ইরানের নৈতিকতা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর মাহসা আমিনী নামে এক তরুণীর মৃত্যু ঘিরে দেশজুড়ে শুরু হওয়া সরকার বিরোধী বিক্ষোভ তৃতীয় সপ্তাহে গড়িয়েছে। একটানা চলা এই বিক্ষোভে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সঙ্গে সহিংসতায় অন্তত ৯২ জনের প্রাণহানি হয়েছে।
তবে ইরানের অতি-রক্ষণশীল প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি বলেছেন, দেশের শত্রুদের ‘ষড়যন্ত্র’ ‘ব্যর্থ হয়েছে’। রোববার (২ অক্টোবর) তিনি এই মন্তব্য করেন বলে বলে জানিয়েছে
হিজাব পরার বিধান লঙ্ঘনের দায়ে গত ১৬ সেপ্টেম্বর ইরানের নৈতিকতা পুলিশ ২১ বছর বয়সী মাহসা আমিনীকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পুলিশি হেফাজত থেকে কোমায় নেওয়া হয় এই তরুণীকে। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেদিনই মারা যায় মাহসা আমিনী।
পুলিশি নির্যাতনে আমিনীর প্রাণহানি ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবার। এই ঘটনার পর ইরানে গত তিন বছরের মধ্যে বৃহত্তম বিক্ষোভ শুরু করেন দেশটির হাজার হাজার মানুষ।
এই পরিস্থিতিতে রোববার এক বিবৃতিতে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি বলেন, ‘ইসলামী প্রজাতন্ত্র (ইরান) তার অর্থনৈতিক সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠে এই অঞ্চল এবং বিশ্বে আরও সক্রিয় হয়ে উঠছিল, ঠিক তখনই শত্রুরা দেশকে বিচ্ছিন্ন করার উদ্দেশ্য নিয়ে খেলতে এসেছিল, কিন্তু তাদের সেই ষড়যন্ত্রে ব্যর্থ হয়েছে।’
এদিকে মাহসা আমিনী নামে ওই তরুণীর মৃত্যুর পর সৃষ্ট সরকার বিরোধী বিক্ষোভে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সঙ্গে সহিংসতায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯২ জনে। স্থানীয় সূত্রের বরাত দিয়ে রোববার অসলো-ভিত্তিক ইরানি মানবাধিকার সংস্থা ইরান হিউম্যান রাইটস (আইএইচআর) জানিয়েছে, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান সীমান্ত লাগোয়া ইরানের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় এক এলাকায় শুক্রবার আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সাথে সংঘর্ষে আরও অন্তত ৪১ জন মারা গেছেন।
ওই অঞ্চলের একজন পুলিশ প্রধানের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু বালুচ সম্প্রদায়ের এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ হিজাববিরোধী বিক্ষোভ উসকে দিয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর ইরানে নারীদের জন্য হিজাব পরা বাধ্যতামূলক করা হয়। এই বিপ্লবের পর এবারই প্রথম ইরানের হিজাববিরোধী আন্দোলনকারী নারীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সমাবেশ হয়েছে।
শনিবার বিশ্বের ১৫০টিরও বেশি শহরে অনুষ্ঠিত এই বিক্ষোভ সমাবেশে লাখ লাখ মানুষ অংশ নিয়েছেন।