ইউক্রেনের চারটি রুশ অধিকৃত অঞ্চলে রাশিয়া আয়োজিত গণভোটে আজ মঙ্গলবার শেষ দিনের ভোটগ্রহণ হচ্ছে। এর আগে গত চার দিন আগাম ভোটগ্রহণ হয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এ সপ্তাহেই রুশ সংসদের অধিবেশনে অধিকৃত এই চারটি এলাকা গণভোটের মাধ্যমে রাশিয়ার সীমানাভুক্ত করার ঘোষণা দেবেন।
ইউক্রেন সরকার এবং তাদের পশ্চিমা মিত্র দেশগুলো একে ধোঁকাবাজির নির্বাচন বলে নাকচ করে দিয়েছে।
ইউক্রেনের কর্মকর্তারা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, এই ভোটের মাধ্যমে অধিকৃত এই এলাকাগুলোকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে বৈধতা দেবার চেষ্টা করছে ক্রেমলিন।
পূর্বাঞ্চলের দোনেৎস্ক ও লুহানস্কএ এবং দক্ষিণের খেরসন এবং জাপোরিঝার প্রায় ৪০ লাখ মানুষকে ভোটদান কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে বলা হয়েছে।
এই অঞ্চলগুলো রাশিয়ার অংশ হতে চায় কিনা এসব এলাকার মানুষের কাছে সেটা জানতে রাশিয়া তড়িঘড়ি করে এই গণভোটের আয়োজন করেছে।
বিতর্কের গণভোট :
গত চারদিন ধরে ভোটগ্রহণের সময় নির্বাচনী কর্মকর্তারা রুশ সশস্ত্র প্রহরায় বাড়ি-বাড়ি গিয়ে ভোট সংগ্রহ করেছেন। অনেকে ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ করেছে, অনেকে ভয়ে ভয়ে ভোট দেবার কথা বলেছে।
মাত্র কয়েকদিনের নোটিশে এই ভোট আয়োজন করা হয়।
এই অঞ্চলগুলো ইউক্রেনের ১৫ শতাংশ এবং ইউক্রেনের আশঙ্কা এগুলোর শাসনভার রাশিয়া গ্রহণ করলে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ নতুন এবং আরো বিপজ্জনক মোড় নেবে। কারণ এসব এলাকা ইউক্রেন পুর্নদখলের জন্য সামরিক পদক্ষেপ নিলে রাশিয়া তখন সেটা তাদের সার্বভৌম এলাকার ওপর হামলা বলে দাবি করবে।ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শুক্রবার রুশ সংসদের এক যৌথ অধিবেশনে এই চারটি এলাকা তাদের সীমানাভুক্ত করার ঘোষণা দিতে পারেন বলে বাস্তব সম্ভাবনা রয়েছে।
ইউক্রেন ও তার পশ্চিমা মিত্ররা বলছে, এই গণভোটের ফলাফল ইতোমধ্যেই ঠিক করা আছে এবং তারা মনে করছে এই অজুহাত দেখিয়ে রাশিয়া ইউক্রেনের ভূখণ্ড অবৈধভাবে দখল করবে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, এই গণভোটের ভিত্তিতে ইউক্রেনের অঞ্চলগুলো রাশিয়া কোনোরকম পদক্ষেপ নিলে বিশ্বের দেশগুলো তার কড়া জবাব দেবে।
সোমবার আমেরিকা রাশিয়াকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে নতুন করে ইউক্রেনের আরো এলাকা রাশিয়া তার নিজের সীমানাভুক্ত করলে তারা রাশিয়ার ওপর আরো অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে।
পুতিন ২০১৪ সালের মার্চ মাসে একই ধরনের একটি গণভোট অনুষ্ঠানের কয়েকদিন পর ঘোষণা করেন যে, জনমতের ভিত্তিতে ইউক্রেনের ক্রিমিয়া উপদ্বীপকে রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত করা হলো।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার জবাবে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরফ জোর দিয়ে বলেন, এই গণভোটের লক্ষ্য ওই এলাকায় বসবাসরত মানুষকে তাদের ইচ্ছা প্রকাশের সুযোগ দেয়া।
ভিন্ন ধরনের ব্যালটপত্র :
এই ভোট ডিজিটাল পদ্ধতিতে হচ্ছে না। হাতে হাতে যে ব্যালটপত্র দেয়া হচ্ছে তাতে এলাকাভেদে ভিন্ন প্রশ্নের ভিত্তিতে জনমত নেয়া হচ্ছে। পূর্বাঞ্চলে দোনেৎস্ক এবং লুহানস্কের বেশ অনেকটা এলাকা রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীরা শাসন করছে ২০১৪ সালে তথাকথিত অস্বীকৃত একটি স্বাধীনতাকামী গণভোটের পর থেকে।
ওইসব এলাকায় মানুষকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে তারা ‘ফেডারেশনের প্রজা হিসেবে তাদের প্রজাতন্ত্রের রাশিয়ায় অন্তর্ভুক্তিকে সমর্থন করে কিনা।’অন্যদিকে ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরুর পর রুশ সৈন্যরা দক্ষিণের খেরসন ও জাপোরিঝার যেসব অংশের দখল নিয়েছে, সেখানকার মানুষকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে- তারা তাদের এলাকাগুলোর ইউক্রেন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া, একটি আলাদা দেশ গঠন করা এবং পরে ফেডারেশনের প্রজা হিসেবে সে দেশের রাশিয়ায় অন্তর্ভুক্তি সমর্থন করে কিনা।
দক্ষিণের এলাকাগুলোয় ব্যালট কাগজ ছাপানো হয়েছে রুশ এবং ইউক্রেনীয় দুটি ভাষায়, আর পূর্বাঞ্চলে শুধু রুশ ভাষায়।
রাশিয়ার বিভিন্ন অংশে যেসব ইউক্রেনীয় শরণার্থী ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন তাদের ভোটদানের জন্য রাশিয়ার ভেতরে ২০০টি ভোটদান কেন্দ্র খোলা হয়েছে।