এশিয়া কাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচ পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় দিয়ে শুরু করলো ভারত। দুবাইয়ের এই স্টেডিয়ামেই ঠিক ১০ মাস আগে পাকিস্তানের কাছে হেরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু করেছিল ভারত। তাই রোহিত শর্মাদের জন্য ম্যাচটা ফিরে আসাও বটে। ম্যাচের অনেকটা সময় জুড়ে মনে হচ্ছিল পাকিস্তান জিতবে। তবে কোন কোন পয়েন্টে পাকিস্তান ভারতের কাছে পরাস্ত হলো?
শেষ ওভারে বাঁহাতি স্পিনার মোহাম্মদ নওয়াজ ভারতের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট নিয়েছেন ঠিক। কিন্তু শেষ ওভারে একজন বাঁহাতি বোলারকে রাখার সিদ্ধান্ত খুব একটা বিচক্ষণ মনে হয়নি শেষ পর্যন্ত।
বিশেষত যখন রবিন্দ্র জাদেজা উইকেটে ছিলেন, যদিও জাদেজাকে প্রথম বলেই বোল্ড করেন নওয়াজ। কিন্তু নিজের তৃতীয় ওভার শেষ করা পর্যন্ত নওয়াজ ছিলেন পাকিস্তানের সবচেয়ে খরুচে বোলার।
হার্দিক পান্ডিয়াও ম্যাচ শেষে বলেন, ‘আমাদের শেষ ওভারে সাত রান প্রয়োজন ছিল, আমরা ১৫ দরকার হলেও নিয়ে নিতে পারতাম হয়তো।’
ভারতের এই অলরাউন্ডার নওয়াজের ওভারের তৃতীয় বল ডট দিয়েও ছিলেন নির্লিপ্ত, চোখের ঈশারায় অপরপ্রান্তে থাকা দিনেশ কার্তিককে বলেন, ‘চিন্তার কিছু নেই।’
পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের মনে হয়েছে আনফিট মোহাম্মদ রিজওয়ান, নাসিম শাহ, হারিস রওফ- তিনজন ক্রিকেটারই মাঠে খুঁড়িয়েছেন। তাদের পেশিতে টান লেগেছে খেলার মধ্যে।
ইএসপিএন ক্রিকইনফোর মন্তব্যে এডুইন নামের একজন লিখেছেন, ভারতের সাথে পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের বড় পার্থক্য হয়ে দাঁড়িয়েছে ফিটনেস, ভারতের কোনো বোলারেরই সমস্যা হয়নি।
রিজওয়ান কিপিংয়ের শুরু থেকেই ভুগেছেন, দুই কিংবা একবার তার হাত থেকে বল ছুটেছেও, তাতে অন্তত চার পাঁচ রান বাড়তি পেয়েছে ভারত, এই রানগুলো শেষ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
ভারতের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান শচিন টেন্ডুলকার টুইটে লিখেছেন, ‘চাপের মুহূর্তে পেসারদের ফিটনেস শেষ পর্যন্ত মূখ্য হয়ে উঠেছে।’
পাকিস্তান অতিরিক্ত রান দিয়েছে অনেক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে একটা অতিরিক্ত বল মানে অনেক তফাৎ, সেখানে ভারতের চারটি ওয়াইড বলের বিপরীতে পাকিস্তানের বোলাররা মোট নয়টি ওয়াইড বল করেছেন।
সেটাও ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে। ১৮তম ওভার নাসিম শাহ শুরুই করেন ওয়াইড বল দিয়ে, যিনি দুর্দান্ত একটি অভিষেক ম্যাচ কাটিয়েছেন। ১৭তম ওভারে হারিস রওফ দুটি ওয়াইড বল করেন।
এই ওভারে ভালো বল করলেও দুটি ওয়াইড বলে ভারতের ব্যাটসম্যানের ওপর থেকে চাপ নেমে যায়।
শাহনাওয়াজ দাহানিও ১৪তম ওভারে এবং ১৬তম ওভারে ওয়াইড বল করেন একটি করে।
ওভার রেট নিয়ে আইসিসি’র নতুন নিয়ম ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার ম্যাচে দুই দলই শেষ তিন ওভার ৩০ গজ বৃত্তের ভেতর একজন বেশি ফিল্ডার নিয়ে মাঠে ছিল।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ইনিংসের শেষ ওভার শুরু করার একটা সুনির্দিষ্ট সময় থাকে, যাকে কাট অফ টাইম বলা হয়, সেই সময় পার হয়ে যাওয়ার পর থেকে ৩০ গজের বাইরে একজন ফিল্ডার কম নিয়ে খেলতে হবে।
এই নিয়ম ফিল্ডিং টিমের মনোজগতে বড় প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন ক্রিকেট সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রনি, তার মতে, ‘ইন-ম্যাচ পেনাল্টির এই নিয়ম সামনেও অনেক ম্যাচের ফলাফলে বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে হচ্ছে। দলগুলোকে টাইম ম্যানেজমেন্টের জন্য একজন লোক তৈরি রাখতে হবে, যিনি সময়ের ব্যাপার বারবার মনে করিয়ে দেবেন।’
পাকিস্তানের বিপক্ষে ভারতও কাল শেষ তিন ওভার বৃত্তের ভেতর একজন ফিল্ডার বেশি নিয়ে খেলতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু ক্রিজে সেটা কাজে লাগানোর মতো ব্যাটসম্যান ছিল না পাকিস্তানের। তবে ভারত শেষ তিন ওভারে এটা কাজে লাগিয়েছে দারুণভাবে।
বিশেষত হারিস রওফের শেষ ওভারে তিনটি বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন হার্দিক পান্ডিয়া, সেখানেই এগিয়ে গেছে ভারত, শেষ ওভারে তাদের দরকার ছিল ৬ বলে ৭ রান।
ম্যাচে যা ঘটেছিল ভারতের অধিনায়ক রোহিম শর্মা টসে জিতে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন। পাকিস্তান ম্যাচের শুরুতেই বাবর আজমের উইকেট হারায়।
ষষ্ঠ ওভারে পাকিস্তানের ফখর জামানের ব্যাটের কিনারায় বল লেগে ভারতের উইকেটকিপার দিনেশ কার্তিকের হাতে বল গেলেও ভারতের ক্রিকেটাররা কেউ ব্যাটে লাগার বিষয়টি টের পাননি।
আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা না করে ফখর জামান নিজেই প্যাভিলিয়নের পথে হাঁটা ধরেন।
এরপর মোহাম্মদ রিজওয়ান ইফতিখার আহমেদের সাথে ৪৫ রানের জুটি গড়েন।
হার্দিক পান্ডিয়ার বলে মোহাম্মদ রিজওয়ান আউট হন ১৫তম ওভারে, তিনি ৪২ বলে ৪৩ রানের একটি ইনিংস খেলেন।
এরপর পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানরা কেউই তেমন সুবিধা করতে পারেননি।
শেষদিকে শাহনাওয়াজ দাহানি ৬ বলে ১৬ রান তোলেন ২টি ছক্কা হাঁকান তিনি।
ভারতের ভুবনেশ্বর কুমার ২৬ রান দিয়ে চারটি উইকেট নেন, হার্দিক পান্ডিয়া ২৫ রান দিয়ে ৩টি উইকেট নিয়েছেন।
১৪৭ রানে অলআউট হয় পাকিস্তান।
জবাবে প্রথম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলতে নামা নাসিম শাহ’র দ্বিতীয় বলেই লোকেশ রাহুলের উইকেট হারায় ভারত।
বিরাট কোহলির সাথে ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা ৪৯ রানের জুটি গড়েন।
মোহাম্মদ নাওয়াজ নিজের পরপর দুই বলে রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলিকে আউট করেন। বিরাট ৩৪ বল খেলে ৩৫ রান তোলেন।
রোহিত শর্মা ১৮ বলে ১২ রান তুলে ক্যাচ তুলে দিয়ে আউট হন।
তখন ভারত একটা কঠিন সময়ের ভেতর দিয়ে যাচ্ছিল।
১০ ওভারে ভারত ৩ উইকেট হারিয়ে ৬২ রান তোলে।
শেষ দশ ওভারে ভারতের প্রয়োজন ছিল ৮৬ রান।
তখন সূর্যকুমার যাদব ১৮ বলে ১৮ রান করে নাসিম শাহ’র বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান।
এই সময়ে রবিন্দ্র জাদেজা ও হার্দিক পান্ডিয়া পরিমিত ব্যাটিং করে ভারতকে নির্ধারিত লক্ষ্যের দিকে নিয়ে যায়।
এই দু’জন ২৯ বলে ৫২ রানের জুটি গড়েন, মূলত এই জুটিই ভারতকে জয়ের পথে নিয়ে যান।
রবিন্দ্র জাদেজা যখন নওয়াজের বলে বোল্ড আউট হন তখন ভারতের প্রয়োজন ছিল ৫ বলে ৭ রান।
হার্দিক পান্ডিয়া ওভারের চতুর্থ বলে ছক্কা মেরে ম্যাচ জিতিয়ে ফেরেন।
পান্ডিয়া ১৭ বলে ৩৩ রান তোলেন। চারটি চার ও একটি ছক্কা হাঁকান তিনি।
এর আগে বোলিংয়ে তিনটি উইকেটও নেন তিনি, হার্দিক পান্ডিয়া ম্যাচসেরার পুরস্কার পান।
আগামী ৩১ অগাস্ট ভারত হংকংয়ের বিপক্ষে মাঠে নামবে। আর ২ সেপ্টেম্বর হংকংয়ের বিপক্ষে মাঠে নামবে পাকিস্তান।