বছরে ২৮ দশমিক ৫ মিলিয়ন পাউন্ড (প্রায় ৩২১ কোটি টাকা) সঞ্চয়ের লক্ষ্যে ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের ৩৮২টি পদ রহিত করার প্রস্তাব করছে যুক্তরাজ্যের জাতীয় গণমাধ্যম ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং করপোরেশন (বিবিসি)। এজন্য বন্ধ করা হচ্ছে বিবিসি বাংলাসহ ১০টি ভাষার রেডিও সম্প্রচার। আরবি, হিন্দি, ফারসি ও চীনা ভাষাও এই কাটছাটের আওতায় পড়ছে বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে।
তবে কোনো ভাষার পরিষেবাই একেবারে বন্ধ হচ্ছে না। অনেকগুলোই অনলাইনে যুক্ত থাকবে। এছাড়া সিবিবিসি ও বিবিসি ফোরকেও অনলাইনে যুক্ত করার কথা রয়েছে। এর ফলে বছরে ৫০ কোটি পাউন্ড (৫ হাজার ৬৩০ কোটির বেশি টাকা) সঞ্চয় হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির চাপে জেরবার যুক্তরাজ্যের মানুষের স্বার্থে দুই বছর টিভির লাইসেন্স ফি ১৫৯ পাউন্ডে অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তারপর অর্থনৈতিক পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে, মূল্যস্ফীতি বেড়ে চার দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ও ছুঁয়েছে। এমন কঠিন পরিস্থিতিতে আরও কাটছাটের মতো ‘কঠিন সিদ্ধান্ত’ নিতে হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ বলছে।
কাটছাটের এসব প্রস্তাব নিয়ে প্রতিষ্ঠানের কর্মী ও ট্রেড ইউনিয়নগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসবে বিবিসি। যুক্তরাজ্যের সম্প্রচার ইউনিয়ন বেকটুর প্রধান ফিলিপা চাইল্ডস বলেন, এই প্রস্তাব ‘হতাশাজনক’।
তিনি আরও বলেন, আমরা স্বীকার করি পরিবর্তিত মিডিয়া ল্যান্ডস্কেপের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় বিবিসিকে মানিয়ে নিতে হবে। কিন্তু আবারও প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা সরকারের দুর্বল-মূল্যায়িত রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। লাইসেন্স ফি আটকে দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তের ফলে তহবিল নিয়ে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ এই প্রস্তাবগুলোকে অনিবার্য করে তুলেছে।
এর আগে মে মাসের শেষের দিকে একহাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দেয় বিবিসি। কারণ হিসেবে প্রথাগত সম্প্রচারমাধ্যম থেকে ডিজিটাল মাধ্যমে রূপান্তরে অগ্রাধিকার ও আর্থিক সংকট মোকাবিলার কথা বলা হয়।
নতুন করে এই ছাঁটাই প্রস্তাবের আওতায় বিবিসির কিছু ভাষার পরিষেবার কার্যালয় লন্ডন থেকে সরিয়ে সংশ্লিষ্ট শ্রোতাদের কাছাকাছি স্থানান্তর করা হবে। যেমন- থাই পরিষেবা ব্যাংককে, কোরীয় পরিষেবা সিউলে, বাংলা পরিষেবা ঢাকায় এবং ফোকাস অন আফ্রিকা টিভি বুলেটিন পরিষেবা নাইরোবিতে স্থানান্তর করা হবে। রেডিও সম্প্রচারের পরিবর্তে আরবি ও ফারসি উভয় ভাষার নির্ধারিত টিভি সম্প্রচার অব্যাহত থাকবে। আরবি ও ফারসি ভাষার অডিও ও অন্যান্য ডিজিটাল সামর্থ্য বাড়াতে বিনিয়োগ করা হবে।
বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস আন্তর্জাতিক মাল্টিমিডিয়া সম্প্রচারমাধ্যম। ইংরেজি ছাড়াও ৪০টির বেশি ভাষায় রেডিও, টেলিভিশন এবং ডিজিটাল মাধ্যমে সংবাদ পরিবেশন করে থাকে যুক্তরাজ্যের এই জাতীয় গণমাধ্যম।