আসলে কুশল মেন্ডিস নন, বাংলাদেশের সামনে বাধার দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল তাঁর ‘রাজ-কপাল’!
২ রানে তাসকিন আহমেদের বলে উইকেটের পেছনে মুশফিকুর রহিমের সৌজন্যে বেঁচে গেলেন প্রথমে। ২৯ রানে শেখ মেহেদী হাসানের বলে কট বিহাইন্ড হয়ে ড্রেসিংরুমের পথে হাঁটা ধরেও ফিরলেন। কারণ এই অফস্পিনারের বল ওভারস্টেপিংয়ের জন্য ততক্ষণে ‘নো’ ডাকা হয়েছে। ৩১ রানেও এবাদত হোসেনের বলে কট বিহাইন্ড হয়েও টিকে যান বাংলাদেশ রিভিউ না নেওয়ায়।
৪৪ রানেও আরেক দফা প্রাণ পান তিনি। ক্রিজ থেকে অনেক বাইরে থাকা এই লঙ্কান ব্যাটারকে রানআউটের সহজ সুযোগ মিস করেন সাব্বির রহমান।
চারবার জীবন ফিরে পাওয়া কুশল তাই ফিফটি করে বসলেন। জীবন পেতে পেতে এগিয়ে যেতে থাকা এই ব্যাটার অধিনায়ক দাশুন শানাকাকে নিয়ে পঞ্চম উইকেটে ফিফটি পার্টনারশিপও গড়ে ফেললেন। মনে হতে থাকল যে একসময় উঁকি দিতে থাকা বাংলাদেশের জয়ের সূর্য বোধ হয় অস্তাচলেই যাচ্ছে। কিন্তু দুই দলের জন্যই এশিয়া কাপের সুপার ফোর ভাগ্য নির্ধারণী নকআউট ম্যাচটির নাটকীয়তার তখনো অনেক বাকি। ছিটকে যেতে যেতেও ম্যাচে ফিরল বাংলাদেশ।
এবার ফেরালেন মুস্তাফিজুর রহমান। আফগানিস্তানের কাছে হারের জন্য কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছিল এই পেসারকে। এবার তার কিছুটা ক্ষতিপূরণের মঞ্চ প্রস্তুতই ছিল। সেই মঞ্চে অধিনায়ক সাকিবের চাতুরিও যোগ হলো। মুস্তাফিজের উইকেট তুলে নেওয়া ডেলিভারির ঠিক আগে থার্ডম্যান সীমানায় নিয়ে দাঁড় করানো হলো তাসকিনকে। বাঁহাতি পেসারের স্লোয়ার শর্ট বলে কুশলও (৩৭ বলে ৬০) ক্যাচ দিলেন সেখানেই। তাসকিন সামনে ঝাঁপিয়ে নিলেন দুর্দান্ত ক্যাচ। কিন্তু তখনো আছেন বিধ্বংসী রূপে দেখা দেওয়া শানাকা। ৩৩ বলে ৪৫ রান করা লঙ্কান অধিনায়ককেও একসময় ফেরানো গেল, ফেরালেন শেখ মেহেদী। মাঝখানে ওয়ানিন্দু হাশারাঙ্গাকে তুলে নিয়ে তাসকিনও জয়ের পথ প্রশস্ত করলেন আরো।
কিন্তু বাংলাদেশ ম্যাচে ফিরলেও শেষ পর্যন্ত জিতল না। উঠতে উঠতেও তাই ডুবল জয়ের সূর্য। স্বপ্নের টি- টোয়েন্টি অভিষেকে মুদ্রার দুই পিঠই দেখা এবাদত হোসেন চৌধুরীর শেষ ২ ওভারই গড়ে দিল ম্যাচের ভাগ্য। অথচ নিজের প্রথম ওভারেই জোড়া শিকার ধরেছিলেন এই পেসার। রিভিউ নিলে দ্বিতীয় ওভারেও জোড়া শিকার ধরা হয়ে যায়। নিজের প্রথম ২ ওভারে মাত্র ১২ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেওয়া পেসার পরে বেধড়ক মার খেলেন। শানাকার বিদায়ের আগে এক ওভারে দিলেন ২২ রান, বিদায়ের পরে নিজের শেষ ওভারে দিলেন ১৭! ২ ওভারে খরচ ৩৯ রান! ব্যস, ম্যাচ শেষ সেখানেই।
তাই ২ উইকেটের জয়ে বাংলাদেশকে এশিয়া কাপ থেকে বিদায় করে দেওয়া শ্রীলঙ্কা সুপার ফোরেই উঠল না শুধু, রেকর্ডও গড়ে ফেলল। দুবাই ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ১৮০ রান তাড়া করে জেতার ঘটনা আগে ছিল না একটিও। যদিও এই মাঠে ১৭০ রানকেই যেখানে নিরাপদ বলে মনে হচ্ছিল ধারাভাষ্য দিতে আসা ওয়াসিম আকরামেরও, সেখানে উল্টো হারের বেদনায় নীল বাংলাদেশের বোলারদের দায়ও কম নয়। এমন চাপের ম্যাচে ৪টি নো আর ৮টি ওয়াইড বলের খেসারতও যেন দিতে হলো আসর থেকে বিদায় নিয়ে।
অথচ আগের ম্যাচের বাজে পারফরম্যান্স ভুলে একেবারে খোলনলচে বদলেই নেমেছিল বাংলাদেশ। ওপেনিংয়ে নামায় একেবারে নতুন একটি জুটি। এই ভূমিকায় তিন বছর আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলার সুযোগ পাওয়া সাব্বির রহমান তেমন কিছু করতে না পারলেও পারলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। প্রায় চার বছর পর দেশের হয়ে টি-টোয়েন্টি খেলতে নেমে নিজের ব্যাটিংয়ে মেরে খেলার ইচ্ছাটা টিম ম্যানেজমেন্টকে দেখালেন। ২৬ বলে দুটো করে চার আর ছক্কায় ক্যারিয়ার সেরা ৩৮ রান করা মিরাজের পথে হাঁটলেন মুশফিক (৪) বাদে অন্যরাও।
এমনকি কম স্ট্রাইক রেটের জন্য নিত্য সমালোচিত হয়ে আসা মাহমুদ উল্লাহও (২২ বলে ২৭)। চারটি চার ও দুই ছক্কায় ২২ বলে ৩৯ রান করা আফিফ হোসেনের আগে-পরে সাকিব (২২ বলে ২৪) এবং মোসাদ্দেক হোসেনও (৯ বলে অপরাজিত ২৪) থাকলেন। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৩১ বলে অপরাজিত ৪৮ রানের ইনিংস খেলা এই ব্যাটার তাঁর আরেকটি ক্যামিওতে দলকে ১৮০ পার করে নিয়ে গেলেন।
মনে হতে থাকল যে সুপার ফোরে যাওয়ার লড়াইয়ে অনেকটাই এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। এত রান করে দুবাইয়ে জেতার ঘটনা নেই বলে সেই সম্ভাবনার কথা উচ্চারিত হচ্ছিল আরো বেশি। কিন্তু ম্যাচের আগে দুই দলের বোলিং নিয়ে দুই পক্ষেরই পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে উত্তপ্ত হয়ে যাওয়া টিকে থাকার মঞ্চ থেকে নেমেই যেতে হলো সাকিবের দলকে।