নারায়ণগঞ্জের শীর্ষ সন্ত্রাসী সাব্বির আলম খন্দকার হত্যা মামলার আসামিসহ চার হত্যা মামলার আসামি জাকির খাঁনকে গ্রেপ্তার করেছেন র্যাব-১১। এসময় তার কাছ থেকে একটি বিদেশি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। শনিবার দুপুরে র্যাব-১১ এর কার্যালয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১১ এর অধিনায়ক বলেন, নারায়ণগঞ্জের এক সময়ের শীর্ষ সন্ত্রাসী জাকির খাঁনের বিরুদ্ধে চারটি হত্যা মামলাসহ অসংখ্য মামলা রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে এসকল মামলায় তিনি জেল খেটেছেন। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তিনি আরো দুর্ধর্ষ হয়ে ওঠেন। এসময় তিনি নারায়ণগঞ্জ এর দেওভোগ এলাকায় বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী ও মাদকের সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন। একপর্যায়ে দেওভোগ এলাকার অপর শীর্ষ সন্ত্রাসী দয়াল মাসুদকে শহরের সোনার বাংলা মার্কেটের পেছনে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে শহরের ত্রাস হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন। সর্বশেষ ২০০৩ সালে সাব্বির আলম হত্যাকাণ্ডের পরে তিনি দেশ ছেড়ে থাইল্যান্ডে পাড়ি জমান। এসময়ে বিভিন্ন মামলায় বিজ্ঞ আদালতে জাকির খান দোষি সাব্যস্ত হলে বিজ্ঞ আদালত তাকে সাজা প্রদান করেন। এর পর থেকেই গ্রেপ্তার এড়াতে জাকির খান দেশের বাইরে অবস্থান করছিলেন। দীর্ঘদিনের পলাতক এবং সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের গ্রেপ্তারে র্যাব-১১ এর ধারাবাহিক কার্যক্রমের প্রক্রিয়ায় দীর্ঘদিন পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী জাকির খানের বিষয়ে র্যাব-১১ খোঁজ-খবর শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার ভোরে র্যাব-১১ এর নারায়ণগঞ্জের একটি বিশেষ অভিযানে ডিএমপি ঢাকার ভাটারা থানার বসুন্ধরা এলাকা হতে একটি বিদেশি পিস্তলসহ নারায়ণগঞ্জের শীর্ষ সন্ত্রাসী ও সাব্বির হত্যা মামলার অন্যতম আসামি জাকির খানকে গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাব-১১ এর অধিনায়ক আরো জানান, প্রাথমিক অনুসন্ধান ও আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, আসামি জাকির খানের বিরুদ্ধে ১৯৯৪ সালে সন্ত্রাসমূলক অপরাধ দমন বিশেষ আইনে মামলা রয়েছে। ওই মামলায় জাকির খান ১৭ বছরের সাজাপ্রাপ্ত হন। পরবর্তিতে উচ্চ আদালতে তার সাজা কমে আট বছর হলেও তিনি গ্রেপ্তার এড়াতে দেশে ও বিদেশে প্রায় ২১ বছর পলাতক ছিলেন। মূলত ২০০৩ সালে সাব্বির আলম হত্যা মামলায় আসামি হলে তিনি আত্মগোপনে চলে যান। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায়, তিনি দীর্ঘ দিন থাইল্যান্ডে আত্মগোপনে ছিলেন এবং সম্প্রতি ভারত হয়ে তিনি বাংলাদেশে আসেন। এরপর থেকে তিনি পরিচয় গোপন করে ঢাকায় সপরিবারে বসবাস করছিলেন। সেখানে অভিযান চালিয়ে একটি বিদেশি পিস্তলসহ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে র্যাব-১১ এর অধিনায়ক জানান, জাকির খান প্রায় এক বছর ধরে ছদ্মনাম ব্যবহার করে তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাংলাদেশে অবস্থান করছিলেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার সহযোগীদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, পর্যায়ক্রমে তার সহযোগীদের আইনের আওতায় আনা হবে।
বিএনপির সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৯ সালে জাকির খানের রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রবশ করেন। ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর কামালউদ্দিন মৃধার নেতৃত্বে তিনি ১৯৯৪ সালে বিএনপিতে যোগ দেন। জাকির খান এক সময়ে ছিলেন জেলা ছাত্রদলের সভাপতি। পরবর্তিতে বিএনপির রাজনীতিতে জড়ানোর পরই ক্রমশ খলনায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন তিনি।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৬ সালে বিএনপি সরকারের শেষ দিকে জাকির খান শহরের খাজা সুপার মার্কেটে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে জেলে যান। একই বছরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার সাত মাসের মাথায় কাশীপুর বাংলাবাজার এলাকায় এক ঠিকাদারের কাছে চাঁদা দাবির অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় দ্বিতীয় দফায় জাকির খানের পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হয় এবং জেলে যান। ১৯৯৯ সালে স্বল্প সময়ের জন্য জেল থেকে বের হয়ে জাকির খান জেলা ছাত্রদলের সভাপতির পদটি পেয়ে যান।
পরে ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পরও প্রায় পাঁচ মাস জেলে থাকেন জাকির খান। ২০০৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও বিআরটিসির তৎকালীন চেয়ারম্যান তৈমুর আলম খন্দকারের ছোট ভাই ব্যবসায়ী নেতা সাব্বির আলম খন্দকার আততায়ির গুলিতে নিহত হন। এ ব্যাপারে জাকির খানকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন তৈমুর আলম খন্দকার। এরপর জাকির খান নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে পাড়ি জমান থাইল্যান্ডে। পরে আবার তিনি দেশে গোপনে ফিরে আসেন।