মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী (৪৬)। তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় ১১টি মামলায় সাজা এবং ১১টি মামলার ওয়ারেন্ট রয়েছে। এরপর তিনি নিজেকে বিভিন্ন মন্ত্রীর আত্মীয় বলেও তিনি পরিচয় দিয়ে মিথ্যা প্রলোভনে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। শুধু তাই নয়, অন্যের জমি নিজের বলে ভুয়া দলিল দেখিয়েও একাধিক লোকের কাছে বিক্রি করেন তিনি।
গ্রেফতারকৃত মেজবাহ হাটহাজারী উপজেলা ২নং ধলই ইউনিয়নের কাটিরহাট এলাকার মোহাম্মদ জামান চৌধুরী বাড়ির মো. আবু তাহের চৌধুরী পুত্র।
সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও ক্যাম্পে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যা ব-৭ চট্টগ্রামের অধিনায়ক লে. কর্নেল এমএ ইউসুফ তাকে (প্রতারক মেজবাহ) গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, গত রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
কর্নেল এমএ ইউসুফ বলেন, ২০১৫ সালে সীতাকুণ্ডের কুমিরায় স্ক্র্যাপ হিসেবে বিক্রির জন্য শত কোটি টাকার একটি পুরনো জাহাজ আনে খাজা শিপইয়ার্ড। এই জাহাজটিসহ এ রকম আরও কয়েকটি জাহাজ আনার প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিকে ব্যবসার অংশীদারীত্বের প্রস্তাব দেয় প্রতারক মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী। কেউ খবর নিতে গেলে যেন তারা পক্ষে তথ্য দেয় এমন ২০ থেকে ২৫ জন লোককে মাসিক বেতন দিয়ে নিয়োগ দেয় মেজবাহ। তার দেওয়া তথ্য যাচাই করতে গেলে নিয়োগপ্রাপ্ত লোকেরা তার ব্যবসার সব তথ্য ঠিক বলে তথ্য দিত। এভাবে সে আব্দুল হাকিমের কাছ থেকে ২ কোটি ২০ লাখ টাকা, আজগর আলীর কাছ থেকে ৭০ লাখ টাকা, মো. রেজওয়ানের কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা, ইব্রাহিমের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা, মো. রুমনের কাছ থেকে ৬৩ লাখ টাকা, শহিদুল ইসলামের কাছ থেকে ৯০ লাখ টাকা, জাহিদুল ইসলামের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা, আসাদের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা, বেলালের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা এবং শাহজাহানের কাছ থেকে ২ কোটি টাকাসহ অসংখ্য মানুষের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
লে. কর্নেল ইউসুফ আরও বলেন, মেজবাহ বাজেয়াপ্ত কন্টেইনার দেখিয়ে প্রচার করে- একটি কন্টেইনারে সে প্রচুর পরিমাণ স্বর্ণ পেয়েছে যা প্রায় ৫০০ কোটি টাকায় বিদেশে বিক্রি করেছে, কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক সেই টাকা জব্দ করেছে। এছাড়াও সে বলে বেড়ায়, ৫টি ডায়মন্ড পেয়েছে যার প্রতিটির মূল্য ২ হাজার কোটি টাকা, ডায়মন্ডগুলোর বিক্রির টাকা পেতে হলে বিভিন্ন মন্ত্রী এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ভাগ দিতে হবে। বিশ্বাস অর্জনের জন্য বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং মন্ত্রীর কণ্ঠস্বর নকল করে কথোপকথনের রেকর্ড শোনাতো সে এছাড়া একই জমি বিক্রির কথা বলে বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে টাকা আদায় করত। শুধুমাত্র চট্টগ্রাম নগরীর বাড়াইপাড়া এলাকায় একটি জমির ভুয়া দলিল দেখিয়ে অন্তত ১০ জনের কাছে বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
র্যাব জানায়, ভুক্তভোগীরা তার কাছে পাওনা টাকা চাইতে গেলে সে ভুক্তভোগীদের আগে থেকে রাখা স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে বিভিন্ন ভুয়া দলিল দস্তাবেজ তৈরি করে তাদেরই উল্টো মিথ্যা মামলার ভয় ও মামলা দিয়ে নাজেহাল করতো। মিথ্যা মামলার ভয়ে অনেক ভুক্তভোগীই পাওনা টাকার বিষয়ে মুখ খোলার সাহস করতো না। এমন অভিযোগের খবর পেয়ে র্যা ব গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রোববার রাত পৌনে ১০টায় নগরীর পাঁচলাইশের হামজারবাগ এলাকায় অভিযান চালিয়ে একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার মেজবাহ বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করার কথা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে।
এছাড়া তাকে যেন সহজে কেউ খুঁজে না পায়, সেজন্য বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করতো সে। এছাড়া তার সিমকার্ড ঘন ঘন পরিবর্তন করতো বলে জানা গেছে।
এদিকে প্রতারক মেজবাহকে গ্রেফতারের পর পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য হাটহাজারী মডেল থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে বলে জানায় র্যাব।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হাটহাজারী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ রুহুল আমীর সবুজ জানান, র্যাব সোমবার মেজবাহকে তাদের কাছে হস্তান্তর করে। তার বিরুদ্ধে থানায় ১৩টি ওয়ারেন্ট রয়েছে। ওই দিনই তাকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।