শেষ ওভার থেকে ১১ রান প্রয়োজন, স্ট্রাইকে দলের দশ নম্বর ব্যাটসম্যান। বল হাতে তৈরি আফগানিস্তানের সাড়া জাগানো পেসার ফজলহক ফারুকি। পাকিস্তানের পাঁড় ভক্তের পক্ষেও তখন জয়ের স্বপ্ন হয়ত দুরাশায় পরিণত হয়েছে। ঠিক তখনই পেসার নাসিম শাহ পুরোদস্তুর ব্যাটসম্যান বনে গেলেন, পরপর দুই বলে লং অফের ওপর দিয়ে শূন্য ভাসিয়ে বল সীমানাছাড়া করে রূপকথার জয় এনে দিলেন পাকিস্তানকে।
শেষ ওভারে নাসিম শাহর অতিমানবীয় ব্যাটিং দেখে সাধারণ ক্রিকেটপ্রেমীদের মতো বিস্ময়ের ঘোর কাটছিল না পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজমেরও। নাসিমের ম্যাচ জেতানো দুই ছক্কা কিংবদন্তি জাভেদ মিয়াঁদাদের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে পাক অধিনায়ককে, ‘আমরা সাজঘরে খুব চাপের মধ্যে ছিলাম। ভাল জুটি তৈরি করতে পারিনি আমরা। শেষ কয়েকটা ম্যাচেও এই সমস্যা হয়েছে। কিন্তু নাসিম যে ভাবে ম্যাচ শেষ করল, এক কথায় দুর্দান্ত। ওর ছয় দেখে শারজায় জাভেদ মিয়াঁদাদের সেই বিখ্যাত ছক্কার কথা মনে পড়ছে।
এখন থেকে ৩৬ বছর আগে শারজায় অস্ট্রালেশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে জয়ের জন্য শেষ বল থেকে ৪ রান প্রয়োজন ছিল পাকিস্তানের। মিয়াঁদাদ চার নয়, শেষ বলে ছক্কা হাঁকিয়ে পাকিস্তানকে এনে দিয়েছিলে শিরোপা। পাক-ভারত দ্বৈরথের দৃশ্যপট বদলে দেওয়া সেই ছক্কা হাঁকিয়ে ভোঁ দৌড় দিয়েছিলেন মিয়াঁদাদ। নাসিম শাহও অবিশ্বাস্য দুই ছক্কা হাঁকিয়ে দৌড়ে গিয়ে সতীর্থদের সঙ্গে উন্মাতাল উদযাপনে যোগ দেন। তার এই দুই ছয়ে অবশ্য শিরোপা হয়নি পাকিস্তানের, ফাইনাল নিশ্চিত হয়েছে।
তাহলে কেন মিয়াঁদাদের সেই অমর ছক্কার সঙ্গে একই ছত্রে আলোচনায় আসছে নাসিমের দুই ছক্কা? কারণটা সহজ, পোড় খাওয়া ব্যাটসম্যান মিয়াঁদাদের শেষ বলের ছক্কায় শিরোপা জয় আর একজন দশ নম্বর ব্যাটসম্যানের (যিনি প্রকৃতপক্ষে একজন বোলার) টানা দুই ছক্কা হাঁকিয়ে ম্যাচ জয়ের রোমাঞ্চকে আলাদা করার খুব বেশি সুযোগ নেই। ৩৬ বছর আগের সেই ছক্কা আর নাসিমের দুই ছক্কা ক্রিকেটপ্রেমীদের বিস্মিত করেছে, রোমাঞ্চিত করেছে, সর্বোপরি গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেটের শোভা বাড়িয়েছে।