ক্রিমিয়ার সেতুতে হামলা বদলে দিলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপট। গেলো ছয় মাসে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে সীমিত হয়ে আসা যুদ্ধে আসলো নতুন মোড়। কের্চ ব্রিজে হামলার জেরে কিয়েভে নতুন করে তীব্র হামলা শুরু করেছে মস্কো। এই সংঘাতের মধ্য দিয়ে যুদ্ধের পরিসর আরও বাড়ার আশঙ্কা বিশ্লেষকদের। সেই সঙ্গে রাশিয়ার সঙ্গে যৌথ টাস্কফোর্স গঠনে বেলারুশের ঘোষণা নিয়েও শুরু হয়েছে জল্পনা।
গেলো সোমবার (১০ অক্টোবর) রাশিয়ার জোরালো হামলার বিষয়ে ইউক্রেনের বাসিন্দারা বলছিলেন, প্রচণ্ড বিস্ফোরণের আওয়াজ শুনে ভীষণ ভয় করছিল। পরিবারের জন্য দুশ্চিন্তা হচ্ছিল। নিরাপদ আশ্রয়ে গিয়ে সবার খোঁজ নিয়েছি। আরেকজন বলেন, বিকট শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। পুরো ভবনটিই কাঁপছিল। কী করবো বুঝতে না পেরে আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যাই।
গত ফেব্রুয়ারিতে সামরিক অভিযান শুরুর পর সময়ের সাথে অনেকটাই কমে আসে যুদ্ধের পরিসর। শুরুর দিকে কিয়েভসহ বিভিন্ন শহরে হামলা চালালেও ধীরে ধীরে অভিযান হয়ে পড়ে পূর্বাঞ্চলকেন্দ্রিক। বিভিন্ন অঞ্চলে ফ্রন্টলাইন থেকে পিছু হটতে শুরু করে রুশ সেনারা। কয়েকটি শহরে পুনরায় নিয়ন্ত্রণও প্রতিষ্ঠা করে ইউক্রেন। ধারণা করা হচ্ছিল, রণক্ষেত্রে অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে মস্কো।
তবে ক্রিমিয়ার সেতুতে নাশকতার পর ফের ফুঁসে উঠেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। রুশ ভূখণ্ডে হামলা চেষ্টার কঠোর জবাবের হুমকি দিয়েছেন তিনি। কিয়েভে অভিযান জোরদারের মাধ্যমে সাত মাস ধরে চলা যুদ্ধ নতুন মোড় নিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, কিয়েভ তাদের কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে নিজেদের আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কাতারে নিয়ে গেছে। ক্রিমিয়ায় যা হয়েছে তার কোনো উত্তর না দিয়ে ছেড়ে দেয়াটা কোনোভাবেই সম্ভব না। রাশিয়ার ভূখণ্ডে আর একটি হামলা হলে আমাদের জবাবও ঠিক কতখানি কঠোর হবে, সে বিষয়ে কারো কোনো দ্বিধা রাখা উচিৎ হবে না।
এদিকে, কিয়েভে নতুন হামলার ডামাডোলের মাঝেই রাশিয়ার সাথে যৌথ টাস্কফোর্স গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র বেলারুশ। ইউক্রেন ও তার মিত্র দেশগুলোর বিরুদ্ধে হামলার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে এ পদক্ষেপ প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর। তবে মিনস্কের এ সিদ্ধান্ত চলমান উত্তেজনায় ‘আগুনে ঘি ঢালা’ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো বলেন, রাশিয়ার সাথে যৌথভাবে সেনা মোতায়েনের পরিকল্পনা প্রকাশের পর থেকেই ন্যাটো এবং বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ আমাদের বিরুদ্ধে হামলার ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। সন্ত্রাসী গোষ্ঠী পোল্যান্ড, লিথুয়ানিয়া ও ইউক্রেনকে হামলার প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। যা আমাদের জন্য সরাসরি হুমকিস্বরূপ। ইউক্রেন ও তাদের ক্ষ্যাপাটে মিত্রদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আমাদের এক বর্গমিটার ভূখন্ডে নজর দিলেও তার উপযুক্ত জবাব দেয়া হবে।
সম্প্রতি পূর্বাঞ্চলে চার এলাকাকে নিজেদের অংশ হিসেবে ঘোষণার পর অঞ্চলটিতে আধিপত্য ধরে রাখার দিকেই মনোযোগী ছিল পুতিন প্রশাসন। তবে ক্রিমিয়ার সেতুতে নাশকতা একেবারেই অন্য এক রূপ দিলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে। যা সহসা থামবে না বলেই শঙ্কা বিশ্লেষকদের।