বাসা ভাড়ার মাত্র ১৫ হাজার টাকা না দিতে পারায় এক গর্ভবতী নারী ও তার পরিবারকে সারারাত বাড়ির বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখার অভিযোগ উঠেছে বাড়িওয়ালীর বিরুদ্ধে। বাসা ভাড়া আদায়ের জন্যে সেই পরিবারের সাথে বিভিন্নভাবে অমানবিক আচরণ করার অভিযোগও উঠেছে। এ ঘটনায় ৯৯৯ এ ফোন দিয়েও কোনো আইনি সহায়তা পাননি ভুক্তভোগীরা।
গতকাল সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে সাভারে আশুলিয়ার কান্দাইল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
রাতে নিজেদের বাসায় ঢুকতে না পেরে স্থানীয়দের সহায়তায় অন্য বাসায় আশ্রয় নিতে হয়। একই ভাবে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কর্মস্থান থেকে ফিরে এসে সেই ঘরের দরজা বন্ধ পান ভুক্তভোগীরা। তাদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
ভুক্তভোগী নারী তাসলিমা আক্তার ৫ মাসের গর্ভবতী। তিনি ও তার স্বামী মো. রানা স্থানীয় হামিম গ্রুপের একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। তাদের ঘরে আরেকটি ৮ বছরের ছেলে সন্তান আছে। বাড়ির মালিক মো. ইউসুফের স্ত্রী কুলসুম বেগমের বিরুদ্ধে এ অমানবিক আচরণের অভিযোগ উঠেছে।
রানা বলেন, ‘আমি আগে কন্ট্রাক্টে কাজ করতাম। সেই কাজের টাকা না দিয়ে কন্ট্রাক্টর দূরে গেছে। অভাবের সংসার চালাতে গিয়ে আমাদের আড়াই মাসের ভাড়া ১৫ হাজার টাকা বকেয়া হয়ে যায়। গতকাল সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফিরে এসে দেখি আমার ঘরে তালা দিয়েছে বাড়িওয়ালী। টাকা না দিতে পারায় আমাদের ঘরে ঢুকতে দেয়নি। আমাদের ঘরে প্রায় লাখ টাকার বিভিন্ন আসবাবপত্র আছে। বাড়িওয়ালী সেই মালামাল বিক্রি করার হুমকি দিয়েছেন। ‘
তিনি আরো বলেন, বৃষ্টির মধ্যে রাত আড়াইটা পর্যন্ত স্ত্রী সন্তানসহ বাইরে দাঁড়ায় ছিলাম আমরা। একজনের কাছ থেকে হাজার পাঁচেক টাকা যোগাড় করে বাড়িওয়ালীকে দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু তিনি নেননি। পরে রাতে আরেক বাসায় থাকার ব্যবস্থা হয়। তাও আমি এক বাসায় আর আমার স্ত্রী আরেক বাসায়। সকালে শেষমেশ না খেয়েই আমরা ডিউটিতে গিয়েছি। ‘
রানার বন্ধু ও সহকর্মী আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘পাঁচ হাজার টাকা তো তারা দিতেই চেয়েছিল। বাকি থাকে ১০ হাজার টাকা। আমরা কয়েকজন গিয়ে বাড়িওয়ালীকে বলি যে আমরা জামিনদার হচ্ছি, তারা যদি ভাড়া না দিয়ে চলে যায় আমরা ভাড়া দিয়ে দিব। তাদের ঘরে ঢুকতে দেন। তিনি মানেন নাই। আমরা যখন বললাম এত রাতে তারা এই ছোট বাচ্চা ও গর্ভবতী স্ত্রীকে নিয়ে কোথায় যাবে তখন তিনি উত্তর দেন, তারা জাহান্নামে যাক। আমি কালকে ঘরের মালামাল বিক্রি করে আমার ভাড়ার টাকা নিব। রানা সোমবারই আয়রন অপারেটর হিসেবে হামিম গ্রুপে চাকরি নিয়েছে। এর আগে আমরা একসাথে কন্ট্রাক্টে কাজ করলেও সেখান থেকে এখনো টাকা পায়নি। ‘
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী মো. রাব্বী বলেন, ‘বাসা ভাড়ার জন্য বাড়ির মালিক ওই ভাড়াটিয়াদের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। বৃষ্টির মধ্যে অনেক রাত পর্যন্ত সন্তান সম্ভবা ওই নারী তার ছোট একটি ছেলে ও স্বামীকে নিয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। বাড়ির মালিক কুলসুম বেগমকে অনেক অনুরোধ করলেও তিনি তালা খুলে দেননি। পরে আমি তাসলিমাকে একটি বাসায় আর তার স্বামী রানাকে আরেকটি বাসায় থাকার ব্যবস্থা করে দেই। মাত্র এই কয়টা টাকার জন্য একজন গর্ভবতী মহিলা এমন কষ্ট করবে তা তো হতে পারে না। এমন বাড়িওয়ালার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। ‘
মো. রানা বলেন, ‘৯৯৯ এ ফোন দিয়েছিলাম একেকবার একেকজন কথা বলল কিন্তু কেউ তো কিছু করল না। আজ রাতে এসেও দেখি ঘরে তালা দেওয়া। ‘
এঘটনায় বাড়ির মালিক কুলসুম বেগম মুঠেফোনে বলেন, ‘সাংবাদিক ভয় কম পাই। থানায় আমার ওসি, দারোগা আছে। তারা ৩ মাসের ঘর ভাড়া দেয় না। তাগো কইছি ফ্লাট বাসা ছেড়ে টিনসেটে গিয়ে থাকেন। আমি তো কারো টাকা দিয়া বাড়ি করি নাই। টাকা দিবো ঘরের থাকব। না হইলে টাকা দিয়া মালামাল নিয়া যাইব। ‘
৯৯৯ এ ফোন দিয়েও কোনো আইনি সহায়তা না পাওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে আশুলিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জিয়াউল ইসলাম বলেন, ‘আমি শুনে দেখছি, এখন কি অবস্থা। বাসায় ভাড়া থাকতে চাইলে টাকা তো দিতেই হবে। ‘আশুলিয়া থানার এসআই মিলন ফকির বলেন, ‘৯৯৯ এ আমার যাওয়ার কথা থাকলেও আমি যেতে পারিনি। একটা সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। আমার পরিবর্তে আর কেউ গেছে কিনা আমি জানি না। আমি বাড়িওয়ালা মহিলার সাথে কথা বলেছি, সে নোয়াখালী ভাষায় কথা বলে। তার আচরণ খুব খারাপ। আমি ভুক্তভোগীদের থানায় জিডি করার পরামর্শ দিয়েছি, তাহলে বিট অফিসার বিষয়টি দেখবেন। ‘