কাউকে৷ নতুন এই চুক্তিতে বেতনও বাড়িয়ে দেয়া হয় রাসেল ডমিঙ্গোর।
রাসেল ডমিঙ্গো বাংলাদেশে এসেছিলেন এইচপির কোচ হতে। কিন্তু বিসিবি ‘দামে কম মানে ভালোর’ সুযোগে কাঁধে উঠিয়ে দেয় জাতীয় দলের গুরুদায়িত্ব। কথায় আছে না, বাঙালি মাগনা পাইলে আলকাতরাও খায়! এমনটাই যেন হয়েছে তার বেলায়। তবে সাফল্য যে আসেনি তা নয়, সফলতার থলে একেবারে খালি নয়। কিন্তু ওই সফলতার স্রোতে ভেসে গেছে কত শত ব্যর্থতা, যার নেই কোনো জবাবদিহিতা।
বন্ধুত্ব যখন এমনি অন্তঃরঙ্গ, তখনই শোনা যায়, এক ক্রিকেটার নাকি মুখের ওপর কথা বলেছে৷ যার অভিযোগ বিসিবিতে দিলে, ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বোর্ড থেকে। এর আগে পরিকল্পনার অংশ হতে খালেদ মাহমুদ সুজন দায়িত্ব নেন টিম ডিরেক্টর হিসেবে৷ ওই শুরু, মাঝে ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবালের সাথে সম্পর্কের অবনতি শোনা গেলেও তা মিটে যায়। তবে একের পর এক ব্যর্থতায় যখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়, তখন বিসিবি কর্তারাও মেতে উঠেন সমালোচনায়। গত জিম্বাবুয়ে সিরিজে অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান আর টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজনের খোলামেলা সমালোচনা যেন সেই অঙ্গার আরো জ্বলায়।
পালাবদলের হাওয়ায় ভাসতে, কিংবা শুভ বুদ্ধির উভয় হওয়াতে নতুন স্পেশালিষ্ট কোচ আনে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে। ডমিঙ্গোর তা ভালো লাগেনি নিঃসন্দেহে। বিসিবি বসের করা সংবাদ সম্মেলনে ডমিঙ্গোর তাচ্ছিল্য মাখা হাসিমুখ নজর কাড়েনি ক্রিকেটপ্রেমীদের। যার বিস্ফোরণ ঘটে এক দিন পরে৷ স্থানীয় এক দৈনিককে দেয়া খোলামেলা সাক্ষাৎকারে ডমিঙ্গো আঙ্গুল তোলেন বোর্ড কর্তাদের দিকে।
ক্রিকেটার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ প্রসংগে রাসেল ডমিঙ্গো বলেন, ‘বোর্ড তাদের কথা শোনায়, ডিরেক্টর অব ক্রিকেট কথা শোনায়, সবাই শোনায়। যদি ক্রিকেটারদের প্রতি পদে পদে বলে দেয়া হয় কীভাবে কী করতে হবে, তাহলে ওরা শিখবে কিভাবে?’
তিনি আরো যোগ করেন, ‘ক্রিকেটাররা ভুল করবে, তাদের সেটা থেকে শিখতে হবে। সে জন্য নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নিতে দিতে হবে। কিন্তু তারা সেটা করতে পারে না। কারণ, তাদের সারাক্ষণ পরামর্শের ওপর রাখা হয়, ধমক দেয়া হয়। এটা যে একদিক থেকে আসে, তা নয়। চারদিক থেকেই আসে। যে কারণে নিজেদের ক্রিকেটীয় জ্ঞান বাড়ে না।’
অভিযোগ করে বলেন, বোর্ড থেকে নাকি প্রধান কোচকে বলা হতো ক্রিকেটারদের চাপের ওপর রাখতে৷ রাসেল ডমিঙ্গোর ভাষ্যে, ‘আমাকে সব সময় বলা হতো, ওদের সারাক্ষণ ধমকাতে হবে। কঠোর হতে হবে। এভাবেই নাকি ক্রিকেটারদের সাথে সবসময় আচরণ করা উচিত।’
অপরদিকে প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর এমন খোলামেলা সাক্ষাৎকারে বেজায় চটে আছে ক্রিকেট বোর্ড। সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে সব অভিযোগ। কোড অফ কন্ডাক্ট ভাঙার অভিযোগ টেনে মিডিয়াকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস জানান, চিঠি যাবে রাসেল ডমিঙ্গোর কাছে, চাওয়া হবে জবাবদিহিতা। এখন দেখার বিষয় এই ঘোলা পানি কতদূর গড়ায়…