তুরস্কের ইস্তাম্বুলে শহরে আজ অনুষ্ঠিত হবে এবারের মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপ পর্বের ড্র। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদসহ ইউরোপের অন্য এলিট ক্লাবগুলো অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে নিজেদের অবস্থান নিশ্চিতের।
সবকিছু পরিকল্পনামাফিক শেষ হলে ইস্তাম্বুলের আতার্তুক অলিম্পিক স্টেডিয়ামেই আগামী বছর ১০ জুন চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে। এই একই ভেন্যুতে ২০০৫ সালের ফাইনালে এসি মিলানকে পেনাল্টিতে পরাজিত করে শিরোপা জয় করেছিল লিভারপুল। ২০২০-২১ সালের ফাইনালও ইস্তাম্বুলেই অনুষ্ঠিত হবার কথা ছিল। কিন্তু করোনা বিধিনিষেধের কারণে উভয় আসরের ফাইনালই পর্তুগালে সড়িয়ে নিতে বাধ্য হয় ইউরোপিয়ান ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা উয়েফা। গত মৌসুমে শেষ মুহূর্তে আরো একটি পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছিল উয়েফা। ইউক্রেনে রাশিয়ান সামরিক আগ্রাসনের কারণে সেইন্ট পিটার্সবার্গের পরিবর্তে রিয়াল মাদ্রিদ বনাম লিভারপুলের মধ্যকার ফাইনালটি প্যারিসে অনুষ্ঠিত হয়। ফাইনালে রিয়াল ১-০ গোলে জয়ী হয়ে শিরোপা লাভ করে।
স্প্যানিশ জায়ান্ট ক্লাবটি এ নিয়ে সর্বোচ্চ ১৪ বার ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের সর্বোচ্চ আসরের শিরোপা জয়ের কৃতিত্ব দেখিয়েছে। এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছে এসি মিলান। ইতালিয়ান ক্লাবটির তুলনায় রিয়ালের শিরোপা জয় দ্বিগুন। ইতোমধ্যেই ইউরোপা লিগে ফ্রাংকফুর্টকে পরাজিত করে উয়েফা সুপার কাপ জয়ের মাধ্যমে মৌসুমের প্রথম শিরোপা ঘরে তুলেছে রিয়াল মাদ্রিদ।
এবারের আসরে রিয়ালের শিরোপা জয়ের সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে উয়েফা.ডট কমকে সাম্প্রতিক এক সাক্ষাতকারে রিয়ালের কোচ কার্লো আনচেলত্তি বলেছেন, ‘এই ধরনের শিরোপা জয়ের পর যে ধরনে আনন্দ ও স্বস্তি চারিদিকে থাকে তা নতুন আসর শুরুর পরেও থেকে যায়। তখন এমন একটি অনুভুতি হয় যে কেউ আমার কাছ থেকে এই শিরোপা ছিনিয়ে নিতে পারবেনা। আর এটাই শিরোপা জয়ের মিশনে শক্তিশালী লক্ষ্য হিসেবে কাজ করে।’
রিয়ালের এই জয় আজ আরো একবার স্বীকৃতি পেতে পারে। দলের গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়া ও তারকা ফরওয়ার্ড করিম বেনজেমা উয়েফার বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের সংক্ষিপ্ত তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন। এ দুজনের সাথে তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে রয়েছেন গত মৌসুমের বিজয়ী ম্যানচেস্টার সিটির কেভিন ডি ব্রুইনা। আজ চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ড্র অনুষ্ঠানে বর্ষসেরা পুরুষ ও নারী খেলোয়াড় এবং কোচের নাম ঘোষণা করা হবে। কোচিং ক্যাটাগরিতে রিয়ালের আনচেলত্তির সাথে আরো আছেন সিটির পেপ গার্দিওলা ও লিভারপুলে ইয়ুর্গেন ক্লপ।
ড্র অনুযায়ী পট-১-এ আছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদ। তাদের সাথে আরো রয়েছে ইউরোপিয়ান শীর্ষ লিগের চ্যাম্পিয়ন সিটি, বায়ার্ন মিউনিখ, এসি মিলান, পিএসজি, পোর্তো, আয়াক্স ও ইউরোপা লিগ বিজয়ী ফ্রাংকফুর্ট।
পট-২-এ আছে লিভারপুল। এর অর্থ হচ্ছে আবারও তাদের সাথে সম্ভাব্য ফাইনালিস্ট হিসেবে রিয়ালের দেখা হতে পারে। ২০২১ সালের বিজয়ী চেলসির সাথে এই পটে ইংলিশ প্রতিনিধি হিসেবে আরো রয়েছে টটেনহাম হটস্পার।
২০১৭ সালের পর প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ফিরে আসা সেলটিক রয়েছে পট-৪’এ।
চলমান সামরিক আগ্রাসনের কারণে রাশিয়ান ক্লাবগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু চলতি সপ্তাহ থেকে নতুন ঘরোয়া মৌসুম শুরু করা ইউক্রেনের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে ড্রতে অংশ নিচ্ছে শাখতার দোনেস্ক। প্লে-অফে বেনফিকার বিপক্ষে মুখোমুখি হয়েছিল ডায়নামো কিয়েভ। কিন্তু দুই লেগ মিলিয়ে ৫-০ ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে তার দুইবারের চ্যাম্পিয়নের বেনফিকার কাছে বাদ পড়েছে।
আগামী ৬ সেপ্টেম্বর থেকে এবারের আসর শুরু হচ্ছে। তবে নভেম্বর-ডিসেম্বওের বিশ্বকাপের কারণে উয়েফাকে বেশ কিছু ম্যাচের সূচি নতুন করে সাজাতে হয়েছে। সেপ্টেম্বরে আবার আন্তর্জাতিক বিরতিও রয়েছে। সব মিলিয়ে কিছুটা হলেও সমস্যায় পড়তে পারে চ্যাম্পিয়নস লিগে অংশ নেয়া ক্লাবগুলো।
এবারের মৌসুমে প্রাইজ মানিও বাড়ানো হয়েছে। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে ফাইনালে বিজয়ী দলটি সব মিলিয়ে প্রায় ৯০ মিলিয়ন ইউরো আয় করবে। এর সাথে প্রতিটি দেশের টেলিভিশন স্বত্ব জড়িত আছে। জুলাইয়ে উয়েফা এক সার্কুলারের মাধ্যমে প্রতিটি সদস্য দেশকে এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়ে দিয়েছে