গত কয়েকদিন ধরে ইডেন মহিলা কলেজে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের পর মঙ্গলবার বিকেল চারটার দিকে ক্যাম্পাসে ফিরেছেন ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা এবং সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানা।
বিষয়টি নিশ্চিত করে তামান্না জেসমিন রিভা বলেন, ‘আমি ঢাকা মেডিকেল থেকে বিকেলে ক্যাম্পাসে ফিরেছি। ক্যাম্পাস এখন খুবই সুন্দর এবং সুশৃঙ্খল রয়েছে। আজকে ক্যাম্পাসে পরীক্ষা হয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে আমরা অবস্থান করছি।’
অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি সংগঠন করি। আমি কোন ভুল করলে সংগঠন আমার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে। অন্য কেউ ভুল করলে তার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে। সংগঠন যে সিদ্ধান্ত নেবে আমি তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল।’
এ দিকে কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ছাত্রলীগের সদ্য বহিষ্কৃত সাংগাঠনিক সম্পাদক সামিয়া আক্তার বৈশাখীর করা বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ব্যানারে মানববন্ধন করেছেন। তারা রিভা-রাজিয়ার অনুসারী বলে জানা গেছে। এ সময় বৈশাখী প্রকাশ্যে ক্ষমা না চাইলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার হুমকি দিয়েছে তারা।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, ছাত্রলীগ নেত্রীদের নিজেদের মধ্যে আধিপত্য ও স্বার্থের দ্বন্দ্বে কেন ইডেন কলেজ কুলষিত হবে? তারা তো সাধারণ শিক্ষার্থীদের সমস্যা বা সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে কথা বলে না। সকল শিক্ষার্থী তো ছাত্রলীগও করে না। তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের কেন চারিত্রিক অপবাদ দিবেন? এটা অন্যায়, তাকে এ জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।
তারা আরও বলেন, কলেজের ৪০ হাজার শিক্ষার্থীর সবাই তো খারাপ নয়। কেউ ওই অপবাদের সঙ্গে জড়িত কিনা সেটা তারাই ভালো জানেন। যদি কেউ জড়িত থাকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। ক্ষমা না চাইলে কলেজের সম্মানহানির জন্য মানববন্ধন থেকে বৈশাখীকে বহিষ্কারের দাবি জানানো হয়। অন্যথায় পরবর্তীতে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করার হুমকি দেন তারা।
তারা বলেন, এ ধরনের অপবাদের কারণে ভবিষ্যতে বিয়ে এবং চাকরির ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে অনেক বিখ্যাত নারী ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন উল্লেখ করে মানববন্ধনকারীরা বলেন, ছয়টি হলে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী থাকেন। তারা পড়াশোনা করতে এসেছেন আমরা সুনামের সাথে শিক্ষাজীবন শেষ করতে চাই। এখানে সুষ্ঠু ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে যদি বার বার সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভুক্তভোগী হতে হয়, তাহলে এই ছাত্র রাজনীতি আমরা চাই না।
এ দিকে বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে সামিয়া আক্তার বৈশাখী বলেছেন, সাম্প্রতিক ঘটনাবলি নিয়ে গণমাধ্যমে আমার বক্তব্য ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের থেকে পাওয়া বিভিন্ন অভিযোগ আমি উল্লেখ করি কিন্তু সেগুলো আমার বক্তব্য হিসেবে গণমাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু এ সব বিষয় আমার ব্যক্তিগত কোনো বক্তব্য নয়। সেকারণে গণমাধ্যমে প্রকাশিত বক্তব্য সংশোধন করার অনুরোধ করছি। একইসঙ্গে বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলায় কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি ও ক্ষমাপ্রার্থনা করছি।’
রাজধানীর ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌসের ওপর হামলার জের ধরে গত শনিবার মধ্যরাত থেকে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করে কলেজ প্রাঙ্গণে। রোববার সন্ধ্যা ছয়টায় সংবাদ সম্মেলন করার সময় হামলা করা হয় তামান্না জেসমিন রিভা ও রাজিয়া সুলতানার ওপর। এ সময় ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ও হামলায় অন্তত ১৫ জন আহত হন। এর পর তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। তারা ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার পর আনন্দ মিছিল করেছে ছাত্রলীগের বিরোধী একটি অংশ।
এ দিকে সংঘর্ষের ঘটনায় ইডেন ছাত্রলীগের ১২ জন নেত্রী ও চারজন কর্মীকে দল থেকে স্থায়ী বহিষ্কার এবং কমিটি স্থগিত করেছে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ। স্থায়ী বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে গতকাল সোমবার সকালে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে আমরণ অনশনের ডাক দেওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যেই আন্দোলন গুটিয়ে নেন বহিষ্কৃত ১২ নেত্রী।