চিকন ইটে নির্মিত দেয়ালে নকশা করা পৌনে ৩০০ বছরের পুরাতন স্থাপত্য ঐতিহাসিক ‘আওকরা মসজিদ’ আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। এটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের আওতায় নিলেও এখনো এর সংস্কার বা পুনর্নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তবে প্রতিদিনই অনেকে এ মুসলিম স্থাপত্যটি দেখতে যায়।
দিনাজপুরের খানসামার মীর্জার মাঠ এলাকায় এ ঐতিহাসিক আওকরা মসজিদটির চারপাশের ঝাড়-জঙ্গল স্থানীয় এলাকাবাসী নিজেদের উদ্যোগে সাফ করে নামাজ আদায়ের উপযোগী করেছেন। মসজিদ ভবনটির দেয়ালের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় ফাটল দেখা দেওয়া সত্ত্বেও আওকরা মসজিদে ঝুঁকি মাথায় নিয়ে মুসল্লিরা নিয়মিত নামাজ আদায় করে আসছেন। তৎকালীন মীর্জা সাহেব মসজিদটি প্রতিষ্ঠার সময় কি নাম রেখেছেন তাও কেউ বলতে পারেন না। তবে কোনো মানুষ মসজিদটির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এটির মধ্যবর্তী অংশে দাঁড়িয়ে কথা বললে এক সময় জোরে প্রতিধ্বনির সৃষ্টি হতো। তা শুনে তারা ভাবত মসজিদটি তাদের কথার উত্তর দিচ্ছে। এ থেকে মসজিদটির নাম হয় আওকরা মসজিদ অর্থাৎ কথা বলা মসজিদ। এখনো মানুষ মসজিদটির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় প্রতিধ্বনি শোনার আশায় শব্দ করে কথা বলে। কিন্তু মসজিদের দেয়াল ফেটে গিয়ে নষ্ট হওয়ায় এবং এর গায়ে আগাছা পরিপূর্ণ হওয়ায় আগের মতো আওয়াজ হয় না। তবে এটিকে সংস্কার করলে এটাও পর্যটকদের দর্শনীয় স্থান হতে পারে। জানা যায়, খানসামার গোয়ালডিহি ইউপির হাসিমপুর-আঙ্গারপাড়ার মির্জার মাঠের ওই মসজিদটি প্রায় পৌনে ৩০০ বছর আগে বাংলা ১১৭২ সালে মীর্জা লাল বেগ মুসলিম সম্প্রদায়ের নামাজ আদায়ের জন্য নির্মাণ করেন। চিকন ইটে নির্মিত দেয়ালে নকশা করা মসজিদটি খানসামার মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া বেলান নদীর পূর্ব ধারে মীর্জার মাঠ নামক স্থানে অবস্থিত। ওই এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিদের ধারণা, এক সময় মসজিদটির আশপাশে মুসলিম জনবসতি ছিল। যে কারণে ঐতিহাসিক মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল এবং ব্রিটিশ সরকারের আমলে অথবা অন্য কোনো কারণে তারা মসজিদটির আশপাশ এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়। ফলে এটি অযত্ন-অবহেলায় পরিত্যক্ত অবস্থায় দীর্ঘকাল পড়ে থাকে। তবে মীর্জা লাল বেগের ওই মসজিদকে ঘিরে মীর্জার মাঠে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া একই স্থানে এলাকাবাসীর উদ্যোগে মীর্জার মাঠে আওকরা মসজিদ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় নামে আরও একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়। বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় এলাকাবাসী নামাজ আদায়ের পাশাপাশি মসজিদের কাছেই স্থাপন করেছেন একটি মাদরাসা। পর্র্যটন কেন্দ্র হিসেবে খানসামার এ মসজিদটি হতে পারে দেশের অন্যতম দর্শনীয় স্থান। উল্লেখ্য, খানসামা উপজেলা প্রশাসন গত দুই বছর আগে আওকরা মসজিদের ছবিসহ বেশ কিছু তথ্য-উপাত্ত প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরে পাঠানোর পর এটাকে ওই বিভাগের আওতায় নেওয়া হয়েছে।