অর্থনীতিকে সচল রেখে অন্যান্য দেশের তুলনায় দ্রুততম সময়ে করোনা মোকাবিলায় উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ। জীবন-জীবিকার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে সঠিক সময়ে ৭০ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। করোনা নিয়ন্ত্রণে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বিশ্বব্যাপী করোনা প্রতিরোধী টিকা ন্যায্যতার সঙ্গে পৌঁছে দিতে গঠিত বৈশ্বিক জোট গ্যাভির ওয়েবসাইটে বৃহস্পতিবার প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে করোনা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের সফলতার গল্প উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যথাসময়ে তিন উদ্যোগের কারণে বাংলাদেশ করোনা মোকাবিলায় উল্লেখযোগ্য সফলতা পেয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন উৎস থেকে দ্রুততম সময়ে টিকাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা, টিকা নিয়ে ব্যাপক প্রচার এবং জনগণের স্বতঃস্ম্ফূর্ত অংশগ্রহণ- এই তিন কারণে মহামারি পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব হয়েছে। কম সময়ে বিপুল জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় আনার পাশাপাশি ইতোমধ্যে ৩৫ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে বুস্টার ডোজ দেওয়া হয়েছে। ৫ থেকে ১১ বছরের শিশুদের টিকা প্রয়োগ শুরু হয়েছে। এসব উদ্যোগে দেশে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে করোনা সংক্রমণ।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয় ২০২০ সালের ৮ মার্চ। এর ১০ দিনের মাথায় প্রথম মৃত্যু হয়। প্রথম দুই মাস পার না হতেই আক্রান্তের সংখ্যা তিন অঙ্কে চলে যাওয়ায় জনসংখ্যার ঘনত্বের কারণে সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন ছিল। তবে বাংলাদেশ সরকার দ্রুতই রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে লকডাউনের কঠোর সিদ্ধান্ত নেয় এবং বেশিরভাগ সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোর জন্য হোম অফিসের কৌশল নেয়। চিকিৎসক সংকট, অবকাঠামোর অপ্রতুলতা সত্ত্বেও সরকারিভাবে পৃথক হাসপাতাল ও ইউনিট স্থাপন করে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা হয়।
এ বিষয়ে রাজধানীতে ২৫০ শয্যা টিবি হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার বলেন, সঠিক সময়ে টিকা নিশ্চিত খুবই চ্যালেঞ্জ ছিল। এ ছাড়া টিকা পরিবহন ও বিতরণের জন্য গ্রামাঞ্চলে কোল্ড স্টোরেজ সুবিধা ছিল না। প্রয়োজনীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষের সংখ্যাও কম ছিল। সীমিত এ সম্পদ নিয়েও টিকা ব্যবস্থাপনায় সরকার দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। স্বল্প জনবল নিয়ে বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীর সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। এ ধরনের ভয়ঙ্কর ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের জন্য প্রস্তুত না থাকলেও ভালোভাবেই তা মোকাবিলা করা গেছে।
ইনস্টিটিউট অব এপিডেমিওলজি ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এএসএম আলমগীর বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে সাফল্যের সবচেয়ে বড় কারণ দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর দলকে ধন্যবাদ জানাতেই হবে। যখন দেশে প্রথম রোগী শনাক্ত হয়, তখন প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নেন। সাধারণ মানুষের জন্য করোনা প্রোটোকল তৈরি করতে সংশ্নিষ্ট বিভাগকে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে নির্দেশ দেন। তিনি টিকা দেওয়ার বিষয়েও খুব সিরিয়াস ছিলেন। শুরু থেকেই যথেষ্ট তহবিল বরাদ্দ করেছিলেন।