নিরাপদ ও আইনি প্রক্রিয়ায় গর্ভপাত সকল নারীর অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। এক্ষেত্রে বিবাহিত ও অবিবাহিত নারীর মধ্যে কোনো তফাৎ করাকে অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ আদালতের দেওয়া যুগান্তকারী এই রায়ে বৈবাহিক ধর্ষণকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। তবে সেটা শুধুই গর্ভপাতের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ। আদালত বলেছে, মেডিক্যাল টার্মিনেশন অব প্রেগন্যান্সি অ্যাক্টের আওতায় ধর্ষণের সংজ্ঞার মধ্যে বৈবাহিক ধর্ষণকেও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ‘নারীর বৈবাহিক অবস্থা বিবেচনা করে তার গর্ভপাতের অধিকার কেড়ে নেওয়া যাবে না।’
অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে অন্তঃস্বত্তা হয়ে পড়া অবিবাহিত নারীরা ২৪ সপ্তাহের মধ্যে গর্ভপাতের অধিকার পাবেন বলেও আদালত রায়ে বলেছে। এই অধিকার কেড়ে নেওয়া হবে মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন।
রায়ে বলা হয়, গর্ভপাত আইনের আওতায় বিবাহিত ও অবিবাহিত নারীর মধ্যে তফাৎ করা ‘কৃত্রিম ও সাংবিধানিকভাবে টেকসই নয়’ এবং এর মধ্য দিয়ে শুধু বিবাহিত নারীরাই যৌনচারে সক্রিয় বলে গৎবাঁধা ধারণাকে জিইয়ে রাখা হয়।
২৫ বছর বয়সী এক অবিবাহিত নারীর রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে ঐতিহাসিক এই রায় আসে। অবিবাহিত ও সম্মতির ভিত্তিতে সম্পর্কের কথা তুলে ধরে আইন অনুযায়ী তার গর্ভপাতের অধিকার নেই বলে দিল্লি হাই কোর্ট ২৩ মাসের অন্তঃস্বত্তা ওই তরুণীর আবেদন খারিজ করে দেয়।
পরে তিনি সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন। আদালতকে ওই তরুণী বলেন, তার সঙ্গী তাকে বিয়ে করতে অস্বীকার করেছে। কৃষক বাবার পাঁচ সন্তানের মধ্যে তিনি সবার বড় এবং কোনোভাবেই তার পক্ষে সন্তান লালন-পালন করা সম্ভব নয়।
গত ২১ জুলাই সুপ্রিম কোর্ট ওই নারীর গর্ভপাত করা নিরাপদ কি না, তা পরীক্ষা করার জন্য একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করতে নির্দেশ দেন। সেদিন আদালত বলেন, ২০২১ সালে সংশোধিত গর্ভপাত আইনে ‘স্বামী’ শব্দকে ‘সঙ্গী’ দিয়ে প্রতিস্থাপিত করা হয়েছে। এটা দিয়ে বুঝা যায়, ভারতের লোকসভা গর্ভপাতকে শুধু বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চায় না। এবিষয়ে সরকারের প্রতি নোটিস জারি করা হয়। সেটার শুনানির পর ২৩ আগস্ট আদালত গর্ভপাত আইনের দেওয়া ব্যাখ্যা বহাল রাখে।