সন্তানের বাজে ফলে চিন্তিত অভিভাবক অবশেষে একজন ভালো শিক্ষক খুঁজে এনে দিয়েছেন। পরীক্ষার আগে সময় খুব বেশি না পেলেও শিক্ষক পড়াশোনাটা ভালোই করিয়েছেন। ছাত্ররা কেমন করেন, এবার সেটি জানার পরীক্ষা!
অভিভাবকের জায়গায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নামটি বসিয়ে নিন। ছাত্র সাকিব আল হাসানরা আর শিক্ষক টেকনিক্যাল কনসালট্যান্ট শ্রীধরন শ্রীরাম।তাঁর কাছে সপ্তাহখানেকের ক্লাসের পর শারজায় আজ রাতের ম্যাচে আফগানিস্তান পরীক্ষায় বসতে চলেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা।
ক্রিকেট অপারেশনস কমিটির প্রধান জালাল ইউনুস এই ম্যাচ সামনে রেখে যা যা বললেন, তাতে অভিভাবক-শিক্ষক-ছাত্র-পরীক্ষা শব্দগুলোই পর পর দাঁড়ায়, ‘আমরা তো ভালো শিক্ষক এনে দিয়েছি। এখন বাকি কাজটি ছাত্রদেরই করতে হবে। ’ এই ছাত্ররা বেশ কিছুদিন ধরে ব্যর্থতার চক্করে এমন ঘুরপাক খেয়েছেন যে ঘুরে দাঁড়ানোর মন্ত্রে নতুন করে দীক্ষা দেওয়ার কাজটিও করতে হয়েছে শ্রীরামকে। যেভাবে এই সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটার কাজটি করেছেন, এর প্রভাব দলের ক্রিকেটারদের মধ্যে দেখতেও পেয়েছেন বলে জানালেন জালাল, ‘ওদের তো এখন বেশ স্পিরিটেড মনে হচ্ছে। আসলে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার পর একটা কিছু করতেই হয়। ওরাও কিছু একটা করতে চাচ্ছে। ’
এশিয়া কাপ অভিযান শুরুর আগে সাকিবদের কিছু একটা করার তাড়নায় বাধা হতে তৈরি আফগানিস্তানও। আসরের উদ্বোধনী ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে বিধ্বস্ত করা দলটির সবচেয়ে বড় তারকা রশিদ খান যেমন গতকাল সন্ধ্যার সংবাদ সম্মেলনে এসে বলে গেলেন, ‘শ্রীলঙ্কার সঙ্গে কী করেছি না করেছি, তা আমরা ভুলে গেছি। পেছনেরটা মনে রাখতে চাই না। তবে (জিততে হলে) কোন প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়, সেটি আমাদের জানা আছে। ’
বাংলাদেশ দল নিয়ে এই আফগান লেগ স্পিনারের আগের আর এখনকার জানা-বোঝায় কিছুটা পার্থক্যও তৈরি হয়েছে। সেটি অধিনায়ক হিসেবে সাকিব আল হাসানের উপস্থিতির কারণে। এই অলরাউন্ডারের ক্ষুরধার ক্রিকেট মস্তিষ্কের প্রতি শ্রদ্ধাশীল রশিদের এবার বাংলাদেশকে বাড়তি সমীহ করার কারণও তিনিই। অবশ্য সাকিবকে কুর্নিশ করা গুণগ্রাহীদের দলে কে না আছেন! আছেন শ্রীরামও। আগের রাতে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর লড়াইয়ে ব্যাটে-বলে
ভাগ্য গড়ে দেওয়া হার্দিক পাণ্ডে আর বেন স্টোকসদের কাতারেই তাঁকে রাখলেন এই ভারতীয় কোচ, ‘হার্দিক পাণ্ডে বা বেন স্টোকস তো বেশি আসে না। যে দলে তারা থাকে, ভারসাম্যটা ধরে রাখে। কখনো একজন অতিরিক্ত ব্যাটার খেলাতে পারবেন তো কখনো বোলার। কোথায় যেন পড়লাম, ভারত দলে ১২ জন খেলছে। তা বলা হচ্ছে পাণ্ডের মতো অলরাউন্ডার আছে বলেই। আমাদেরও সাকিব আছে। যে চার ওভার বোলিং করতে পারে, টপ অর্ডারে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ছক্কাও হাঁকাতে জানে। এমন ক্রিকেটার যেকোনো দলের জন্যই অমূল্য সম্পদ। ’
অবশ্য সাকিবের মতো কার্যকর ক্রিকেটার থাকার পরও বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ভাগ্য অপরিবর্তিতই বেশ কিছুদিন ধরে। সর্বশেষ ১৫ ম্যাচে মাত্র দুই জয়, এর একটি আবার আফগানিস্তানের বিপক্ষেও। অর্থাৎ এই সংস্করণে আফগানদের সবাই বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে রাখলেও তারা যে অজেয় নয়, ব্যর্থ সময়েও এর নজির আছে। তবে সমস্যা হলো খেলা শারজায়। যেখানে গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দুই ম্যাচে উইকেট বোঝার ভুলে পড়েছিল বাংলাদেশ। তাতে ম্যাচের আগের দিন সেখানে না যাওয়ার দায়ও আছে। তবে এবার সতর্কতার অংশ হিসেবে দুবাইয়ের আইসিসি একাডেমি মাঠের ঐচ্ছিক অনুশীলন থেকে গত সন্ধ্যায় শ্রীরাম আর টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সোজা চলে গেলেন শারজায়। সেখানে সন্ধ্যার পর শিশির পড়ে কি না এবং উইকেট কেমন, তা বুঝতে এবার ম্যাচের দিন পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে না।
বাড়তি পেসার না স্পিনার খেলাবেন, সেই গবেষণায় সন্ধ্যায় ব্যস্ত হয়ে পড়ার আগে শ্রীরাম সংবাদ সম্মেলনে আফগানিস্তানকে শক্ত দলের মর্যাদাও দিলেন। তবে ছয় বছর অস্ট্রেলিয়া দলের সহকারী কোচ হিসেবে কাজ করার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায়ই কিনা কিছুটা দম্ভও ঘোষিত হলো তাঁর কণ্ঠে, ‘আফগানিস্তান খুবই বিপজ্জনক দল। শুধু রশিদ খানের ওপর নির্ভর করে না। আমরা জানি, রশিদ টি-টোয়েন্টিতে বিশ্বের অন্যতম সেরা বোলার। এটি অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে আমরা যখন প্রস্তুতি নিচ্ছি, সেটি আফগানিস্তান দলের জন্যই। রশিদ, মোহাম্মদ নবি বা ফজল হক ফারুকীতে কিছু যায়-আসে না। আমরা পুরো আফগানিস্তান দলের জন্যই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। ’
প্রস্তুতির মগ্নতা শেষে এবার তাঁর ছাত্রদের পরীক্ষায় বসার পালা!