দেহের বাঁকে বাঁকে বয়সের ভাঁজ। জোড়া চোখে বেদনার ছায়া। ছয় মেয়ে, এক ছেলে আর প্রিয়তমা স্ত্রীকে নিয়ে বিরাট সংসার। এ বয়সে এত বড় বোঝা টানার সাধ্য কিংবা সাহস কোনোটাই নেই তাঁর। ছোট দুই মেয়েকে বিয়ের পিঁড়িতে বসানোই তাঁর একমাত্র আরাধনা। মনমন্দিরে সর্বদা তাই দুশ্চিন্তার আনাগোনা। সঞ্চয়ের টাকা খোয়ানোর চোরাবালিতে পড়ে এখন একরকম দিগ্ভ্রান্ত, বাকশূন্য মোহাম্মদ আলী।
দুই মেয়ের বিয়েটা ঠিকঠাক সারতে কয়েক বছর ধরে টাকা সঞ্চয়ের পথে হাঁটছিলেন তিনি। এ জন্য মোহাম্মদ আলী বিশ্বস্ত ভেবেছিলেন রাজধানীর মিরপুরের আহমেদিয়া ফাইন্যান্স অ্যান্ড কমার্স লিমিটেডকে। সেখানে ছয় বছরে জমেও যায় সাড়ে ৫ লাখ টাকা। তবে বছরখানেক আগে ওই প্রতিষ্ঠান থেকে জমানো টাকা তুলতে গিয়ে বড় ধাক্কা খান এই বৃদ্ধ। চলতে থাকে আহমেদিয়া ফাইন্যান্সের নানা ছলনা, রকমারি চাতুরী। মোহাম্মদ আলীর মতো শত শত মানুষ আহমেদিয়া ফাইন্যান্স লিমিটেডের ধান্দাবাজির ফাঁদে পড়ে এখন কিংকর্তব্যবিমূঢ়!
টাকা ফেরতের দাবিতে গত সোমবার রাত থেকে মিরপুর ১৪ নম্বরে ওই প্রতিষ্ঠানটির সামনে অনেকে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবরুদ্ধও করেন তাঁরা। এ সময় আহমেদিয়া ফাইন্যান্সের মহাব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলামকেও বিক্ষোভকারীরা অবরুদ্ধ করে রাখেন। তবে লাপাত্তা প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার ইউরোস্টার গ্রুপের মালিক মনির আহমেদ।
বিক্ষোভ চলাকালে মোহাম্মদ আলী চোখের জল লুকানোর চেষ্টা করছিলেন বারবার। মুষড়েও পড়েন খানিকটা। হতাশ কণ্ঠে বলেন, ‘এমন ফাঁদে পড়ব, স্বপ্নেও ভাবিনি। টাকা ফেরত না পেলে মেয়েদের বিয়েশাদির কী হবে, বুঝতে পারছি না। প্রশাসন যেন টাকা পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়। গত ডিসেম্বরে টাকা দেওয়ার কথা ছিল। এর পরও থেকে শুধু ঘুরাচ্ছে।’
ভুক্তভোগীরা জানান, ১৫ বছর ধরে দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক বিভিন্ন উপায়ে সঞ্চয়পত্র ও এফডিআরের মাধ্যমে টাকা সংগ্রহ করে আসছিল আহমেদিয়া ফাইন্যান্স। শুরুতে লভ্যাংশ ও মুনাফার কিছু টাকা গ্রাহকদের দেওয়া হলেও ধীরে ধীরে প্রতারণার খেলায় মাতে। প্রতিষ্ঠানটি কয়েকশ গ্রাহকের অন্তত ২০০ কোটি টাকার মতো তুলেছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির মালিকপক্ষ পুলিশের কাছে দাবি করেছে, তারা তুলেছে ৯৮ কোটি টাকা। এই নগদ টাকা দিয়ে জমি ও ফ্ল্যাট কিনে বিনিয়োগ করা হয়েছে। এ কারণে গ্রাহকের চাহিদামতো টাকা ফেরত দিতে পারছে না। করোনার কারণে তারা ব্যবসায়ও মার খেয়েছে।
জানা গেছে, একসময় এই প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয় ছিল ভাসানটেকের কচুক্ষেত বাজারে। পরে তারা ১৪ নম্বরে নিজস্ব ভবন তৈরি করে। আহমেদিয়া ফাইন্যান্স থেকে টাকা স্থানান্তর করে ইউরোস্টারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যারা প্রতারিত তাদের অধিকাংশই অবসারপ্রাপ্ত চাকরিজীবী। পোস্ট অফিস ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বেশি লাভের টোপ ফেলে পেনশনের টাকা সেখানে রাখতে ফাঁদ পাতে প্রতিষ্ঠানটি। আহমেদিয়া ফাইন্যান্সের পক্ষে বজলুর রহমান নামে এক ব্যক্তি অধিকাংশ ব্যক্তিকে প্রতারিত করেন। প্রতিষ্ঠানটির ফাঁদে পড়ে কারও ভেঙেছে সংসার, কেউ চিকিৎসা করাতে না পেরে হারিয়েছেন সন্তান। কেউ কেউ টাকা চাইতে এসে শিকার হয়েছেন মারধরের।
গ্রাহক এনায়েতুল্লাহ জানান, তাঁর পরিবার ওই প্রতিষ্ঠানে ৬৩ লাখ টাকা জমা করেছেন। প্রথম দিকে নিয়মিত লভ্যাংশ দেওয়া হতো। পরে করোনার অজুহাতে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এখন তারা পাওনা টাকাও ফেরত দিচ্ছে না। তাঁর দাবি, কয়েক হাজার মানুষ এই প্রতিষ্ঠানে টাকা দিয়ে প্রতারিত হয়েছেন। পাওনা টাকার জন্য বাধ্য হয়ে তাঁরা বিক্ষোভে নেমেছেন। মামলা করলে টাকা ফেরত পাওয়া দুস্কর। তবে শতাধিক সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন ভুক্তভোগীরা।
শরবত বিক্রি করে তিল তিল করে পাঁচ বছর ধরে টাকা জমিয়েছেন আবদুল কুদ্দুস। ভেবেছিলেন এই টাকা দিয়ে অনুষ্ঠান করে মেয়েকে পাঠাবেন শ্বশুরবাড়ি। তিনি বলেন, জানুয়ারিতে আমার টাকাটা দেওয়ার কথা ছিল। সেই হিসেবে আমি মেয়ের বিয়ে দিই। তবে এখনও টাকাটা পাইনি। অফিসে এলে শুধু আজ না কাল, কাল বা পরশু- এ রকম করে হয়রানি করা হচ্ছে। এ কারণে মেয়েকে এখনও শ্বশুরবাড়িতে তুলে দিতে পারিনি।
কাফরুল থানার ওসি হাফিজুর রহমান বলেন, প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে অনেকে নিঃস্ব। ভুক্তভোগীদের মামলা করার পরামর্শ দিয়েছি। তবে মামলা করলে টাকা পাওয়া যাবে না- এমন আশঙ্কা তাঁদের।
দেহের বাঁকে বাঁকে বয়সের ভাঁজ। জোড়া চোখে বেদনার ছায়া। ছয় মেয়ে, এক ছেলে আর প্রিয়তমা স্ত্রীকে নিয়ে বিরাট সংসার। এ বয়সে এত বড় বোঝা টানার সাধ্য কিংবা সাহস কোনোটাই নেই তাঁর। ছোট দুই মেয়েকে বিয়ের পিঁড়িতে বসানোই তাঁর একমাত্র আরাধনা। মনমন্দিরে সর্বদা তাই দুশ্চিন্তার আনাগোনা। সঞ্চয়ের টাকা খোয়ানোর চোরাবালিতে পড়ে এখন একরকম দিগ্ভ্রান্ত, বাকশূন্য মোহাম্মদ আলী।
দুই মেয়ের বিয়েটা ঠিকঠাক সারতে কয়েক বছর ধরে টাকা সঞ্চয়ের পথে হাঁটছিলেন তিনি। এ জন্য মোহাম্মদ আলী বিশ্বস্ত ভেবেছিলেন রাজধানীর মিরপুরের আহমেদিয়া ফাইন্যান্স অ্যান্ড কমার্স লিমিটেডকে। সেখানে ছয় বছরে জমেও যায় সাড়ে ৫ লাখ টাকা। তবে বছরখানেক আগে ওই প্রতিষ্ঠান থেকে জমানো টাকা তুলতে গিয়ে বড় ধাক্কা খান এই বৃদ্ধ। চলতে থাকে আহমেদিয়া ফাইন্যান্সের নানা ছলনা, রকমারি চাতুরী। মোহাম্মদ আলীর মতো শত শত মানুষ আহমেদিয়া ফাইন্যান্স লিমিটেডের ধান্দাবাজির ফাঁদে পড়ে এখন কিংকর্তব্যবিমূঢ়!
টাকা ফেরতের দাবিতে গত সোমবার রাত থেকে মিরপুর ১৪ নম্বরে ওই প্রতিষ্ঠানটির সামনে অনেকে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবরুদ্ধও করেন তাঁরা। এ সময় আহমেদিয়া ফাইন্যান্সের মহাব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলামকেও বিক্ষোভকারীরা অবরুদ্ধ করে রাখেন। তবে লাপাত্তা প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার ইউরোস্টার গ্রুপের মালিক মনির আহমেদ।
বিক্ষোভ চলাকালে মোহাম্মদ আলী চোখের জল লুকানোর চেষ্টা করছিলেন বারবার। মুষড়েও পড়েন খানিকটা। হতাশ কণ্ঠে বলেন, ‘এমন ফাঁদে পড়ব, স্বপ্নেও ভাবিনি। টাকা ফেরত না পেলে মেয়েদের বিয়েশাদির কী হবে, বুঝতে পারছি না। প্রশাসন যেন টাকা পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়। গত ডিসেম্বরে টাকা দেওয়ার কথা ছিল। এর পরও থেকে শুধু ঘুরাচ্ছে।’
ভুক্তভোগীরা জানান, ১৫ বছর ধরে দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক বিভিন্ন উপায়ে সঞ্চয়পত্র ও এফডিআরের মাধ্যমে টাকা সংগ্রহ করে আসছিল আহমেদিয়া ফাইন্যান্স। শুরুতে লভ্যাংশ ও মুনাফার কিছু টাকা গ্রাহকদের দেওয়া হলেও ধীরে ধীরে প্রতারণার খেলায় মাতে। প্রতিষ্ঠানটি কয়েকশ গ্রাহকের অন্তত ২০০ কোটি টাকার মতো তুলেছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির মালিকপক্ষ পুলিশের কাছে দাবি করেছে, তারা তুলেছে ৯৮ কোটি টাকা। এই নগদ টাকা দিয়ে জমি ও ফ্ল্যাট কিনে বিনিয়োগ করা হয়েছে। এ কারণে গ্রাহকের চাহিদামতো টাকা ফেরত দিতে পারছে না। করোনার কারণে তারা ব্যবসায়ও মার খেয়েছে।
জানা গেছে, একসময় এই প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয় ছিল ভাসানটেকের কচুক্ষেত বাজারে। পরে তারা ১৪ নম্বরে নিজস্ব ভবন তৈরি করে। আহমেদিয়া ফাইন্যান্স থেকে টাকা স্থানান্তর করে ইউরোস্টারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যারা প্রতারিত তাদের অধিকাংশই অবসারপ্রাপ্ত চাকরিজীবী। পোস্ট অফিস ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বেশি লাভের টোপ ফেলে পেনশনের টাকা সেখানে রাখতে ফাঁদ পাতে প্রতিষ্ঠানটি। আহমেদিয়া ফাইন্যান্সের পক্ষে বজলুর রহমান নামে এক ব্যক্তি অধিকাংশ ব্যক্তিকে প্রতারিত করেন। প্রতিষ্ঠানটির ফাঁদে পড়ে কারও ভেঙেছে সংসার, কেউ চিকিৎসা করাতে না পেরে হারিয়েছেন সন্তান। কেউ কেউ টাকা চাইতে এসে শিকার হয়েছেন মারধরের।
গ্রাহক এনায়েতুল্লাহ জানান, তাঁর পরিবার ওই প্রতিষ্ঠানে ৬৩ লাখ টাকা জমা করেছেন। প্রথম দিকে নিয়মিত লভ্যাংশ দেওয়া হতো। পরে করোনার অজুহাতে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এখন তারা পাওনা টাকাও ফেরত দিচ্ছে না। তাঁর দাবি, কয়েক হাজার মানুষ এই প্রতিষ্ঠানে টাকা দিয়ে প্রতারিত হয়েছেন। পাওনা টাকার জন্য বাধ্য হয়ে তাঁরা বিক্ষোভে নেমেছেন। মামলা করলে টাকা ফেরত পাওয়া দুস্কর। তবে শতাধিক সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন ভুক্তভোগীরা।
শরবত বিক্রি করে তিল তিল করে পাঁচ বছর ধরে টাকা জমিয়েছেন আবদুল কুদ্দুস। ভেবেছিলেন এই টাকা দিয়ে অনুষ্ঠান করে মেয়েকে পাঠাবেন শ্বশুরবাড়ি। তিনি বলেন, জানুয়ারিতে আমার টাকাটা দেওয়ার কথা ছিল। সেই হিসেবে আমি মেয়ের বিয়ে দিই। তবে এখনও টাকাটা পাইনি। অফিসে এলে শুধু আজ না কাল, কাল বা পরশু- এ রকম করে হয়রানি করা হচ্ছে। এ কারণে মেয়েকে এখনও শ্বশুরবাড়িতে তুলে দিতে পারিনি।
কাফরুল থানার ওসি হাফিজুর রহমান বলেন, প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে অনেকে নিঃস্ব। ভুক্তভোগীদের মামলা করার পরামর্শ দিয়েছি। তবে মামলা করলে টাকা পাওয়া যাবে না- এমন আশঙ্কা তাঁদের।