আশ্বিনের শিউলি-মাখানো প্রভাতে পুরোনো রেডিওটা বেজে ওঠে, বীরেন্দ্র ভদ্রের কণ্ঠে মহিষাসুরমর্দিনীর সুরে ম ম করছে ধবধবে সকালটা।
উমার আগমনের আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। আট থেকে আশি বাঙালির ঘরে ঘরে এখন উৎসবের মেজাজ। কোনওরকমে শেষ কয় বছর সামলে এবছর শেষবেলায় পুজোর কেনাকাটাও বেশ জমজমাট।
শোনা যাচ্ছে এবছর “নারায়ণী নমস্তুতে” পুরস্কারটি পৌঁছেছে ব্রিটেনের ক্যামডেনের ঝুলিতে। “সুইস স্কটিস লাইব্রেরির” অলিন্দে সজীব সবুজায়নের রঙিন গালিচাপাতার কাজ চলছে। বিশ্বকে উষ্ণয়নের অভিশাপ থেকে বাঁচাতে সতর্কতা শুরু হয়েছে অনেক আগেই, বিলেতের মাটিতে মণ্ডপ সজ্জায় সবুজায়ন থেকে ‘বাংলার নবজাগরণ ‘এমন অভিনব আয়োজন বাঙালি আগে দেখেনি। সবুজায়নের ছোঁয়ায় ক্যামেডেনের মণ্ডপ প্রাঙ্গণে খুশির সোনালি ঝর্ণায় স্নাত এখানকার বাঙালিরা। সবাই বলছে “সুইস স্কটিস লাইব্রেরির” অন্দরে পুজোর গন্ধ এসেছে, ঢ্যাংকুড়াকুর ঢাকেরবাদ্যি বাজছে।
টেমেসের ধারে খুঁটি পুজো সারা। প্রতি বছরের মতো এবছরও ক্যামেডেনের মাটিতে আবারও বৈচিত্রের বর্ণমালা। উমা এসেছেন সুদূর কুমারটুলি থেকে, উমা সেজেছেন সবুজে, নিয়ম মেনে ষষ্ঠী থেকে দশমী পুজো হবে পঞ্জিকামতে। মায়ের বোধন, অঞ্জলি, ভোগবিতরণ সবই থাকবে। তবে এবছর এই পুজোর বিশেষত্ব হল “ইউনেস্কো হেরিটেজ বেঙ্গল গ্লোবালের” সহায়তায় টেমসের বুকে প্রতিমার মূর্তি প্রদর্শন। লন্ডন সেজে উঠবে আরেক কলকাতায়। বাঙালি দেখবে আরও নতুনকিছু।
প্রতিবছরই দেশ বিদেশের নজর থাকে ক্যামেডেনের পুজোতে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সন্ধ্যায় প্রতিবন্ধী শিল্পী সায়নী পালিতের কণ্ঠের সুরে মাতোয়ারা হবে ব্রিটেনবাসি। রাহুল ব্যানার্জির তত্বাবধানে “ইন্দ্র” “শুন্য” ব্যান্ডের গান বাজবে মণ্ডপে। লতা মঙ্গেশকর, সন্ধ্যা মুখার্জি, কে কে, প্রমুখ সংগীত শিল্পীদের প্রতি থাকবে শ্রদ্ধাঞ্জলি। যাত্রাসম্রাজ্ঞী মহুয়ারানী উপস্থিত থাকবেন তাঁর “সীতাহারণ “নিয়ে। লন্ডনের অনেক পুজোর মধ্যে মিওলদের ক্যামেডেন হল সর্বপ্রাচীন। প্রেসিডেন্ট ডক্টর আনন্দ গুপ্তের নির্দেশনায় মহিষাসুমর্দিনীর সুর বাজবে সুইস স্কটিস লাইব্রেরির অলিন্দে। ডক্টর আনন্দ গুপ্তের কথায় জানা যায় এই পুজোর অতীতকথা, সকলকে নিয়ে একসাথে চলাই তাঁদের অনুপ্রেরণা জোগায়।অনুষ্ঠানের পাশাপাশি পুজোর বাকি দিনগুলোতে খাওয়া দাওয়ায় ভোজনরসিক বাঙালি থাকবে একেবারে খাঁটি বাঙালিতে। দর্শকদের নজর থাকবে ক্যামেডেন প্রাঙ্গণে। সবকিছু নিয়ে এবছর ব্রিটেনের মাটিতে ক্যামেডেন পুজোর নজরকারা অভিনব আয়োজন সত্যিই অভূতপূর্ব।