সকাল দেখেই নাকি দিনের অবস্থা বোঝা যায়। ইংরেজি প্রবাদটি এ রকম- ‘Morning shows the day as child shows the man’. এখন সিইসির ব্যাপারে প্রবাদটি যেন অসত্যে পরিণত হতে চলেছে। নবনিযুক্ত সিইসি হাবিবুল আউয়াল যখন দায়িত্বে অভিষিক্ত হলেন, তখন সর্বত্রই একটি সতর্ক আশাবাদ লক্ষ করা গিয়েছিল। প্রথম কারণটি ছিল স্বয়ং সিইসির সাহসী ও স্পষ্ট বক্তব্য। দ্বিতীয় কারণটি ছিল সিভিল সোসাইটির সমর্থন। ইতঃপূর্বে ইভিএম সম্পর্কে স্বয়ং সিইসির মন্তব্য ছিল এরকম- ‘ইভিএম ব্যবহারে অনেকেই অভ্যস্ত নয়। মেশিনের মাধ্যমে কোনো ডিজিটাল কারচুপি হয় কি না, পৃথিবীর অনেক দেশ ইভিএম বাতিল করে দিয়েছে, কেন বাতিল করল সেটিও গবেষণা করা উচিত। এ ছাড়া যদি কোনোরকম কারচুপি হয়ে থাকে তাহলে রিকাউন্টিং করা যাবে কি না তা- এর কোনো ব্যবস্থা আছে কি না তা-ও আমাদের বুঝতে হবে।’
ক্রমহ্রাসমান উপযোগবিধির মতো আমরা এখন দেখলাম সিইসির গলার স্বর ক্রমেই নিম্নমুখী হয়ে আসছে। কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে হাঁকডাকের পর তার আত্মসমর্পণও লক্ষ করলাম। মানুষ যে আশা করে তার দিকে তাকিয়ে ছিল তা এখন ঝাপসা হয়ে আসছে। যদিও তার কোনো কোনো সমর্থক বলছেন, ‘ওস্তাদের মাইর বেইন্না রাইতে’। অবশ্য শেষ খেলা দেখার জন্য অনেকেই উন্মুখ হয়ে থাকবেন। তবে ইতোমধ্যে হাবিবুল আউয়ালের ব্যক্তিত্বের, সুনামের ও কর্মধারার যে অবক্ষয় ঘটেছে তা ফিরে পাওয়া কঠিন। সর্বশেষ, নিজের পায়ে কুড়াল মারার মতো যে কাজটি তিনি করলেন তা হলো- ইভিএম নিয়ে ত্বরিত সিদ্ধান্ত। বুদ্ধিমানরা বলে, ‘ভাবিয়া করিও কাজ করিয়া ভাবিও না’। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করে, ইভিএম সম্পর্কিত সিদ্ধান্তটি আকস্মিক, আরোপিত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এতগুলো শব্দের দায় এককভাবে সিইসির ওপর বর্তালে অন্যায় করা হবে- তা আমরা বুঝি। মনে হচ্ছে দশচক্রে ভগবান ভূতের মতো কিছু ঘটেছে।
আমরা লক্ষ করছি, সিইসিতে এমন সব সদস্যরাও আছেন, যারা আওয়ামী লীগের চেয়েও বড় আওয়ামীলীগার। রাখঢাক, ভদ্রতা, সৌজন্য ও সভ্যতা অতিক্রম করে একজন ইভিএমের জন্য চ্যালেঞ্জ দিয়ে যাচ্ছেন। মাঝে মধ্যে এই ব্যক্তি বিব্রতকর ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিচ্ছেন। এক পর্যায়ে সিইসি বলেছিলেন, তার মতিবিভ্রম ঘটেছে। দেখেশুনে মনে হচ্ছে, তিনি জাতে মাতাল হলেও তালে ঠিক
আছেন। তিনি গত পরশু বলেছেন, ইভিএম জালিয়াতি প্রমাণ করতে পারলে ইভিএমে ভোট হবে না। অথচ গত সপ্তাহে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট গ্রহণ করা হবে। বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলের মতামত উপেক্ষা করে ইসি এই সিদ্ধান্ত নেয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রাজনৈতিক বিতর্ক নিরসন না করে বড় পরিসরে ইভিএমে নির্বাচন করার এই সিদ্ধান্ত ইসি ও বিশেষত সিইসিকে আস্থার সঙ্কটে নিক্ষেপ করেছে। নির্বাচন ঘিরে অনিশ্চয়তা, অবিশ্বাস ও সন্দেহ আরো বাড়বে। রাজনীতির খোঁজখবর রাখেন এমন প্রবীণ লোকরা বলছেন, প্রকারান্তরে ইসি এখন ক্ষমতাসীনদের নির্বাচন উতরে যাওয়ার বাহনে পরিণত হয়েছে। নির্বাচনের যখন এক বছরের বেশি সময় বাকি রয়েছে, তখন এত আগে নেয়া সিদ্ধান্ত সন্দেহের মাত্রা ও আধিক্য বাড়িয়েছে মাত্র।
প্রাথমিকভাবে ইসি জানিয়েছিল, তাদের হাতে যে ইভিএম আছে তা দিয়ে বড়জোর ৭০-৭৫টি আসনে ভোট নেয়া যাবে। এর চেয়ে বেশি আসনে ভোট করতে হলে ইভিএম কিনতে হবে। কিছু দিন আগে প্রধানমন্ত্রী যখন প্রকাশ্যে ঘোষণা দিলেন, সব নির্বাচনই ইভিএমে হবে- তখন ইসিতে নড়চড় শুরু হয় এবং অবশেষে সরকারকে আগেভাগেই আশ^স্ত করার মানসে এত দ্রুত, এত আগে সিদ্ধান্তটি গৃহীত হলো। এ দেশে নির্বাচন সংস্কৃতি ও নির্বাচন কারসাজিতে সবচেয়ে অভিজ্ঞ দল আওয়ামী লীগ। তাদের হাতে কোনো নির্বাচনই নিরপেক্ষ এমনকি ন্যূনতম মানসম্পন্ন হয়নি। ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর বিপুল জনপ্রিয়তা ও আওয়ামী লীগের জয়জয় রব সত্ত্বেও তারা দুই-চারটি আসন বিরোধীদের দিতে অস্বীকার করে। সেখানে তারা প্রার্থী হাইজ্যাক থেকে হেলিকপ্টারে ব্যালটপেপার রাজধানীতে আনাসহ সব অপকর্মই করে। নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করার জন্য তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার আন্দোলন করে। আবার যখন দেখেছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলে তারা কোনোদিনই জনগণের ভোটে ক্ষমতায় যেতে পারবে না, তখনই তারা আবার ডিগবাজি খেয়েছে। ২০১৪ সালে তারা নির্বাচন নির্বাসনে দিয়েছিল। ২০১৮ সালে তারা পুলিশি ব্যবস্থায় নিশীথ নির্বাচন করেছিল।
সবারই দৃষ্টি, সবারই চিন্তা ২০২৩ সালে তারা কী করবে? ইতোমধ্যে ঘটের বুদ্ধি অনেক খরচ হয়ে গেছে। সুতরাং চাই নতুন ফন্দি। এই নতুন ফন্দির প্রধান কুশলী হচ্ছে নির্বাচন কমিশন। ইভিএমের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে প্রায় পুরো দেশের মানুষ বলেছে- ইভিএম চাই না। কিন্তু মসনদ হারানোর ভয়ে তটস্থ তারা। প্রধান বিরোধী দল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, এই নির্বাচন কমিশনের কাজই হলো আওয়ামী লীগের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করা। কোন দল কী চাইল, জনগণ কী চাইল তাতে তাদের কিছু আসে যায় না। তারা যে আওয়ামী লীগের আজ্ঞাবহ, ইভিএম সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে তার প্রতিফলন ঘটেছে। অপর দিকে, এককালের রাজকীয় বিরোধী দল বলে কথিত জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়- ইসি নিরপক্ষেভাবে চিন্তা করছে না। সরকারবিরোধীদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের মহাজোটের অংশীদার ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদও ইভিএমের ব্যবহার নিয়ে সন্দিহান। তারা মনে করে, ইভিএম নিয়ে সংশয় ও সন্দেহ দূর করেই তা ব্যবহার করা উচিত। ইসির সংলাপে ওয়ার্কার্স পার্টি বলেছিল, ইভিএম নিয়ে জনমনে অনাস্থা ও সংশয় আছে। ইভিএম হ্যাক করা যায় না বলে ইসি যে দাবি করছে তা প্রমাণিত নয়। ইভিএম হ্যাক করে ভোটের ফলাফল পাল্টে দেয়া সম্ভব। এটি ভারতের দিল্লি অ্যাসেম্বলি নির্বাচনে একজন এমএলএ করে দেখিয়েছেন। ওয়ার্কার্স পার্টি ইভিএমে ভোটের ভেরিফায়েবল পেপার অডিট ট্রেইল (ভিভিপিএটি) যুক্ত করার পরামর্শ দিয়ে বলেছিল, কিছু বিষয়ে সমাধান করলে গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিতর্ক দূর হবে। কিন্তু সিইসি কোনোরকম সংশোধন ও সংস্কার কার্যক্রমের অপেক্ষা না করেই অর্ধেক নির্বাচন ইভিএমে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জাসদ ইভিএমকে কারিগরি ত্রুটিমুক্ত ও বিশ্বাসযোগ্য করার পাশাপাশি ব্যালটেও ভোট নেয়ার প্রস্তাব করে। স্মরণ করা যেতে পারে, গত ফেব্রুয়ারিতে এই নির্বাচন কমিশন শিক্ষাবিদ, বিশিষ্ট নাগরিক ও বুদ্ধিজীবীদের সাথে সংলাপের আয়োজন করেছিল। এই ধারার প্রতিটি সংলাপে ইভিএম ব্যবহার না করার পরামর্শ এসেছে। আর যদি তা করতে হয় তাহলে রাজনৈতিক মতৈক্যের মাধ্যমেই করা উচিত- এরকম মত দেয়া হয়। নির্বাচন নিয়ে বরাবর কাজ করছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, এমনিতেই নির্বাচন নিয়ে অনেক সমস্যা। বেশির ভাগ দল
ইভিএমের বিপক্ষে। ক্ষমতাসীনরাসহ মাত্র কয়েকটি দল পক্ষে। এমতাবস্থায় কোন যুক্তিতে কোন উদ্দেশ্যে ইসি ইভিএমে ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিলো তা প্রশ্নসাপেক্ষ। তিনি আরো বলেন, এ সিদ্ধান্ত ইসির প্রতি আস্থাহীনতা আরো প্রকট করবে। এতে দেশে আরেকটি ব্যর্থ নির্বাচনের দিকে ধাবিত হওয়ার আশঙ্কা সষ্টি হয়েছে।
অনেকেই ১৫০ বা অর্ধেক আসনে ইভিএম নির্বাচনের উদ্দেশ্য-বিধেয় নিয়ে নানা মন্তব্য করছেন। ক্ষমতাসীনরা কিভাবে কী কারণে ১৫০-এ রাজি হলো এর পটভ‚মি ব্যাখ্যা করেছেন একজন কলামিস্ট। সবাই জানি, সবাই বুঝি যে, আওয়ামী লীগ সবসময়ই যেকোনো বিষয়ে খানিকটা কুশলী, অনেকটা দূরদর্শী। গ্রামের লোকেরা যখন কূট কিছু দেখে তখন বলে, রাজনীতির মধ্যে পলিটিক্স ঢুকে গেছে। আর লেখাপড়া জানা লোকেরা ‘পলিটিক্সকে’ বলে পলিট্রিক্স। অর্থাৎ বহুমুখী কারসাজি। আওয়ামী লীগ মূলত ৩০০ আসনেই ইভিএম দাবি করেছিল। আর তাদের জোটসঙ্গী তরিকত ফেডারেশনকে দিয়ে দাবি করিয়েছিল ১৫০টি আসনে ইভিএমে ভোট। এখন যখন ইসি ১৫০ আসনে ইভিএম প্রস্তাব গ্রহণ করেছে, তখন কুশলী লোকেরা বলবে- ইসি তো আওয়ামী লীগের দাবিকে অর্ধেকে নামিয়ে দিয়েছে। এটি অবশ্যই ইসির কৃতিত্ব। আসল কৃতিত্ব পলিটিক্সের।
আপনাদের মনে আছে কি না, ইতঃপূর্বে বহু সুনামের! অধিকারী সিইসি হুদার নাম প্রস্তাব করেছিল এই তরিকত ফেডারেশন। যখন তার নাম চূড়ান্ত করা হয় তখন তো কেউ বলতে পারেনি, এটি সরকারি দলের প্রার্থী। একেই বলে ‘পলিট্রিক্স’। যাই হোক, এই ১৫০ সংখ্যা নিয়ে পরিসংখ্যানবিদদের বিদ্যাবুদ্ধির কসরত চলছে। অতি আওয়ামী আশাবাদীরা আশা করছেন, ১৫০ ইভিএম আসনের ১৫০টিতেই আওয়ামী লীগ জিতবে বা জেতানো হবে। তার কারণ সরকার গঠনের জন্য ১৫১ আসন দরকার।
সন্দেহবাদীরা বলছেন, যদি দৈব দুর্ঘটনাক্রমে ইভিএমের কোনোটিতে আওয়ামী লীগ হেরে যায় তাহলে অভাগা দেশের হবে কী? তবে তারা নিশ্চিত যে, তাদের তাঁবেদাররা যে আসন পাবে- তাতে তাদের
সরকার গঠন কঠিন হবে না। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার কাছাকাছি গিয়েও আওয়ামী লীগ আ স ম রবের জাসদসহ তথাকথিত জাতীয় সরকার গঠন করেছিল। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা সত্ত্বেও জাসদের ইনুর দু’আনি, চার আনি যোগ করে ষোলকলা পূর্ণ করেছিল। এভাবে রাজনৈতিক বিরোধীদের ‘স্টিক অ্যান্ড ক্যারট’ বা ‘লাঠি অথবা মুলা’র ভয় দেখিয়ে নিঃশেষ করার কৌশল নিয়েছিল আওয়ামী লীগ। রাজনৈতিক ছলা-বলা-কলাকৌশলে তাদের জুড়ি নেই।
নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের মাহাত্ম্য নিয়ে আরো কথা আছে। আগের ভুয়া নির্বাচনগুলোতে বিরোধী দলের প্রার্থী, নেতা, অ্যাজেন্ট ও কর্মীদের পিটিয়ে, গুলি করে, ঘরে আটকে রেখে ও ভুয়া মামলা দিয়ে অথবা প্রকাশ্য ডাণ্ডা মেরে ঠাণ্ডা করে দিয়ে নির্বাচন করতে হয়েছে। এবার ইভিএমের ভোজবাজিতে তা আর কিছুই করতে হবে না। উপরে ফিটফাট ভেতরে সদরঘাট। অর্থাৎ গণমাধ্যমে দেখানো হবে নির্বাচন কত সুষ্ঠু ও সুন্দর হচ্ছে। বিদেশী পর্যবেক্ষণকারীরাও বাইরে দেখতে পাবেন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। সুতরাং ইভিএম কারসাজি হচ্ছে গত দেড় দশকের সেরা বুদ্ধি। এই বুদ্ধির সাথে সংযুক্ত হয়েছে ইসি এবং সিইসির ভীতি ও লোভের আনুগত্য।
সহজেই বোঝা যায়, নির্বাচন কমিশনের লোকেরা যে পর্যায়ে যে প্রক্রিয়ায় মনোনীত হয়েছেন তাতে সরকারি আনুকূল্য রয়েছে। অনেকে বর্তমান সিইসিকে আওয়ামী লীগের দেড় দশকের একজন বড় সুবিধাভোগী বলে চিহ্নিত করতে চান। তবে সিইসি মনোনীত হওয়ার প্রাক্কালে তার সিভিল সার্ভেন্ট হিসেবে কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও সাহসের প্রশংসা করেছিলেন কেউ কেউ। ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী তাদের একজন। ইতোমধ্যে হতাশ হয়ে ডা: জাফরুল্লাহ বলেছেন, যদি না পারেন পদত্যাগ করবেন। দেশের মানুষ আশাবাদী। আশায় আশায় বসতি তাদের। দেশের মানুষ আশা করে, সিইসি সব ভয়ভীতি, লোভ-লালসা ও অন্যায়-অত্যাচারকে অগ্রাহ্য করে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেন। আমরা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আশায় আকুল থাকতে চাই। ‘সত্যই সুন্দর, সুন্দরই সত্য’।
লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
Mal55ju@yahoo.com