রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর গোলাপবাগ এলাকায় ৩৪/ক নম্বর বাড়ি। একতলা ওই নির্জন বাড়িতে বসবাস করতেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিক মাসুদুর রহমান খান (৪৮)। ২৭ আগস্ট পুলিশ খবর পায়, ওই বাসায় অর্ধগলিত অবস্থায় একটি লাশ পড়ে আছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। বাড়ির মূল ফটক ভেতর থেকে বন্ধ থাকা ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা দেখে পুলিশের প্রাথমিক ধারণা ছিল এটি অপমৃত্যু। তবে মাসুদুরের মাথার কাছে হাতুড়ি পড়ে থাকা, একটি মোবাইল ফোনসেট খোয়া যাওয়া ও আরও কিছু আলামত দেখে পুলিশের ধারণা কিছুটা বদলে যায়। এটি হত্যাকাণ্ড হতে পারে বলে আশঙ্কা করে পুলিশ। এমন কিছু সন্দেহের সূত্র ধরে শেষ পর্যন্ত মাসুদ হত্যার নেপথ্যের তথ্য বেরিয়ে এলো। সমকামিতার শিকার হয়ে শোয়েব আক্তার লাদেন নামে এক তরুণ তাকে হত্যা করে পালিয়েছেন। আট দিন আগে হত্যাকাণ্ড ঘটলেও প্রবাসীর লাশও এতদিন তার ঘরে পড়ে ছিল।
সোমবার যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশের একটি দল লাদেনকে শেরপুরের নালিতাবাড়ীর সীমান্তবর্তী একটি গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে। গতকাল তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এরপর তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ ও আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে লাদেন লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি জানান, মাসুদ সমকামী ছিলেন। দুই বছরের বেশি সময় ধরে তাঁর বাসায় কাজ করে আসছেন তিনি। তাঁর সঙ্গে মাসুদের শারীরিক সম্পর্ক ছিল। এর বিনিময়ে তাঁকে টাকা দিতেন মাসুদ।
এই সম্পর্কের ভেতর দিয়ে তাঁদের মধ্যে সখ্য তৈরি হয়। তবে কিছুদিন আগে লাদেন বিয়ে করেন। এরপর ওই বাসায় যাতায়াত কমিয়ে দেন। তবে বিয়ের পরও মাসুদ তাঁকে পুরোনো সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে দেননি। লাদেনের বিবাহিত জীবনকে কোনোভাবে মেনে নিতে পারছিলেন না মাসুদ। তিনি চাইতেন ওই বিয়ে ভেঙে দেওয়া হোক। অন্যদিকে লাদেন মনেপ্রাণে চাইতেন মাসুদের সঙ্গে ওই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে। সর্বশেষ গত ১৮ আগস্ট লাদেনকে ডেকে নেন মাসুদ। গোলাপবাগের বাসায় তাঁর সঙ্গে আগের মতো শারীরিক সম্পর্কে জড়ান। ওই দিন একপর্যায়ে লাদেনের শরীরের স্পর্শকাতর জায়গায় কামড় দেন মাসুদ। তখন বাসায় থাকা একটি হাতুড়ি দিয়ে জোরে মার্কিন প্রবাসীর মাথা ও হাঁটুতে আঘাত করেন লাদেন। এরপর রক্তাক্ত অবস্থায় অচেতন হয়ে বিছানায় পড়ে যান মাসুদ। এরপরই মূল ফটক টপকে দ্রুত পালিয়ে যান লাদেন।
পুলিশের ওয়ারী বিভাগের ডিসি জিয়াউল হাসান তালুকদার জানান, ভিকটিম উচ্চশিক্ষিত একজন মানুষ। তিনি সমকামি ছিলেন। বাসার ভেতরে ৪টি কুকুরও পালতেন। সমাজের কারও সঙ্গে খুব একটা মিশতেন না। মরদেহ পাওয়ার পর আমরা খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, তরুণ ছেলেরা তাঁর বাসায় নিয়মিত যাতায়াত করত। ঘটনার পর বাসার ভেতর থেকে বিভিন্ন ধরনের বেশ কিছু আলামতও পেয়েছি। তাঁর মধ্যে যৌন উত্তেজক ওষুধও রয়েছে।
ডিএমপির ডেমরা জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এস এম জাহাঙ্গীর হাছান বলেন, লাদেনকে ধরার পর প্রথমে স্বাভাবিক কারণে তিনি আসল ঘটনা লুকানোর চেষ্টা করেছিলেন। পরে নানামুখী জেরা ও তাঁর সামনে বিভিন্ন ধরনের ক্লু হাজির করার পর তিনি সব স্বীকার করেন।
এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুই বছর আগে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফেরেন মাসুদ। তাঁর আত্মীয়স্বজনের অনেকে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী। সমকামি হিসেবে তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভাতা পেতেন।