ভ্রমণ ভিসায় ভারতে এসে ধর্ম প্রচারের অভিযোগে আসামে গ্রেপ্তার হয়েছেন ১৬ জন বাংলাদেশি নাগরিক। আসাম পুলিশ জানিয়েছে, গতকাল (শনিবার) সকালে আসামের রাজধানী গুয়াহাটি থেকে ৩০০ কিলোমিটার দূরে বিশ্বনাথ জেলার বাঘমারি এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে বেশ কিছু ধর্মপ্রচারক বই ও নথি উদ্ধার করা হয়েছে।
বিশ্বনাথ জেলার পুলিশ সুপার নবীন সিং বলেন, আমাদের কাছে নির্দিষ্ট তথ্য ছিল যে, ১৬ জন বাংলাদেশি নাগরিক ধর্ম প্রচারের কাজ করছিলেন। কিন্তু ভ্রমণ ভিসা নিয়ে আসা বিদেশি নাগরিকদের ধর্ম প্রচারের কাজ করার কোনো অনুমতি নেই। এরপর আমরা এ সম্পর্কিত তথ্য যাচাই করে তাদেরকে গ্রেপ্তার করি।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলা থেকে বাসে করে তারা আসামের বিশ্বনাথ জেলার বাঘমারিতে পৌঁছান। সেখানে ধর্ম প্রচারকের কাজ করছিলেন। এই অভিযোগ পাওয়ার পরে সেখানে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তাররা হলেন, সৈয়দ আশরাফুল আলম, মো. গোলাম আজম, আলম তালুকদার, মোহাম্মদ মাসুদ রানা, মো. আব্দুল হাকিম, হাফিজুর রহমান, মো. সবুজ সরকার, মোহাম্মদ সুলতান মাহমুদ, সোহাগ চৌধুরী, মো. আনোয়ার হোসেন, মান্নান আলি, মো. মকবুল হোসেন, মো. শাহ আলম সরকার, মোহাম্মদ বাদশা সরকার, মো. গোলাম রাব্বানী এবং মোহাম্মদ হারুল।
এর আগে চলতি বছরের ২৯ আগস্ট আসামের দক্ষিণ সালমারা এলাকা পরিদর্শনের সময় ধর্ম প্রচারের কাজ করার অভিযোগ উঠে আশরাফুলের বিরুদ্ধে কিন্তু সে সময়ও তাকে এই কাজ না করার জন্য সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু এবার অত্যন্ত গোপনে বাঘমারির প্রত্যন্ত এলাকায় ধর্মীয় সভার আয়োজন করে ইসলাম ধর্ম প্রচার করছিলেন সৈয়দ আশরাফুল আলম। গত কয়েক দিনে প্রায় ৫০০ মানুষকে তার অনুগামী বানান তিনি।
শনিবার আটকের পর তাদের জিঞ্জিয়া থানায় নেয় পুলিশ। এরপর তাদের কথাবার্তায় অসঙ্গতি লক্ষ্য করে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ভিসার বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে ইতোমধ্যে তাদের নামে মামলা হয়েছে।
এদিকে, বিভিন্ন সময়ে টুরিস্ট ভিসা নিয়ে ধর্ম প্রচারের অভিযোগ ওঠার পরেই আসাম রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ভারতের কেন্দ্রীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি পাঠিয়ে ঘটনার বিস্তারিত জানানো হয়েছে। এতে একাধিক বাংলাদেশি ধর্মগুরুকে আসাম প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার সৈয়দ আশরাফুল আলম ভারতের সাংবাদিকদের জানান, কয়েক মাস আগেই দিল্লি, আজমীর শরীফসহ ভারতের বেশ কয়েকটি ইসলামিক ধর্মীয় স্থান পরিদর্শনের জন্য তারা ভারতে প্রবেশ করেছিলেন। আজমীর শরীফ পরিদর্শন করে কলকাতায় এলে তাদের আত্মীয়স্বজনরা আসামে নিয়ে যান।
তিনি বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য ছিল আজমীর শরীফ পরিদর্শনের পরেই পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার হয়ে বাংলাদেশে ফিরে যাওয়া।
আসাম রাজ্য পুলিশের ডিজি ভাস্কর জ্যোতি মহন্ত আজ রোববার সাংবাদিকদের বলেন, ভ্রমণ ভিসা নিয়ে এলেও আসামের কোনো দর্শনীয় স্থান তারা পরিদর্শন করেনি। তারা মূলত ধর্ম প্রচারের কাজেই এসেছিলেন।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের ধর্মগুরুদের আমন্ত্রণ করে ধর্ম প্রচারের কাজ নিম্ন আসাম ও বরাক উপত্যকায় দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে সতর্ক আছি।