আপনার পাশের মানুষটি কতটা ভয়াবহ একবারও কি ভেবেছেন? যার সঙ্গে আজ বন্ধুত্ব কাল তিনি আপনার জন্য হতে পারেন নিষ্ঠুর চরিত্র। ক্ষতি আপনজনরাই করে। সামান্য স্বার্থের জন্য বদলে যায়। এসব বোঝার জন্য খোয়াজ খিজির (আ.)-এর চশমার দরকার নেই। খোলস ভেঙে অনেকের চরিত্র বের হচ্ছে। অতি আওয়ামী লীগাররা গুটিয়ে নিচ্ছেন নিজেদের। কিছুদিন আগেও আওয়ামী লীগের গুণকীর্তন করতেন। এখন সামাজিক মাধ্যমে সুর বদলাচ্ছেন। আসলে আওয়ামী লীগ হঠাৎ করে হওয়া যায় না। উড়ে এসে জুড়ে বসে জাতির পিতার আদর্শ ধারণ হয় না। প্রয়াত সৈয়দ আশরাফ ঠিকই বলেছেন, আওয়ামী লীগ একটা বিশ্বাসের নাম। এ বিশ্বাস ভিতর থেকে আসতে হয়। সরকারি দলে সুসময়ের বন্ধুর অভাব হয় না। অসময়ে কেউ কারও থাকে না। এরশাদের পতনের পর সবার আগে সটকে পড়েন সুবিধাভোগী কবি, সাহিত্যিক, শিক্ষক, সাংবাদিকরা। প্রিয়ভাজন আমলারা খুঁজে বের করতে থাকেন এরশাদ ও তাঁর মন্ত্রীদের দুর্নীতি-অনিয়ম। সরে যেতে থাকেন রাজনীতিবিদরা। রাজনীতি বড় নিষ্ঠুর। একবার ছিটকে পড়লে উঠে দাঁড়ানো কঠিন। অনেক তারকা রাজনীতিবিদ মূলধারা থেকে ছিটকে শেষ বয়সটা কোনোভাবে অতিক্রম করছেন। খারাপ সময়ে মারা গেলে জানাজায়ও নিজের তৈরি কর্মীরা যান না। এ জগৎসংসারের রাজনীতিতে নিজের বলে কিছু নেই। রাজনীতির সুখের পাখিরা লোভে আসে। লালসা মিটলে সরে পড়ে। চাটুকারিতার রাজনীতি কোনোকালেই সুফল বয়ে আনেনি। বঙ্গবন্ধুর মায়ের মৃত্যুর পর সবচেয়ে বেশি কেঁদেছিলেন মোশতাক। আর এরশাদের মায়ের মৃত্যুর পর কাজী জাফর, শাহ মোয়াজ্জেম। কেউই শেষ পর্যন্ত আপন ঠিকানায় থাকেননি। জাতীয় পার্টির অর্থকড়ি যারা রাখতেন তারাও এরশাদকে ছেড়েছিলেন। দল ছাড়তে এনেছিলেন ঠুনকো অজুহাত। খালেদা জিয়ার আপনজনরাই ওয়ান-ইলেভেন করেছেন। কৃপায় বড় পদপ্রাপ্তরা আটক করেছিলেন খালেদা জিয়া, তারেক রহমানকে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০১৪ সালে আগুনসন্ত্রাসের বিপর্যয় কাটার পর হঠাৎ দেশে আওয়ামী লীগারের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছিল। সামাজিক মাধ্যমে অনেকে ছবি দিয়ে ফাটিয়ে ফেলতেন। কথা বলতেন চটাংচটাং। সেই সুবিধাভোগীরা এখন হাঁটছেন উল্টো স্রোতে। সামাজিক মাধ্যমে সরকারবিরোধী বক্তব্য লিখছেন। বিএনপি-জামায়াত লিখতেই পারে। বুঝে না বুঝে আওয়ামী লীগাররা যোগ হচ্ছেন। বিস্ময় লাগে। অবাক হই কিছু সরকারি কর্মকর্তার কাণ্ডেও!
দেশে-বিদেশে আওয়ামী লীগবিরোধী একটা প্রচারণা চলছে। সরকারের বিরুদ্ধে অনেকে আঁটঘাট বেঁধে নেমেছেন। বলছেন, এবার কোনো কিছু সহজ হবে না। সবারই মনে রাখা দরকার, রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ উড়ে এসে জুড়ে বসেনি। বিশাল রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানটির দীর্ঘ সময় নেতৃত্ব দিয়েছেন আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। নেতৃত্বে ছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও যুক্তফ্রন্টে শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক। ইতিহাস-ঐতিহ্য ও মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে এ দল আজকের অবস্থানে। পথ চলতে গিয়ে বারবার হোঁচট খেয়েছে। কিন্তু ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর সবাই ভেবেছিলেন আওয়ামী লীগ শেষ হয়ে যাবে। বিশ্বাসঘাতকদের তৎপরতা ছিল দলের ভিতরে-বাইরে। কর্মীদের শক্ত অবস্থানের ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে দলের দায়িত্ব নেন। মরুর ভিতরে শুরু করেন সমুদ্র সৃষ্টির লড়াই। তিল তিল শ্রম-মেধা-ঘামে চষে বেড়ান টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া। দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করেন। ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মতোই বলিষ্ঠতা নিয়ে কখনো সরকারি, কখনো বিরোধী দলের রাজনীতি করছেন। বঙ্গবন্ধু, ইন্দিরা, হাসিনা- এ তিন নামের অনেক কিছুর মিল আছে। জন্মের পর ইন্দিরা দেখতেন তাঁর দাদা মতিলাল নেহরুকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। একবার তিন বছর বয়সে ইন্দিরা দুনিয়া কাঁপিয়ে চিৎকার করে কান্না শুরু করলেন তাঁকেও নিতে হবে দাদার সঙ্গে। ছোট্ট শিশুকে কেউ থামাতে পারছিল না। তখন রাজনীতিবিদদের সম্মান-মর্যাদা ছিল। ব্রিটিশ সরকারের পুলিশ বাধ্য হয় দাদার সঙ্গে নাতনিকে কিছুক্ষণের জন্য নিতে। জন্ম থেকে ইন্দিরা ছিলেন জেদি, একগুঁয়ে। বাবা ক্ষমতায় থাকতে কংগ্রেসের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। চীনের সঙ্গে যুদ্ধের সময় সেনাদের উৎসাহ জোগাতে চলে যান সীমান্তে যুদ্ধের ময়দানে। নেহরুর মৃত্যুর পর লাল বাহাদুর শাস্ত্রী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে ইন্দিরা ছিলেন তথ্যমন্ত্রী। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে কাশ্মীর সীমানায় ভারতীয় সেনাদের পাশে গিয়ে দাঁড়ান ইন্দিরা। শেখ হাসিনা শুধু রাজনৈতিক দার্শনিক নন, জন্মগতভাবেই তিনি একজন যোদ্ধা। তিনি লড়তে জানেন। ছোটবেলা বাবাকে দেখতেন কারাগারে যেতে। বাবার সঙ্গে আদালতে যেতেন। বাবার কাপড় গুছিয়ে দিতেন জেলে যাওয়ার মুহূর্তে। ছাত্রজীবনে অংশ নিয়েছেন আওয়ামী লীগের ছয় দফা কর্মসূচিতে। মিছিলে গেছেন। বক্তৃতা দিয়েছেন। তার পরও ভাবেননি এভাবে এক কঠিন সময়ে দলের দায়িত্ব নিতে হবে। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিস্তারিত ইন্দিরার মুখেই শেখ হাসিনা প্রথম শোনেন। কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন। ইন্দিরা তাঁকে জড়িয়ে ধরেন। সান্ত্বনা দেন। বারবার বলেন, তোমাকে ধৈর্য ধরতে হবে। জয় করতে হবে আগামীকে। ইন্দিরাকে হত্যা করেন তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা শিখ রক্ষীরা। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেন পাশে থাকা মোশতাক, ডালিমরা। ফারুক, রশীদ চক্র ছিল ভাড়াটিয়া খুনি। ষড়যন্ত্র ছিল ঘরে-বাইরে। দেশ-বিদেশে সমানভাবে।
ইন্দিরা গান্ধীর মতোই শেখ হাসিনা ধৈর্য ধরে সামলাচ্ছেন ঘরে-বাইরের সমস্যা। বারবার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন। পিছু হটেননি। মামলা-হামলা করেছেন মোকাবিলা। থামেননি। আল্লাহ তাঁকে বাঁচিয়ে রেখেছেন ভালো কাজগুলো করানোর জন্য। তিনি নীলকণ্ঠী। বিষ হজম করতে পারেন। ১৯৮১ সালের পর মোশতাকের অনেক দোসরকে দলে হজম করেছেন। তাঁদের বিরোধিতা সহ্য করেছেন। মোশতাক মন্ত্রিসভার অনেককে বাধ্য হয়ে দলীয় পদ, মনোনয়ন দিয়েছেন। তাঁদের পরিবার-পরিজনকে এখনো দিচ্ছেন। বাদ নেই সে সময়ের ব্যর্থ সামরিক ও সিভিল পরিবারের সদস্যরাও। তিনি এখনো অনেক কিছু সহ্য করেন। বাবার মতোই একটা মন পেয়েছেন। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা ছিল তাঁকে হত্যার জন্য। ওয়ান-ইলেভেনে দলের বিশ্বাসঘাতকতা নীরবে হজম করেছেন। ধৈর্য নিয়েই গত ১৪ বছর টানা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। বুকভাঙা কষ্টে এগিয়ে নিচ্ছেন দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি। কিছু মানুষকে পিতার মতোই বিশ্বাস করেন। অনেক আপনজনকে আবার ইচ্ছা করেই রাখেন দূরে। বঙ্গবন্ধু সবুর খানকে কারাগার থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন। শাহ আজিজের পরিবারকে প্রতি মাসে অর্থ পাঠাতেন। অনেক রাজাকার-আলবদরকে ছেড়ে দিয়েছিলেন কারাগার থেকে। জাসদ করার পরও একসময়ের সহচরদের প্রতি ছিলেন উদার। আ স ম আবদুর রব পুলিশের গুলি খেয়ে পিজি হাসপাতালে ভর্তি হলেন। বঙ্গবন্ধু নিজে তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। কথা বলেন ফোনে। ১৫ আগস্টের আগে সিরাজুল আলম খানকে পাঠিয়ে দেন কলকাতায় চিত্ত সুতারের বাড়িতে। বঙ্গবন্ধু চিন্তা করেছেন সিরাজুল আলম খানের নিরাপত্তার। এত যন্ত্রণার পরও সিরাজুল আলম খানকে এক দিনের জন্যও আটক করেননি। ইতিহাসের পাতায় পাতায় এমন ঘটনার শেষ নেই। শেখ হাসিনাকে কাছ থেকে দেখেছি। সারা দেশ সফরের অভিজ্ঞতা আছে একজন সংবাদকর্মী হিসেবে। তিনিও অনেক বিষয়ে পিতার উদারতাকেও ছাড়িয়ে যান। ছাড়িয়ে গেছেন।
এ সমাজে এখন মানুষ আর মানুষ নেই। একজন কতটা হিংসুটে, নোংরা, বর্বর, সাম্প্রদায়িক, অকৃতজ্ঞ তা বুঝতে গোয়েন্দা রিপোর্টের দরকার নেই। কষ্ট করে পাড়াপড়শির কাছে খোঁজের দরকার নেই। সামাজিক মাধ্যম মানুষের ভিতরটা বের করে আনছে। এখন সন্তানের হাতে খুন হচ্ছে বাবা-মা। বাবা-মায়ের হাতে সন্তান। ভাই খুন করছে ভাইকে। বন্ধুবেশী মানুষগুলো রূপ বদলে ফেলে সেকেন্ডের ব্যবধানে। পারিবারিক-সামাজিক অপরাধ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। সমাজের আনাচে-কানাচে মিথ্যাচার রটনাকারী, গুজব ছড়ানো অসুস্থদের ভিড় বেড়েছে। অন্যের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে বিকৃত আনন্দ পায় সবাই। মনুষ্যত্ব নেই কোথাও। মুখে মুখে বড় কথা বলা মানুষ সবচেয়ে বেশি মুখোশধারী, নোংরা, হিপোক্র্যাট, বিপজ্জনক। কেউ বুঝতে চায় না দুনিয়ায় আজ আছি, কাল না-ও থাকতে পারি। তার পরও কিছু মানুষ বেছে নেয় বিশ্বাসঘাতকতার পথ। মীরজাফর-মোশতাকরা সব যুগে ঘুরেফিরে আসে। তারা আবার নিষ্ঠুর নিয়তি নিয়ে বিদায় নেয়। বিশ্বাসঘাতকরা শেকসপিয়রের লেখনীতে আসেন ব্রুটাস হয়ে। নবাব সিরাজের পাশে মীরজাফর, বঙ্গবন্ধুর পাশে মোশতাক হয়ে। জগতে কেউ আসেন ইতিহাস সৃষ্টি করতে। কেউ আসেন সবকিছু শেষ করতে। কেউ কাজ করেন। কেউ জীবন পার করেন অন্যের সমালোচনা করে। আমাদের প্রিয়জন তোয়াব খান চলে গেলেন। যুগের পর যুগ সাংবাদিকতা করেছেন। আসন পেয়েছেন সর্বজনশ্রদ্ধেয়র। বঙ্গবন্ধু ও এরশাদের প্রেস সচিব ছিলেন। অসাধারণ একজন মানুষ ছিলেন। তাঁর একটি সাক্ষাৎকার দেখছিলাম চ্যানেল আইতে। তিনি বলছেন, ১৫ আগস্ট আমরা দুই ভাই বের হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রতিবাদ করতে সবাই বের হবেন। পাঁচজন মানুষ বের হলে আমরা দুই ভাইসহ সাতজন হব। তিনি আক্ষেপ করে বললেন, কেউ বের হননি। তোয়াব ভাইয়ের সঙ্গে আমিও একমত। ১৫ আগস্ট ব্যর্থতার দায় সবার। সে রাতের সবচেয়ে বড় ব্যর্থ মানুষটির নাম জেনারেল শফিউল্লাহ। তিনি বিশ্বাসঘাতক ছিলেন না। ব্যর্থ ছিলেন। তাঁর কোনো কমান্ড ছিল না নিজের বাহিনীর ওপর। তাঁর ফোন পেয়ে একজন কর্মকর্তাও বের হননি। একজন সিপাহিও এগিয়ে আসেননি মাত্র ২০-২২ জন খুনির বিরুদ্ধে প্রতিরোধে। সেই ব্যর্থ জেনারেল ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগে এসে এমপি হয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর মেয়ে বাবার মতোই দয়ার সাগর। তিনি জেনারেল খলিলের মতো মোশতাকের বিশ্বস্ত কর্মকর্তাকেও মনোনয়ন দিয়েছিলেন। ১৫ আগস্টের পর সব উচ্চ কর্মকর্তা নতুন পদপদবির লোভে কাটিয়েছিলেন কয়েকটা মাস। ভুলে গেলে হবে না, সবাই দল বেঁধে বঙ্গভবনে গিয়ে আনুগত্য প্রকাশ করেছেন। সেনানিবাস ও বঙ্গভবনে বৈঠক করেছেন স্থিতিশীলতার নামে শতভাগ মুক্তিযোদ্ধার প্রতিষ্ঠান রক্ষীবাহিনীকে থামাতে। ইতিহাসের কলঙ্কের দায় সে সময়ের কেউ এড়াতে পারবেন না। কেউ না।
একবার একজন বিদেশি সাংবাদিক বলেছিলেন, ঢাকায় খুনিরা ঘোরাঘুরি করেছিল। সামরিক শাসন জারি ছিল না। নির্দিষ্ট কিছু এলাকার বাইরে খুনি বাহিনীর অবস্থানও ছিল না। রক্ষীবাহিনীর হেডকোয়ার্টার তাক করে ছিল গোলাবিহীন ট্যাঙ্ক, শাহবাগ রেডিও অফিস, ধানমন্ডি, বঙ্গভবন ছাড়া বাংলাদেশের কোথায় খুনিদের গাড়ি ছিল? অবস্থান ছিল? ছিল না। তার পরও সব বাহিনীপ্রধান, ক্যাবিনেট সচিব লাইন ধরে বঙ্গভবনে আনুগত্য প্রকাশ করে এলেন। চাইলে তাঁরা পালাতে পারতেন। সরে যেতে পারতেন। কেউ তা করেননি। সারা দেশের সামরিক-বেসামরিক আমলারা আনুগত্য প্রকাশ করলেন লাইন ধরে। আর আওয়ামী লীগাররা ঘরে ঢুকে গেলেন। রক্ষীবাহিনী অফিসে বসে তোফায়েল আহমেদ ফোন করলেন সব জাতীয় নেতাকে। কেউ সায় দেননি। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, কৃষক লীগ, দলেবলে যোগদানকারী বাকশালের কোটি কোটি সদস্যকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। জাতির পিতার লাশ পড়ে থাকল ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে। আওয়ামী লীগের সবাই ব্যস্ত হলেন নিজেদের রক্ষা নিয়ে। আমরা গর্ব করে বলি বাঙালি বীরের জাতি। একই সঙ্গে বলি না বাঙালি বেইমানেরও জাতি। কোনো সত্য অস্বীকার করা যাবে না। মোশতাক, ডালিম চরিত্ররা আমাদের চারপাশটায় গিজগিজ করে। কারও একটা উপকার করবেন তিনি মনে করেন আরও ১০টা করতে পারতেন। মাত্র একটা কাজ করে দিয়েছেন। আরও ১০টা না করার ক্ষোভ জিইয়ে রাখেন। এ ক্ষোভ একদিন বিষ হিসেবে ঢেলে দেন মিথ্যাচার আর কুৎসা রটনা করে। লোভী, হিংসুটে, নোংরা চরিত্রের মানুষের সংখ্যাই বাড়ছে। সব জেনে সমাজে চলতে হচ্ছে আমাদের। হতে হচ্ছে নীলকণ্ঠ।
শেখ হাসিনার সবকিছু জানা আছে। বোঝা আছে। নীলকণ্ঠে তিনি দলের ভিতরের-বাইরের মানুষকে ছাড় দেন। তাঁর অতি উদারতা ভয় ধরিয়ে দেয়। আওয়ামী লীগ আগামী দিনে হোঁচট খেলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। শেষ হয়ে যাবে বঙ্গবন্ধুর নীতি- আদর্শ। মারা পড়বেন লাখো মানুষ। ভয়ংকর পরিস্থিতি সহ্য করার ক্ষমতা এ দেশের এখন আর নেই। দীর্ঘকাল ক্ষমতায় থাকলে সরকারের ভিতরে সরকার তৈরি হয়। ক্ষমতার দম্ভ আর সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়ে। এ সুযোগসন্ধানী সুবিধাভোগীরা বিপথগামী করে সরকারকে। সে বিপথ থেকে সরকার সঠিক লাইনে না এলে বিপর্যয় ঘটে যায়। যা সামলানো যায় না। নিজেদের লোকজন গুজবে কান দিলে, গুজব প্রচার করলে তো কথাই নেই। চক্রান্তকারীরা তখন বাস্তবতার বাইরে নিয়ে যায় সাধারণ মানুষকে। মিথ্যাকে পুরোপুরি কাজে লাগায়। সত্য চলে যায় আড়ালে। তখন মানুষ কান দেয় বাজারি গুজবে। সময় থাকতে তাই সাবধান!