দিনাজপুরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে স্কুলছাত্র মিনহাজুল ইসলাম (১৬) হত্যার প্রতিবাদ ও অবিলম্বে সীমান্ত হত্যা বন্ধের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।
রোববার এক বিবৃতিতে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাশেদুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল রাজিবুর রহমান এ প্রতিবাদ জানান।
বিবৃতিতে তারা বলেন, নতজানু পররাষ্ট্র নীতির কারণে সীমান্তে নির্বিচারে বাংলাদেশীদের হত্যা করে চলেছে বিএসএফ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থানকালে ৭ সেপ্টেম্বর দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনার ঘোষণা দেন। কিন্তু তার পর দিন ৮ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থানকালেই দিনাজপুর সীমান্তে বিএসএফ নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে নবম শ্রেণির ছাত্র মিনহাজুলকে। এ নির্মম ও অপমানজনক হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। যদিও একই সময়ে মুসলমানদের কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নেয়া ২০০ বছরের দখলদার বৃটিশ রানির মৃত্যুতে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে সরকার।
নেতৃবৃন্দ বলেন, সীমান্তে এমন নির্বিচারে হত্যা আন্তর্জাতিক আইনের সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন। কিন্তু ভারতের সদিচ্ছার অভাব ও বাংলাদেশ সরকারের নতজানু পররাষ্ট্র নীতির কারণে বাংলাদেশীরা হরহামেশায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হত্যাযজ্ঞের শিকার হচ্ছে। ২০০০ থেকে ২০২০ সাল, এই ২১ বছরে এক হাজার ১৮৫ জন বাংলাদেশী বিএসএফের হাতে খুন হয়েছে। আর আহত ও নির্যাতনের শিকার অসংখ্য। ২০১১ সালে কিশোরী ফেলানীকে খুনের পর কাঁটাতারে ঝুলিয়ে রাখার নির্মম দৃশ্য বিশ্ববাসীকে কাঁদিয়েছে। কিন্তু হত্যাযজ্ঞ বন্ধ হয়নি। বরং গত জুলাই মাসে বিএসএফ প্রধান পঙ্কজ কুমাস সিং বাংলাদেশে বসে দাম্ভিকতার সাথে বলেছেন, ‘এ যাবতকালে সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে যারা নিহত হয়েছে, তারা সবাই অপরাধী’। এ সময় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ দূরে থাক, টু শব্দও করা হয়নি।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, সরকারের এমন নতজানু অমানবিক নীরবতাই সীমান্তে হত্যাকাণ্ড ঘটাতে বিএসএফকে উৎসাহিত করছে। ফলে প্রতিনিয়তই বাংলাদেশ সীমান্তে নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ, নির্যাতন, অপহরণ, চুরি, ডাকাতি, দখলের মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে বিএসএফ। অথচ অন্য কোনো দেশের সীমান্তে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যার সাহস দেখাতে পারে না ভারত। অবৈধ সরকার শুধুমাত্র ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এদেশের মানুষের জান-মাল ভারতীয় বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছে।
বিবৃতিতে আরো বলেন, ‘সরকার যখন দেশের মানুষকে বঞ্চিত করে হাজার হাজার টন ইলিশ ভারতে পাঠাচ্ছে তখন ভারত বাংলাদেশকে নিরপরাধ নাগরিকের লাশ উপহার দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক ভারত সফর জাতির জন্য কিছু নিয়ে আসতে না পারলেও লাশ নিয়ে এসেছে। অবৈধ সরকারের ধারাবাহিক নতজানু নীরবতার মানে হলো ভারতকে বাংলাদেশের মানুষ হত্যার লাইসেন্স দেয়ার শামিল। দেশবাসী এ নতজানু নীতি পরিহার ও সীমান্ত হত্যা বন্ধ দেখতে চায়।
সীমান্ত হত্যা বন্ধে সরকারকে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে জানিয়ে তারা বলেণন, নির্বিচারে হত্যাকারী বিএসএফ সদস্যদের বিচারের আওতায় আনতে প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আদালতের শরণাপন্ন হতে হবে। অন্যথায় এ দেশের মানুষের রক্ত এত সস্তা নয়। জান-মাল রক্ষায় প্রয়োজনে দেশের মানুষ কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজপথে নেমে আসবে।