কালকে মাঠের কন্ডিশন, আবহাওয়া, পিচের গতিবিধি-সবমিলিয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের টস জিতে বোলিং নেওয়াই সমুচিত ছিল। অনেক ক্রিকেট বিশ্লেষক খেলার আগে ও পরে এরকম মত দিয়েছেন। সেই বিবেচনায় সাকিব আল হাসান টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে হয়তো খানিকটা ভুল করেছিলেন। সাথে এক স্পিনার কম খেলানোটাও হয়তো ম্যাচে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
তবে সেই হিসেবের বাইরেও আছে অনেক হিসাব। ধীর গতির লো টার্নিং শারজার পিচের চরিত্র নাকি অনেকটা বাংলাদেশের হোম অব ক্রিকেট মিরপুরের মতোই। সেই হিসেবে এনামুল হক বিজয় ও নাঈম শেখের ওপেনিংয়ে এমন ধুকতে থাকার কথা নয়।
মুজিবের বলে আউটি হয়ে ফেরার আগে নাঈম ৮ বলে করেছেন ৬ রান আর একই স্পিনারের শিকার হয়ে বিজয় ফিরেছেন ৪ রানে। সবমিলিয়ে ১২ বলে ৭ রানের জুটি গড়েছিলেন বিজয়-নাঈম। বলে রাখা ভালো ওপেনিংয়ে ভালো অপশন নেই বলেই নাঈমকে দলে ডাকা, বিজয়ের সুযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রটাও অনেকটা তাই।
দল ওপেনিংয়ে যে হোচট খেয়েছে, তিনে খেলতে নামা সাকিব নিজেই সেই টালটা সামলাতে পারেননি। বরাবর স্পিন ভালো খেলায় সুনাম অর্জন করা সাকিবও ফিরলেন সেই মুজিবের বলে। বিজয় আর সাকিবের পার্টনারশিপের দৈর্ঘ্য ১২ বলে ৬।
এরপর দলের অভিজ্ঞ ব্যাটার, একশ’র বেশি টি-টোয়েন্টি খেলা মুশফিকুর রহিমও ফিরেছেন ৪ বলে ১ রান করে। সবমিলিয়ে টপ অর্ডারের ৪ ব্যাটারের রান সংখ্যা ২৩!
এরপর দলের সহ-অধিনায়ক আফিফ হোসেন ধ্রুব মাহমুদুল্লাহকে নিয়ে ধীরগতিতে হাল ধরার চেষ্টা করলেও তিনি রীতিমতো ব্যর্থ। ২৫ বলে আফিফ-মাহমুদউল্লাহ জুটি করতে পেরেছেন ২৫ রান।
উল্লেখ্য রিয়াদ একাই করেছেন ৪ টপ অর্ডার ব্যটারের চেয়ে বেশি রান, ২৭ বলে ২৫। আফিফ ১২ বলে ১৫।
কালকের ম্যাচে মুখ বাঁচানো ইনিংসটা খেলেছেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। ৩১ বলে ৪৮ রানের ইনিংস খেলেছেন মোসাদ্দেক। আর শেখ মেহেদী ১৪। সবমিলিয়ে ১২৭ রানে থামে বাংলাদেশ।
মোসাদ্দেকের আগের ব্যাটার আর পরের ব্যাটার দুইভাগে বাংলাদেশের ইনিংসটাকে ভাগ করলে দেখা যাবে আগের ৬ ব্যাটার তুলেছেন ৬০ রান আর মোসাদ্দে-মেহেদী তুলেছেন ৬২ রান!
ব্যাটিংয়ে এমন বিপর্যয়ের আখ্যানের পর বোলিংয়েও নির্বিষ সাকিব বাহিনী। সাকিব ৪ ওভার বল করে ১৩ রান দিলেও মোস্তাফিজুর রহমান ৩ ওভারে দিয়েছেন ৩০ রান। তাসকিন আহমেদও দিয়েছেন ৩ ওভারে ২৩ রান।
আর মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মতো এবারও গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে নার্ভ ধরে রাখতে পারেননি। ২ ওভারেই দিয়েছেন ২৭ রান! তার মধ্যে টার্নিং মোমেন্টেই ১৮তম ওভারে এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার দিয়েছেন ২২ রান! তার আগে ১৭তম ওভারে আরেক অভিজ্ঞ পেসার মোস্তাফিজ দিয়েছেন ১৭ রান!
সবমিলিয়ে ব্যাট হাতে যেমন অভিজ্ঞরা কিছুই করতে পারেননি। তেমন বল হাতেও অভিজ্ঞরা ডুবিয়েছেন দলকে।
বাংলাদেশ দলে যারা আছেন, তাদের কাউকে আর নবীন বলার সুযোগ নেই। ম্যাচের হিসেবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সবার আসা যাওয়ার সংখ্যাটা অভিজ্ঞদের পর্যায়েই পড়ে।
তাই বাংলাদেশ দলের কাউকে আর খেলাটা নতুন করে বোঝানোর কিছু নেই। সাকিব দায়িত্ব নিয়েই বলেছেন, কাউকে হাতে ধরে শেখানোর অবস্থা এখন আর নেই। তারপরও যদি দলের সব ইউনিট এমন খারাপ করে, তবে রোগ নির্ণয়ের কী উপায়? সর্বাঙ্গেই যেহেতু ব্যথা, কাপ্তান সাকিব ওষুধ দেবেন আসলে কোথা? সেই প্রশ্ন ওঠাটাও তো অমূলক নয়।
আর সবচেয়ে বড় কথা কয়েক দিন পরেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, দলের এমন হাল তো অশনি সঙ্কেত দিয়েই রাখছে। ক্রিকেটাররা এমন পারফর্ম করলে, রিয়াদেও যা সাকিবেও তাই। অধিনায়ক পরামর্শ দিতে পারেন, কারো খেলাটা মাঠে খেলে দিতে পারেন কি?