শিকাগো থেকে, জুয়েল সাদত
নবদিগন্তের উ্যসব” Festival of New Horizons এই মটো কে সামনে রেখে ৩৬ তম ফোবানার তিনদিন ব্যাপী কনভেনশন ২ রা সেপ্টেম্বর শুরু হয়ে রোবরার ৪ টা সেপ্টেম্বর শিকাগোর স্কোকী বুলভার্ড এর ডাবল ট্রী হিলটন কনভেনশন হলে সম্পন্ন হয়।
এবারের ফোবানার ১ ম দিনে কোন আলোচিত গেষ্ট উপস্থিত ছিলেন না। স্বাগতিক হোষ্ট কমিটির কনভেনর মকবুল আলী আনুষ্ঠানিক ভাবে সকল হোষ্ট কমিটির সদস্যদের নিয়ে শুভ সুচনা করেন।
ফোবানাকে উত্তর আমেরিকার মধ্যে সীমাবদ্ধকরণ এর জন্য এবারের ফোবানায় ছিল না আনুষ্ঠানিকতার কোন নীয়মনীতি।
উদ্ভাধনী বক্তৃতায় কনভেনর মকবুল আলী ও ফোবানার চেয়ারম্যান রেহান রেজা বলেন, যে মটোকে সামনে রেখে ফোবানার গোড়াপত্তন আমরা দেরীতে হলেও সেই লক্ষ কে আগলে রাখব। উত্তর আমেরিকার স্থানীয়,শিল্পীরা ও আমাদের এন্টারপনোররা মুল্যায়িত হয়েছেন।
উদ্ভাধনী অনুস্টানের স্বল্প সময়ের আনুষ্ঠানিকতায় ফোবানরা ঐক্যবদ্ধ ভাবে এগিয়ে যাবে বলে সকলে মত প্রকাশ করেন। মেম্বার সেক্রেটারি মাদুদ রব চৌধুরী ও হোষ্ট সেক্রেটারি সৈয়দ এহসান কোকো বলেন, আমাদের চেষ্টা ছিল গতানুগতিকতার বাহিরে একটি ক্লাসিক ফোবানা উপহার দিব, যেখানে কথা থেকে কাজের পরিচয় মিলবে, সেটা আগামী তিনদিন আপনারা দেখবেন।
বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব শিকাগোল্যান্ড হোষ্ট হিসাবে ৩৬ তম ফোবানা আয়োজক BAC এর মাত্র ২০ জনের হোষ্ট কমিটি ৩৬ তম ফোবানার বিশাল আয়োজন করে। এরকম ছোট আকারের কমিটির কারনে অনেক কিছুতে সমন্বয়হীনতা ছিল । ছিল না কোন প্রগ্রাম সুচি। কখন কোথায় কি হচ্ছে, তা কেউ জানতে পারেন নি। অনুস্টানের ভেনুতে ছিল নানা সাজসজ্জা। সাউন্ড সিস্টেমস এ যারা বাজাচ্ছিলেন তাদের সাথে শিল্পীদের কম্বিনেশন হচ্ছিল না। তবে সায়েরা রেজা, রাসেল খান সহ সব শিল্পীরা তাদের চম্যকার পারফর্মেন্স এ তা কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলেন।
তবে সামগ্রিক বিচারে হোস্ট কমিটি সফলকাম বলা যায়।
উদ্ভাধনী পর্বে বাংলাদেশি পতাকার আদলে লাল সবুজের বেলুন উড়িয়ে উদ্ভাধন করা হয়।
শুক্রবার সন্ধে ৭ টায় ব্লাক টাই ডিনারের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক শুভ সুচনা পায়। রাত সাড়ে আটটায় মুল মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বানী পড়ে শোনান মাসুদ রব চৌধুরী, চীফ গেষ্ট অসুস্থতাজনিত কারনে ১ম দিন আসতে না পারায় মন্ত্রী ইমরান আহমেদ এর বক্তব্য পড়ে শোনান সৈয়দ এহসান।
ডাবল ট্রি হিলটনের বলরুম, হেটেল লবি নানা শহরের ফোবানার সাথে সংশ্লিষ্ট দের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে। ৩৬ তম ফোবানায় ৬০ টি সংগঠন এর শিল্পী রা উপস্থিত ছিলেন।
১ ম দিনের ছোট আকারের উদ্ভাধনী পর্ব এর পর রাসেল, আর জে রিয়া ও সোনিয়ার চম্যকার উপস্থাপনা ফোবানার কালচারাল অনুস্টানের শুভ সুচনা হয়। জাতীয় সংগিত এর পর ছোট বাচচাদের সম্মিলিত নাচের মাধ্যমে তিনদিন ব্যাপী কালারফুল কালচারাল অনুস্টানের সুচনা হয়।
বক্তৃতা পর্ব না থাকায় অনেকেই সাধুবাদ জানান। তবে চারজন আইকন স্পন্সর কে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়, তারা হলেন তামান্না রাব্বানী ( বাংলাদেশ), রেজা রহিম, গোলাম ফারুক ও আবু হানিফ। তারা ফোবানার হোষ্ট কমিটিকে শুভেচ্ছা জানান।
রাত ৯ টা থেকে সাড়ে বারোটা পর্যন্ত চলে কালচারাল পর্ব। ফোবানার নানা কার্মকান্ড স্লাইড শোর মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়। ফোবানার মুল ভেনুতে নানান খাবারের স্টল ও নানা ভেন্ডার দের সরব উপস্থিতি ছিল গোছানো । রাত বাড়তে থাকে নানা শহরের বাংলাদেশীরা আসতে থাকেন।
নাচ গান, কবিতা ও চম্যকার উপস্থাপনা ছিল টাইম মত। কখনও কোন ছন্দপতন ঘটেনি।
বাচ্চাদের চম্যকার কিছু নাচের পর তিন জন মুল শিল্পী মঞ্চে পারফর্ম করেন।
লাবনী দাস চম্যকার পারফর্ম করে মঞ্চ কাপিয়ে তুলেন। ব্যান্ড শিল্পী রাসেল খান ফিডব্যাকের ৬ টি গান পরিবেন করেন, সেই সময়টা ফোবানার শ্রোতারা ৯০ দশকে ফিরে যান।
শেষ দিকে আসেন সায়েরা রেজা, গড গিফটেড ভয়েস সায়েরা রাত ১১ টা থেকে সারে বারোটা পর্যন্ত ফোবাবার দর্শকমহল কে আনন্দিত করে তুলেন।
কাটায় কাটায় রাত ১২.৩০ মিনিটে আনুষ্ঠানিক ১ ম দিনের সমাপ্তি ঘটে।
শিকাগোতে ইসনা সম্মেলন হওয়ায় স্থানীয়দের উপস্থিতি কম ছিল ১ম দিন, তবে ১০ টি ষ্টেটের বাংলাদেশীরা মাতিয়ে রাখেন।
মুসারাত জাবিন সেবার সম্পাদনায় চম্যকার একটি সুভেনীর সকলকে উপহার দেয়া হয়।
এবারের ৩৬ ফোবানার একটি চম্যকার বিষয় হল, কোন আনুষ্ঠানিকতা নাই।
সুভেনীর নিয়ে ও কোন সময়ক্ষেপণ করা হয় নি। বক্তৃতা আলোচনা না থাকায় ফোবানায় কালচারাল অনুস্টানের গতিময়তা ছিল।
১ ম দিনের অনুস্টানের মুল অতিথি মন্ত্রী জনাব ইমরান আহমদ অসুস্থতাজনিত কারনে বাংলাদেশে ও মান্যবর রাষ্ট্রদুত শহিদুল ইসলাম বদলি জনিত কারনে বাংলাদেশে। তবে জর্জিয়ার সিনেটর শেখ রহমান আমন্ত্রিত অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন।
আজ ২ য় দিনে ছিল বিজনেস লাঞ্চ, উইমেন এমপাওয়ার সেমিনার, immigration সেমিনার, ইয়ুথ সেমিনার। রাতে ছিল বিভিন্ন স্টেটের শিল্পীদের নাচ, গান, কবিতা সহ নানা পারফর্মেন্স। শনিবার ৩ রা সেপ্টেম্বর শিকাগোর প্রবাসীদের ছিল উপচেপড়া ভীড়। শনিবার রাতে ফোবানা স্কলারশিপ দেয়া হয়,শিকাগোর দুজন ১০০০ ডলারের স্কলারশিপ অর্জন করেন। ফোবানা চেয়ারম্যান রেহান রাজা জানান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্বাসবিদযালয়ের মেধাবী কয়েকজন ফোবানা স্কলারশিপ পাবেন। আটলান্টার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নাহিদুর রহমান মোন্না আগামী তিন বছর ৫ হাজার ডলার করে স্কলারশিপ স্পন্সর করবেন।
ফোবানার তৃতীয় দিনে ছিল স্টুডেন্ট দের ক্যারিয়ার বিল্ডিং সেমিমার, ফোবানার এ জি এম ও ফোবানার নির্বাচন। ফোবানার এজিম দুপুর ১২.৩০ থেকে তিনটা পর্যন্ত চলে। ফোবানার নানা হিসাব নিকাশ, কনস্টিটিউশন সহ নানা বিষয় আলোচনা হয়। বিকাল চারটা থেকে সাড়ে ৬ টা পর্যন্ত চলে ফোবানার এক্জিকিউটিভ নির্বাচন। ইলেকট্রনিক্স পদ্বতিতে নির্বাচন হয় সুষ্ঠু ভাবে। সেখানে ২০২২ -২০২৩ সালের ফোবানার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন ডক্টর আহসান চৌধুরী হিরো, ভাইস চেয়ারপার্সন মাসুদ রব চৌধুরী, এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি নাহিদুল খান সাহেল, জয়েন্ট এক্জিকিউটিভ সেক্রেটারি আবীর আলমগীর, ট্রেজারার ডক্টর মোহাম্মদ আলী মানিক।
এবারের ফোবানায় ৮ জন আউটস্টেন্ডিং মেম্বার নির্বাচিত হন তারা হলেন আউটস্টান্ডিং মেম্বাররা হলেন-রেহান রেজা, মকবুল এম আলী, সাঈদ আহসান, রবিউল করিম, জসিম উদ্দিন, মোহাম্মাদ এম রহমান, বাবুল হাই ও নুরুল আমিন। মূলমঞ্চে ফোবানার নতুন কমিটির নাম ঘোষনা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ মাহবুব রেজা রহিম ও ১৪ টি সংগঠন নির্বাচিত হয়। কানাডার আরেকটি সংগঠন পরবর্তিতে এড করা হবে, পাশাপাশি একজন আউটসেন্ডিং মেম্বারও যুক্ত করা হবে ।
ফোবানার নির্বাহী কমিটিতে পদ না পেয়ে কিছু দলছুট ব্যক্তি নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য গায়ের জোরে লস অ্যাঞ্জেলেসে ফোবানার নাম ভাঙিয়ে সাংস্কৃতিক ও দলীয় অনুষ্ঠান করেছে। যা সারা আমেরিকাতে ফোবানার ইমেজ নস্ট করেছে, বার্ষিক সাধারন সভায় সকল সংগঠনের নেতারা তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ সময় ফোবানার বিদায়ী চেয়ারপার্সন রেহান রেজা বলেন, ফোবানা একটি অরাজনৈতিক সংগঠন, অথচ পদলোভী বিদ্রোহীরা ফোবানার নাম ব্যবহার করে একটি রাজনৈতিক প্লাটফরম তৈরি করেছেন শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য। তারা নিজেদের ভূল বুঝতে পেরে একদিন আবারও মূল ফোবানায় ফিরে আসবে সেদিন বেশি দূরে নয়। আমরা সবার জন্য দ্বার উন্মুক্ত রেখেছি।
৩৬ তম ফোবানার বিদায়ী সভাপতি রেহান রেজা ফোবানার ৩৬ তম আসরের ভুলভ্রান্তির জন্য দু:খ প্রকাশ করেন। তবে ফোবানার এজিএমে একজন স্পন্সর এর উপস্থিতি অনেককে বিভ্রত করে। একটি কনফিডেনসিয়াল মিটিং এ কোন স্পন্সর উপস্থিত হবার নজির নেই অতিতে। এরকম ঘটলে আগামীতে অনেক স্পন্সর এ জি এম স্থান করে নিবেন।
তৃতীয় দিনে রাত নয়টায় ফোবানার মঞ্চে নতুন কমিটির সকলকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। ৩৭ তম ফোবানার হোস্ট কমিটির কনভেনর হাসমত মোবিন ও তার টীম সকলকে ডালাস ফোবানায় আহবান জানান।
আগামী ২০২৪ সালের ৩৮তম ফোবানা সম্মেলনের হোষ্ট কমিটি নির্বাচন করা হয়। আগামী ৩৮তম ফোবানা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে ওয়াশিংটন ডিসিতে। উক্ত সম্মেলনের আয়োজক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়াশন অব গ্রেটার ওয়াশিংটন ডিসি, বাগডিসি এবং আহবায়কের দায়িত্ব পেয়েছেন রোকসানা পারভীন।
শেষ দিনে ছিল বাঙালী ফোক সং,ব্যান্ড সং,সলো এন্ড গ্রুপ সং, নজরুল এর শ্রুতি নাট্য, ফোবানার ফ্লাগ হস্তান্তর। ফোবানার বিভিন্ন সংগঠনের নানান পরিবেশনার পর ফাহমিদা নবী ও শুভ্র দেবের পরিবেশনা ফোবানার মুল মঞ্চকে মাতিয়ে রাখে।
শেষ দিনের ফোবানার ভেনুতে ছিল গ্রুপে গ্রুপে আড্ডা ও এক বছরের বিদায়ের পালা। ডাবল ট্রি হিলটনের ফোবানার মুল মঞ্চের বাহিরে নানা স্টল গুলোতে মহিলারা ছিলেন নানান রকম কেনাকাটায় ব্যা্স্ত। খাবারের একটি মাত্র স্টল থাকলেও খাবারের কোন কমতি ছিল না। পান সুপারী, মুড়ি চানাচুর সবই চিল ভেন্যুতে। কনভেনর মকবুল আলী ও সেক্রেটারি সৈয়দ এহসান কোকো চেষ্টা করেছেন সুন্দর ও পরিছন্ন ফোবানা উপহার দেবার। সামগ্রিক অর্থে তারা সফল। ফোবানা নিয়ে নানা মিথ প্রচলিত, তবে মুল ফোবানা একটি। ফোবানা একটি ফরমেটে চলে। দুবছরের হোষ্ট কমিটি আাগাম নির্বাচিত হন। হুট করে ফোবানা করা যায় না ।
রবিবার ফোবানার সমাপনি দিবসে রাত সাড়ে ৯ টার সময় যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ৫ জন সাংবাদিককে ফোবানা পুরুস্কার প্রদান করা হয়। এরা হলেন বর্ণমালা সম্পাদক মাহফুজুর রহমান, প্রথম আলোর জুয়েল সাদত, সাপ্তাহিক আজকালের সম্পাদক জাকারিয়া মাসুদ জিকু, এনটিভির যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি পুলক মাহমুদ ও বাংলা প্রেস সম্পাদক ছাবেদ সাথী ।
এবারের ফোবানা নতুন এক্জিকিউটিভ কমিটি নতুনত্বে পুর্ন। বিশেষ করে ফোবানা চেয়ারপার্সন ডক্টর আহসান চৌধুরী হিরো ও এক্জিকিউটিভ সেক্রেটারি নাহিদুল খান সাহেল এর নতুন নেতৃত্বে ফোবানা গতিময়তা পাবে বলে সবার ধারনা। এবারের ফোবানার তিন দিনের আসরে সব কিছুতে পরিছন্নতার ছাপ ছিল। সময় মত শুরু না হলেও রাত ১২. ৩০ মিনিটে কালচারাল অনুস্টানের সমাপ্তী ঘটে।
৩৬ তম ফোবানার কনভেনর জনাব মকবুল আলী, তার সমাপনি বক্তৃব্যে সকলকে ধন্যবাদ জনান। তিনি তার টীমের সেক্রেটারি সৈয়দ আহসান কোকেো সহ সকলের সহযোগীতায় স্বল্প সময়ে একটি মান সম্পন্ন ফোবানা উপহার দেবার চেষ্টা করেছেন বলে জানান। তিনি সকল স্পন্সর ও ফোবানা শুভাকাঙ্ক্ষীদের ধন্যবাদ জানান।