মাত্র তিনশ ডলারের পুরস্কার জেতা শিল্পকর্ম সামনে ঠেলে দিয়েছে মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন। প্রথম আর্ট কম্পিটিশনে অংশ নিয়েই বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন গেম নির্মাতা জেসন অ্যালেন। প্রথম পুরস্কার জিতেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) প্রযুক্তির সহযোগিতা নিয়ে তার তৈরি একটি ছবি। প্রশ্ন উঠেছে, এআই দিয়েই যদি শিল্প হয়, তবে সাধ্যসাধনা করে শিল্পী হওয়ার মানে কী?
মিডজার্নির সহযোগিতা নিয়ে বানানো চিত্রকর্ম দিয়ে কলোরাডোর আর্ট কম্পিটিশনে তিনশ ডলারের প্রথম পুরস্কার জেতার পর অ্যালেন মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে বলেন, আমি এ ছবিতে মুগ্ধ। আমি এটা ভালোবাসি এবং আমি মনে করি সবারই এটা দেখা উচিত।
সমালোচকরা বলছেন, রেনেসাঁ আর স্টিমপাংক ধাঁচের উপস্থিতির ইঙ্গিত দিচ্ছে অ্যালেনের ছবি, পরাবাস্তবতার অনুভূতি সৃষ্টি করছে দর্শকের মনে। প্রতিযোগিতায় এমন ‘এআই জেনারেটেড’ চিত্রকর্ম ছিল তিনটি। সবমিলিয়ে ১১জন শিল্পী ১৮টি ছবি জমা দিয়েছিলেন উদীয়মান শিল্পী বিভাগে।
প্রতিযোগিতার এ বিভাগটির সংজ্ঞাতেই বলা ছিল ‘ডিজিটাল আর্ট’ হচ্ছে এমন শিল্পকর্ম যার সৃষ্টিতে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহযোগিতা নিয়েছেন শিল্পী। বাজারের একমাত্র এআই ইমেজ জেনারেটর নয় ‘মিডজার্নি’, আরো আছে গুগল রিসার্চের ‘ইমাজেন’ এবং ওপেন এআইয়ের ‘ডাল-ই টু’। ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং সেবা ডিসকর্ডের মাধ্যমে মিডজার্নি ব্যবহার করতে পারেন যে কেউ। ‘ডাল-ই টু’ ব্যবহার করতে বিশেষ আমন্ত্রণপত্র পেতে হয় আগ্রহী ব্যক্তিকে। আর ‘ইমাজেন’-কে এখনো জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়নি গুগল।
অ্যালেন ডিসকর্ডের মিডজার্নির সার্ভারে প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার জেতার খবর জানিয়েছেন ২৫ আগস্ট। এরপরেই খেপেছেন শিল্পীরা। একজন শিল্পী টুইট বার্তায় লিখেছেন, এটা একেবারেই ভালো হচ্ছে না। কারণ ঠিক এ কারণেই আমরা রোবটদের অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করতে দেই না। এটা হচ্ছে কয়েকটা বাটন চেপে ডিজিটাল শিল্পকর্ম বানানোর আক্ষরিক উদাহরণ। এআইয়ের শিল্পকর্ম হচ্ছে ডিজিটাল দুনিয়ার ‘দেয়ালের সঙ্গে স্কচটেপ দিয়ে লাগানো কলা’- টুইট করেছেন আরেক ব্যবহারকারী।
অ্যালেন চিত্রকর্ম তৈরিতে রঙ তুলি ব্যবহার না করলেও কাজের কোনো কমতি ছিল না বলে জানিয়েছে সিএনএন। বিষয়টা মোটেই কিছু শব্দজুড়ে দিয়ে প্রতিযোগিতা জেতার মতো ছিল না-বলেন ওই গেম নির্মাতা। প্রতিযোগিতায় জমা দেয়া তিনটি ছবি তৈরি করতে ৮০ ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছিল বলে জানিয়েছে অ্যালেন।
প্রথমে ভিক্টোরিয়ান ধাঁচের পোশাক আর স্পেসস্যুটের হেলমেট মাথায় নারীদের ছবি তৈরি চেষ্টা করেন অ্যালেন। কার্যত ভিক্টোরিয়ান ধাঁচের সঙ্গে মহাকাশের নভোচারীদের দৃশ্যায়নের মিশেল করার চেষ্টা করছিলেন তিনি। শেষ তিনটি ছবির আগে আরো নয়শ সংস্করণ তৈরি করেছিলেন অ্যালেন। পরে ফটোশপে ছবিগুলোকে আরো প্রসেস করেন তিনি। তারপর ছবির রেজুলিউশন বাড়াতে গিগাপিক্সেল এআই নামের আরেকটি সফটওয়্যার ব্যবহার করেন।
তবে, তার ছবির কারণে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে তাকে ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখছেন অ্যালেন। প্রযুক্তি বা তার পেছনের মানুষগুলোকে ঘৃণা করার বদলে আমাদের এটা বোঝা উচিত যে, এটি খুবই শক্তিশালী একটি টুল।