মাধবপুর উপজেলার শাহজিবাজার বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রের অপারেটর আকবর আলীর মাদ্রাসাপড়ুয়া মেয়ে ফাহমিদা আক্তার দেড় মাস আগে সর্দি, জ্বর ও কাশিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। বাবা ও সৎমা তাকে ডাক্তার না দেখিয়ে পানি পড়া ও তাবিজ-কবজ এনে দেন। বাসার একটি কক্ষে ফেলে রাখায় দিন দিন তিনি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। এভাবে প্রায় দেড় মাস চার দেয়ালের মধ্যে বন্দিদশায় থাকার পর বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন তিনি।
ফাহমিদা বৃহস্পতিবার সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। মাধবপুর থানার ওসি মুহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ফাহমিদার বন্দিজীবন ও অসুস্থতার খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের হস্তক্ষেপে গত বুধবার সন্ধ্যায় তাঁকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন বন্দিদশায় থাকা ফাহমিদার সম্প্রতি খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেন প্রতিবেশীরা। কিন্তু বাবা ও সৎমা তাঁর এ করুণ দশার কথা প্রকাশ করেননি। এক পর্যায়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রের লোকজন জানতে পেরে ইউএনও শেখ মঈনুল ইসলাম মঈন ও মাধবপুর থানার ওসি মুহাম্মদ আবদুর রাজ্জাককে খবর দেন। খবর পেয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক সাবরিনা সুলতানাকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
সাবরিনা সুলতানা বলেন, ফাহমিদাকে যে কক্ষে রাখা হয়েছিল, সেটি ছিল নোংরা। নিজ কক্ষেই মলমূত্র ত্যাগ করতেন। অযত্ন, অবহেলা ও গৃহে বন্দি রাখায় বিনা চিকিৎসায় ফাহমিদা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। এভাবে ফাহমিদা মারা গেছেন।
ফাহমিদার বাবা আকবর আলী জানান, ১৫ বছর আগে প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর ফাহমিদা ও তাঁর এক ভাই তাঁদের সঙ্গে ছিলেন।
মাধবপুর থানার ওসি আবদুর রাজ্জাক বলেন, ফাহমিদাকে উদ্ধার করে অ্যাম্বুলেন্সে করে চিকিৎসার জন্য সিলেট পাঠানো হয়েছিল। চিকিৎসক চেষ্টা করেও তাঁকে বাঁচাতে পারেননি।