১০ মাসের ব্যবধানে কত পরিবর্তন! বিশ্বকাপ তথা যে কোনো বড় আসরে পাকিস্তানের বিপক্ষে ভারতের জয়টা যেখানে রীতিতে পরিণত হয়েছিল, সেখানে এবার কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস। গত অক্টোবরে টি২০ বিশ্বকাপে এই দুবাইয়েই বাবর-রিজওয়ানরা পরাজয়ের বৃত্ত ভাঙার পরই যেন পুনর্জন্ম হয়েছে পাকিস্তানের ক্রিকেটের। বাবরের নেতৃত্বে অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে একতাবদ্ধ পাকিস্তান দল। সে কারণে এবারের এশিয়া কাপে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে একটা বাড়তি আত্মবিশ্বাস কাজ করছে পাকিস্তান শিবিরে। এই বিশ্বাসের ভিত গুঁড়িয়ে দিয়ে রোহিত শর্মার ভারত কি পারবে পুরোনো আধিপত্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে! নাকি ১০ মাস আগে শুরু হওয়া বাবরদের দাপটই অব্যাহত থাকবে! নানা মোড়কে সজ্জিত দুই প্রতিবেশীর শ্রেষ্ঠত্বের এই লড়াইয়ের দিকে তাকিয়ে পুরো ক্রিকেট বিশ্ব। উপমহাদেশীয়দের কথা তো বলাই বাহুল্য। আজ রাত ৮টার জন্য যেন তর সইছে না তাদের!
উপমহাদেশের এই দুই প্রতিবেশীর মধ্যে প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রবল বৈরিতা। ভূরাজনৈতিক সংঘাতের কারণে গত এক দশক দ্বিপক্ষীয় সিরিজ হয়নি তাদের মাঝে। অথচ তাদের ক্রিকেটে তাদের লড়াই উপভোগের জন্য তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষা করেন পুরো বিশ্বের ক্রিকেটপ্রেমীরা।
আইসিসি টুর্নামেন্ট ও মহাদেশীয় টুর্নামেন্টেই কেবল ক্রিকেট-পিসাসুদের এ তৃষ্ণা মেটে। নিয়মিত মুখোমুখি না হওয়ার কারণেই হয়তো সর্বশেষ লড়াইয়ের সময় শাহিন আফ্রিদির সুইং-ইয়র্কার ঠিকঠাক বুঝে উঠতে পারেনি ভারতের তারকা ব্যাটিং লাইনআপ। এবার অবশ্য চোটের কারণে শাহিন আফ্রিদি নেই। গত পরশু ছিটকে গেছেন আরেক কার্যকর পেসার মোহাম্মদ ওয়াসিম। পাকিস্তান দলে অবশ্য পেসারের অভাব নেই। হারিস রউফ, নাসিম শাহ, মোহাম্মদ হাসনাইন- এই তিন গতি তারকার সঙ্গে যোগ দিয়েছেন সুইং মাস্টার হাসান আলি। তাই এবারও ভারতীয় ব্যাটারদের ভালোই পরীক্ষা দিতে হবে।
নতুন ব্যাটিং দর্শনে বিশ্বাসী ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মার এটি বড় মঞ্চে প্রথম পরীক্ষা। নিজেকে হারিয়ে খোঁজা মাস্টার ব্যাটার বিরাট কোহলির জন্যও এই এশিয়া কাপ রানে ফেরার মোক্ষম মঞ্চ। বলা যায়, ভারতের ক্রিকেটের দুই স্তম্ভের কাছে এবারের এশিয়া কাপ হলো বিশ্বকে নতুন বার্তা দেওয়ার মিশন। তাদের কাছে আজকের ম্যাচটা প্রতিশোধেরও। গত এক দশক ধরে বিশ্ব ক্রিকেটকে শাসন করা এ দুই ভারতীয়কে ১০ মাস আগে এই দুবাই স্টেডিয়ামেই একরাশ লজ্জা উপহার দিয়েছিল। সে লজ্জা ফিরিয়ে দেওয়ার পালা তাঁদের। দু’জন ব্যর্থ হলেও লোকেশ রাহুল, সূর্যকুমার, ঋষভ পান্থ, হার্দিক পাণ্ডিয়ার মতো টি২০ স্পেশালিস্ট আছেন ভারতীয় দলে। এ ব্যাটিং গভীরতার জন্যই এগিয়ে থাকবে ভারত।
পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনও বেশ শক্তিশালী। গত বছর দেড়েক ধরে তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর পেছনে অন্যতম অবদান বাবর-রিজওয়ানদের নিয়ে গড়া ব্যাটিং। তবে পাকিস্তানের দুর্বলতাও কিন্তু এই ব্যাটিংই। গত এক বছরে তাদের দলের অধিকাংশ রানই এসেছে টপ অর্ডারের তিনজনের ব্যাট থেকে। বাবর, রিজওয়ান ও ফখর ব্যর্থ হলেই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে ব্যাটিং। মোদ্দাকথা, পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ের গভীরতা কম। আসিফ আলি, খুশদিল শাহ, ইফতেখার আহমেদরা এখনও সেভাবে নিজেদের মেলে ধরতে পারেননি। তাঁদের পরীক্ষাটা দিতে হবে মূলত ভারতীয় স্পিনারদের বিপক্ষে। যুজবেন্দ্র চাহাল, রবীন্দ্র জাদেজা ও রবিচন্দ্র অশ্বিনের মতো অভিজ্ঞ স্পিনারদের দুবাইয়ের স্পিন উইকেটে মোকাবিলা বেশ কঠিন হওয়ার কথা। তবে ভারতেরও দুই সেরা পেসার নেই। জাসপ্রিত বুমরাহর সঙ্গে ছিটকে গেছেন হার্শাল প্যাটেলও। তাই ভুবনেশ্বর কুমার ও হার্দিক পাণ্ডিয়ার ওপরই থাকবে ভারতের পেস আক্রমণের দায়িত্ব।
সর্বশেষ লড়াইয়ে পাকিস্তান ১০ উইকেটে জিতলেও ইতিহাস কিন্তু ভারতের পক্ষে। টি২০তে এখনও পর্যন্ত এ দুই দল ৯ বার মুখোমুখি হয়েছে। যেখানে ভারত জিতেছে ছয়টি ও পাকিস্তান জয় পেয়েছে দুই ম্যাচে। একটি ম্যাচ টাই হয়েছে, সেই ম্যাচে আবার বোল-আউটে জয় পেয়েছিল ভারত।