যুগে যুগে বিপ্লব-সংগ্রামের ভার নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছেন তরুণেরা। এর ব্যক্তিক্রম হচ্ছে না মিয়ানামারে চলমান জান্তাবিরোধী লড়াইয়েও। জান্তাবিরোধী পিপল’স ডিফেন্স ফোর্স বা গণ প্রতিরক্ষা বাহিনীর (পিডিএফ) সদস্যদের বড় অংশই তরুণ। অনলাইনেও জান্তাবিরোধী প্রচারণার নেতৃত্ব দিচ্ছেন তরুণেরা। তাদের দমন করতে গিয়ে ঘাম ছুটে যাচ্ছে জান্তা সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের।
ইয়াঙ্গুনভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্সের (এএপিপি) বরাতে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক অভ্যুত্থানের পর জান্তা বাহিনীর হাতে এ পর্যন্ত ২ হাজার ২ শ’র বেশি সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৯ শতাধিক তরুণ ও যুবক। যাদের বয়স ১৬ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। একই সময়ে আটক হয়েছে ১৫ হাজারের বেশি। আটকদের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ বা ২ হাজার ৮০০ বা তারও বেশি একই বয়সের।
এএপিপির যুগ্ম সম্পাদক কো বো কি বলেন, জান্তা নিজেদের প্রধান শক্র হিসেবে তরুণ ও যুবকদেরই টার্গেট করছে। এটা জান্তার হত্যা, ধরপাকড় এবং আটকের পরিসংখ্যান দেখলেই বোঝা যায়। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তরুণদের ওপর জান্তা যতই চড়াও হচ্ছে তরুণেরা নিজেদের লক্ষ্য অর্জনে আরও বেশি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে উঠছেন। তাঁরা আরও কৌশলী হচ্ছেন। তাঁদের মোকাবিলা করতে গিয়ে রীতিমতো নাস্তানাবুদ হচ্ছে জান্তা প্রশাসন।
মিয়ানমারের সর্বদক্ষিণের শহর তানিনথারি বাসিন্দা হনিনন সি (২০) নামের এক তরুণী বলেন, ২০২১ সালে বিক্ষোভ শুরুর পর থেকেই আমি ফেসবুক সক্রিয় হয়ে উঠি। একটি পেজ খুলে জান্তাবিরোধী লড়াইয়ের নানা তথ্য ও খবর শেয়ার করতে থাকি। কিন্তু একপর্যায়ে আমার ওপর জান্তার নজর পড়ে। এরপর থেকে আমি সাবধান হই কিন্তু কাজ বন্ধ করিনি। লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত এটা চলবে।
তবে ওয়াশিংটনভিত্তিক রেডিও ‘ফ্রি এশিয়া’র তথ্য মতে, অনলাইন তৎপরতার কারণে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে ২০০ বা তারও বেশি তরুণ-তরুণীকে আটক করা হয়েছে। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে মদদ দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। এরই মধ্যে জান্তা নিয়ন্ত্রিত আদালতে অনেককে ৭ থেকে ১০ বছর মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
তানিনথারির লংলোন টাউনশিপের জান্তাবিরোধী নেতা রেমন্ড বলেন, দেখুন, অভ্যুত্থানের পর আমরা যখন বিক্ষোভ মিছিল করতাম তখন এতটা দমন-নিপীড়ন ছিল না। কিন্তু গত সাত-আট মাসে তা অনেক বেড়ে গিয়েছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে তরুণ-তরুণীদের তথ্য নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আমরা হাল ছাড়িনি। লড়াইয়ে নতুনত্ব এসেছে। আমাদের সমর্থন বাড়ছে। জান্তার নিরাপত্তা বাহিনী বা প্রশাসনে আগের চেয়ে বেশি হামলা চালাতে পারছি আমরা। মিয়ানমারের আন্দোলন এখন সম্পূর্ণ গেরিলা পদ্ধতিতে চলছে।