বাল্যকালে কোনো কোনো শিশুর বোধবুদ্ধি কম থাকে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবারের ঘাটতি। শিশুর কিছু নিয়মিত পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার দৈহিক ও মানসিক বিকাশে সাহায্য করে থাকে। তবে এটাও ঠিক, সব খাবারে একই পুষ্টিগুণ থাকে না, এমন কিছু খাবার আছে যার মধ্যে অনেক বেশি পুষ্টিগুণ বিদ্যমান।
এ বিষয়ও দেখতে হবে যে ছোট বাচ্চাদের পাকস্থলি ছোট থাকে তাই তাদের পেট অল্পতেই ভরে যায়। এক্ষেত্রে আপনাকে চেষ্টা করতে হবে অল্প পরিমাণ খাদ্য দিয়ে কীভাবে বেশি করে পুষ্টি দিতে পারেন।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন বিআরবি হাসপাতালের পুষ্টিবিদ ইসরাত জাহান।
পনির প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিসমৃদ্ধ একটি দুধজাতীয় খাবার। এতে আছে প্রচুর আমিষ এবং ক্যালসিয়াম, যা সুস্থ হাড় ও দাঁতের জন্য আবশ্যক।
একই সঙ্গে পনির মুখের ভেতর যে অ্যাসিড দাঁতের ক্ষয়ের জন্য দায়ী, সেগুলোকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। সুতরাং এ খাবার শিশুর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। মস্তিষ্ক মানবদেহের অন্যান্য অংশের বিকাশ ও সঠিক পরিচালনা অনেকাংশেই নির্ভর করে। শিশুকালেই এ অতি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটির উপযুক্ত বিকাশ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। জেনে নেই মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়াতে সন্তানকে কোন খাবারগুলো খেতে দেয়া বেশি দরকার।
মায়ের দুধ : শিশুকে অন্তত ছয় মাস বুকের দুধ খাওয়ানো উচিত। কারণ মায়ের দুধ পান করলে শিশুর বুদ্ধিমত্তা বাড়ে। ব্রাজিলের একদল গবেষক সাড়ে ৩ হাজার শিশুর ওপর দীর্ঘদিন নজর রাখার পর এ সিদ্ধান্তে আসেন।
শাকসবজি : কিছু কিছু শাকসবজিও রয়েছে যেগুলো শিশুর মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায়। পাতাকপি ও পালংশাকে রয়েছে উচ্চ মাত্রায় ভিটামিন কে এবং বিটা ক্যারোটিন। যা শিশুর স্মৃতিশক্তি বাড়ায়। পুষ্টিগুণে গুণান্বিত টমেটো। এটি মস্তিষ্কের শক্তি বৃদ্ধি ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। প্রতিদিন শিশুকে সালাদে নানাভাবে টমেটো খাওয়াতে চেষ্টা করুন।
ডিম : ডিম খাওয়া নিয়ে প্রায় শিশুদেরই অনীহা থাকে। অনীহা থাকলেও শিশুকে প্রতিদিন অন্তত একটি ডিম খাওয়াতে চেষ্টা করুন। গবেষণায় দেখা যায়, যারা প্রতিদিন অন্তত একটি ডিম খায় তাদের স্মৃতিশক্তি অন্যদের তুলনায় অন্তত ৭০ ভাগ বেশি ভালো থাকে। ডিমে রয়েছে প্রচুর আয়রন। যা লোহিত কণিকা তৈরি করে রক্তের উপাদানে সঠিক মাত্রা বজায় রাখে। এতে মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ হয়। যা চিন্তাশক্তি ও বুদ্ধিমত্তা বাড়ায়।
সামুদ্রিক মাছ ও মাছের তেল : মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সামুদ্রিক মাছ কার্যকরী ভূমিকা রাখে। মস্তিষ্কে থাকা ফ্যাটি এসিডের ৪০ ভাগ হচ্ছে ডিএইচএ, যা সামুদ্রিক ও মাছের তেলে পাওয়া যায় ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড হিসেবে। এ ধরনের যৌগিক উপাদান অন্য খাবারে পাওয়া সম্ভব নয়। তাই শিশুর বয়স এবং দেহের গঠন অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমাণে সামুদ্রিক মাছ ও মাছের তেল সপ্তাহে অন্তত ৩ দিন খাওয়াতে চেষ্টা করুন।
কলা : কলা এমন একটি ফল, যাতে আছে প্রচুর পরিমাণে বলকারক কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা। সকালে নাস্তার কিছু সময় পর হালকা স্ন্যাক হিসেবে একটি কলা খেলে আপনার বাচ্চাটি সকালজুড়েই তার শক্তি ধরে রাখতে পারবে। ফলে যে কোনো কাজে তার মনোযোগ দেয়ার ক্ষমতাও বাড়বে। তাই টুকিটাকি স্ন্যাক হিসেবে সন্তানের ব্যাগে চিপস বা বিস্কিটের প্যাকেটের বদলে একটি কলা দিয়ে দিন।
শুকনো ফল : যেসব ফল শুকিয়ে রাখা যায় সেগুলোতে থাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। এগুলো হল ব্যাপক শক্তির উৎস। তাই শিশুদের শুকনো ফল খাওয়ানোর অভ্যাস করতে হবে। তাহলে শিশুর মেধা বিকাশে অনেক প্রসারতা লাভ করবে। মায়েদের উচিত চকলেট খেতে না দিয়ে শুকনা ফল দেয়ার অভ্যাস করানো। এতে শিশুর দাঁতও ভালো থাকবে।
পনির : ফ্যাট কম, ফাইবার বেশি এ ধরনের খাদ্য গ্রহণের গাইডলাইন বড়দের জন্য, ছোটদের জন্য নয়। শিশুদের বর্ধিষ্ণু দেহের জন্য দরকার তুলনামূলক বেশি ফ্যাট ও কম শর্করা। এতে তারা দেহে বেশি শক্তি পায় এবং বিভিন্ন কাজ অনেক ভালোভাবে করতে পারে।
বাদাম : শিশুকে প্রতিদিনই কয়েকটি করে বাদাম খেতে দিন। কারণ বাদামে রয়েছে ভিটামিন ‘ই’ যা মস্তিষ্কের সমন্বয় সাধনের ক্ষমতা বাড়ায়। কাজুবাদাম, পেস্তা বাদাম, চীনাবাদামসহ যে কোনো ধরনের বাদামই শিশুর মানসিক বৃদ্ধিতে সহায়ক।
কালোজাম : কালোজামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস যা ক্ষতির হাত থেকে হার্ট ও মস্তিষ্ককে বাঁচায়। একই সঙ্গে হার্টে রক্ত সঞ্চালনও বাড়িয়ে দেয় এ ফলটি। তাই শিশুর প্রতিদিন ১-২টা করে কালোজাম খেতে দিতে চেষ্টা করবেন।
লাল আপেল : আপেলের খোসায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস। এছাড়া এতে রয়েছে এমন উপাদান যা মস্তিষ্ককে ক্ষুরধার করার পাশাপাশি হৃদরোগের আশঙ্কা কমায়। আপেল অনেক শিশু খেতে ভালোবাসে, তাই শিশুকে আপেল খেতে দেবেন বেশি করে।
কুমড়ার বীজ : কুমড়া যেমন উপকারী তেমনই এর বীজে রয়েছে নানা খনিজ ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড যা কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় ও মস্তিষ্ককে ক্ষুরধার করে তোলে। সুতরাং কুমড়ার বীজ না ফেলে দিয়ে শিশুকে ভেজে দিতে চেষ্টা করবেন।
মধু : স্বাস্থ্য সংক্রান্ত উপকারিতায় কোনো খাবার সম্ভবত মধুকে টেক্কা দিতে পারবে না। সব রোগের নিরাময় করতে মধু প্রয়োজন হয়। এতে রয়েছে নানা ধরনের ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস, পটাশিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেশিয়াম ইত্যাদি। হার্ট ও মস্তিষ্কের জন্যও মধু একই রকম প্রয়োজনীয়।