রাস্তাজুড়ে চলছে বিআরটি প্রকল্পের কাজ। ফলে সারাক্ষণই যানজট লেগে থাকে বিমানবন্দর সড়কে। তার মধ্যে রাজধানীতে স্বস্তির বৃষ্টির নামলে বিমানবন্দর সড়কে দেখা দেয় তীব্র যানজট। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এই রুটে চলাচলরত জনসাধারণের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অল্প বৃষ্টিতে বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের সামনের রাস্তা পানিতে ডুবে গেছে। এয়ারপোর্ট ট্রাফিক পুলিশ বক্স দক্ষিণ পাশ, এয়ারপোর্ট ফুটওভার ব্রিজের পশ্চিম পাশ, মনোলোভা রেস্টুরেন্ট, ছাপড়া মসজিদ, জসীমউদ্দীন পপুলার হাসপাতালের সামনের রাস্তায় পানি জমে আছে। যার ফলে ধীরগতিতে গাড়ি চলাচল করছে।
বিমানবন্দর সড়ক দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করেন আব্দুল কাদির। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ৮-১০ বছর ধরে ভোগান্তির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। রাস্তার বেহাল দশার কারণে কোনো দিনই সময়মতো অফিসে যেতে পারি না, বাসায় ফিরতে পারি না। তিনি বলেন, রাস্তার এ অবস্থা দেখে দেশি-বিদেশি বায়াররাও (ক্রেতা) কারখানায় আসতে চান না। শ্রমিকেরা চলাচল করতে গিয়ে তাদের কষ্টের কথা জানান।
রাস্তা উঁচুনিচু খানাখন্দ থাকায় প্রতিদিনই ঘটছে ছোটবড় দুর্ঘটনা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ট্রাফিক পুলিশ সদস্য বলেন, কয়েকদিন আগে ভিক্টোর পরিবহনের একটি বাস গর্তে পড়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে পরে যায়। এর আগে, একটি সিএনজি রাস্তায় উল্টে চালক আহত হয়। এটা প্রতিদিনের চিত্র।
অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ট্রাফিক উত্তরা বিভাগ মো. বদরুল হাসান দেশ রূপান্তরকে জানান, এয়ারপোর্ট থেকে আব্দুল্লাহপুর পুরো রোড জুড়েই বিআরটি’র কার্যক্রম চলছে। যানজট হোক এটা আমরা চাই না। কিন্তু কাজ করলে যানজট হবে এটাই তো স্বাভাবিক। বিআরটির এই কাজের জন্য প্রতিদিন অতিরিক্ত জনবল বিভিন্ন জোন থেকে ট্রাফিক সদস্যদের এনে ডিউটি দিতে হয়। তারপরও আমাদের জনবলের ঘাটতি আছে।
তিনি বলেন, বৃষ্টি হলে এই রাস্তায় দুর্ভোগ শেষ নেই। প্রকল্পের কাজের কারণে গাজীপুরের বোর্ডবাজার থেকে ঢাকার আব্দুল্লাহপুর হয়ে বনানী পর্যন্ত পুরো সড়কে খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি হলে এসব গর্তে পানি জমে, তখন দুর্ঘটনা এড়াতে গাড়ি চলাচল ধীরগতির সৃষ্টি হয়।
বিমানবন্দর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) সাখাওয়াত হোসেন সেন্টু দেশ রূপান্তরকে জানান, রোববার সকালে বৃষ্টি হওয়ার কারণে এয়ারপোর্ট ট্রাফিক পুলিশ বক্স দক্ষিণ পাশের সড়কে পানি জমে যায়। এতে সড়কের এক তৃতীয়াংশ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যান চলাচল ধীরগতির সৃষ্টি হয়। এতে তৈরি হয় দীর্ঘ যানজটের।
বাস চালকদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানায়, ২০১৮ সালের আগে গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে এয়ারপোর্ট পার হতে এক থেকে দেড় ঘণ্টা সময় লাগতো। আর এখন দুই থেকে তিন ঘণ্টা সময় লাগছে। এতে তাদের ট্রিপ সংখ্যা কমে গেছে। এছাড়াও সঠিক সময় গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেন না যাত্রীরা।
তারা আরও বলেন, কাজ চলার কারণে পুরো সড়ক খানখন্দ, যার কারণে প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা। নষ্ট হচ্ছে গাড়ির বিভিন্ন সরঞ্জাম।
বিকাশ পরিবহনের চালক মো. ইয়াছিন বলেন, দীর্ঘ সাত বছর ধরে এই সড়কে গাড়ি চালায়। বিআরটি কাজ শুরু পর থেকে রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়ি। এই রাস্তায় এত পরিমাণ ভাঙা যে রাতে গাড়ি চলানো কষ্টকর।
সড়কের এমন বেহাল অবস্থার কারণে কর্ম সময়ের চেয়ে বেশি দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে উত্তরা জোনের ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের।
ট্রাফিক পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্প শুরু হওয়ার পর থেকেই উত্তরা ডিভিশনের সার্জেন্ট ও কনস্টেবলদের কর্মঘণ্টা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। নাম প্রকাশ না শর্তে কর্মকর্তারা বলেছেন, এখানে যারা দায়িত্ব পালন করে তাদের অধিকাংশই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ও প্রচণ্ড মানসিক চাপে ভুগে। কেউ এই ডিভিশনে বদলি হয়ে আসতে চায় না। বদলি হয়ে চলে যাওয়ার সংখ্যায় বেশি।
উত্তরার রাস্তাজুড়ে বাস র্যাপিড ট্রানজিট প্রকল্প কাজ চলমান। চার বছর মেয়াদি (বিআরটি) প্রকল্পটি রাজধানীর এয়ারপোর্ট থেকে গাজীপুর পর্যন্ত যানজট নিরসনে ২০১২ সালে কাজ শুরু করে। আট বছরে প্রকল্পের নির্মাণ কাজের ৮০ শতাংশের বেশি ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। চলতি বছরের শেষের দিকে বা আগামী বছরের শুরুর দিকে মৌলিক কাঠামো প্রস্তুত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।