যুক্তরাষ্ট্রে সুদের হার দীর্ঘ মেয়াদে বেশি থাকবে, এমন খবরে মার্কিন মুদ্রা ডলারের দাম বেড়ে ২০ বছরে সর্বোচ্চ হয়েছে। গতকাল সোমবার ফেড চেয়ার জেরোমে পাওয়েল জানান, মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে সুদের হার দীর্ঘ মেয়াদে উচ্চ থাকবে। এতে বৈশ্বিক অন্য মুদ্রাগুলোর বিপরীতে ডলারের মান সূচক বেড়ে হয় ১০৯.৪৮ পয়েন্ট, যা দুই দশকে সর্বোচ্চ।
অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান কমনওয়েলথ ব্যাংক অব অস্ট্রেলিয়ার কারেন্সি স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিকস বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহযোগী অর্থনীতিবিদ ক্যারোল কং রয়টার্সকে বলেন, ‘ডলারের মান যে হারে বাড়ছে, তাতে চলতি সপ্তাহের শেষ নাগাদ (ডলারের) দর ১১০ পয়েন্ট ছাড়িয়ে যাবে।
একদিকে যখন ডলারের দর বাড়ছে, অন্যদিকে তখন কমছে ইউরো, অস্ট্রেলিয়ান ডলার, পাউন্ড, ইয়েনসহ মার্কিন মুদ্রার প্রতিযোগী অন্যান্য তারল্যের দাম। ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেমের মান সূচকের তথ্য অনুযায়ী আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের সবচেয়ে বড় প্রতিযোগী মুদ্রা ইউরোর দর কমেছে দশমিক ২৫ শতাংশ। যুক্তরাজ্যের মুদ্রা পাউন্ডের মান কমেছে দশমিক ৫ শতাংশ।
মূল্যস্ফীতি মোকাবেলায় ধাপে ধাপে নীতি সুদহার বৃদ্ধি করেছে ফেডারেল রিজার্ভ। নিকট ভবিষ্যতে সুদহার হ্রাসের সম্ভাবনা নেই বলেই ইঙ্গিত দিয়েছেন ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোমে পাওয়েল। সেই সঙ্গে পাওয়েল জানিয়েছেন, উচ্চ সুদের জামানায় মানুষের দুর্ভোগ সম্পর্কে তিনি অবগত। এতে আর্থিক প্রবৃদ্ধির গতি কমবে, মানুষের উপার্জন হ্রাস পাবে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি কমাতে গেলে এ ছাড়া উপায় নেই। তাঁর এই হুঁশিয়ারির পরই আশঙ্কার মেঘ ঘনিয়ে আসছে বিশ্বজুড়ে। বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছে, এমনিতেই মানুষ উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে কঠিন অবস্থায়, তার ওপর নীতি সুদহার আবার বাড়লে বিশ্ব অর্থনীতির হাল আরো সঙ্গিন হবে।
আর্থিক বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলছেন, ফেড নীতি সুদ বাড়ালে উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে বিনিয়োগ যুক্তরাষ্ট্রের বন্ড বাজারে চলে যেতে পারে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক অবস্থা যে ক্রমেই মন্দার দিকে যাচ্ছে, পাওয়েলের বক্তব্যে সেই আশঙ্কা স্পষ্ট। এতে সে দেশে চাহিদা কমতে ও বেকারত্ব বাড়তে পারে বলেও জানাচ্ছেন তিনি। সে ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিনিয়োগ উন্নয়নশীল দেশগুলোতে আসতে পারে।
মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির কারণে উন্নত দেশসহ সবখানেই মানুষ ব্যয় কমিয়েছে। সেই সঙ্গে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার বৃদ্ধির কারণে সমাজে অর্থের প্রবাহ আরো কমে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মতো উন্নত দেশের বিশ্লেষকরা এরই মধ্যে মন্দার আশঙ্কা করছেন। বছরের প্রথম দুই প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রে জিডিপি সংকোচন হয়েছে।