বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী দেশ জার্মানির ওয়েল জায়ান্ট কোম্পানি ইএনবিডব্লিউ জানাইয়াছে, আগামী ১ ডিসেম্বর হইতে গৃহবিদ্যুত্ পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্য বাড়িবে ৩৮ শতাংশ। ইহার প্রধান কারণ জ্বালানিসংকট। গতকাল হইতে ফ্রান্সের গ্যাস জায়ান্ট জিআরটিগ্যাস জার্মানিতে সাধ্যমতো আপত্কালীন গ্যাস সরবরাহ করিতে শুরু করিয়াছে, যাহা জার্মানির চাহিদার মাত্র ২ শতাংশ মিটাইতে পারিবে। এই দিকে খোদ ফ্রান্সেই মূল্যস্ফীতির কারণে তেল শোধনাগারের শ্রমিকরা ধর্মঘট করিতেছেন, যাহার ফলে গোটা দেশের পেট্রোল পাম্পগুলি তেলশূন্য হইয়া পড়িয়াছে। গোটা ইউরোপে মূল্যস্ফীতি গড়পড়তা বাড়িয়াছে ৯ দশমিক ১ শতাংশ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের এই রকম সংকট দেখা যায় নাই। ওদিকে ব্রিটেনে প্রতিশ্রুত কর কর্তন এবং সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি লইয়া রাজনৈতিক মাঠ উত্তপ্ত হইয়া উঠিয়াছে। মনে রাখা দরকার, উল্লিখিত দেশগুলি এতকাল ধরিয়া প্রাচুর্যের দেশ হিসাবেই আমাদের নিকট পরিচিত ছিল। তাহারা বিভিন্ন দেশে অর্থ সাহায্য দিয়া ফিরিয়াছে।
সুতরাং মানিতেই হইবে, আমরা এমন একটি সংকটের মধ্যে রহিয়াছি, যাহা বৈশ্বিক। বিশেষ করিয়া উন্নয়নশীল বিশ্বের একক কোনো দেশকে এই পরিস্থিতির জন্য দায় করা যায় না। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হইল, এই সকল উন্নয়নশীল দেশের মানুষ কেবল সুবিধার কথাই শুনিতে চাহে, অসুবিধা তাহারা শেয়ার করিতে রাজি নহে। সরকারের প্রধান নির্বাহী শেখ হাসিনা প্রায় প্রতিদিনই সতর্ক করিতেছেন, কৃচ্ছ্রসাধনের কথা বলিতেছেন, সামনে দিনগুলিতে বিপদের আশঙ্কার কথা বলিতেছেন, কিন্তু সাধারণ্যের যেন তাহা শুনিবার বা বুঝিবার কোনো ইচ্ছা বা প্রচেষ্টা নাই! ইন্টারনেটের যুগ (ধন্যবাদ যে উহা অন্তত দেশে দেশে সচল রহিয়াছে)। ফলে সকল দেশের সকল ধরনের তথ্য-উপাত্ত ঘরের ভেতরের মনিটরে ভাসিয়া উঠিতেছে।
ইউরোপের সরকারগুলি কৃচ্ছ্রসাধনের কথা বলিতেছে, দেখা যাইতেছে সেইখানের মানুষ নিজেরাও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় একে অপরকে কৃচ্ছ্রসাধনের উপদেশ দিয়া চলিয়াছে। এমনকি কেহ কেহ গরম কফি না খাইয়া ঠান্ডা কফি পান করিতে অথবা স্নান করিবার সময় গরম পানি ব্যবহার না করিয়া ঠান্ডা জলের স্পঞ্জ স্নান, অর্থাত্ স্পঞ্জ দিয়া গা মুছিয়া ফেলিবার পরামর্শ দিতেছেন। অর্থাত্ তাহাদেরও হতাশা আছে, কিন্তু আক্রোশ নাই। পরিস্থিতি অনুধাবন করিবার মতো শিক্ষা, দীক্ষা, পরিবেশ তাহারা পাইয়াছে। কিন্তু উন্নয়নশীল বিশ্বে উহা বিবেচনার ফুরসত কোথায়!
আবার মুদ্রার অন্য দিকও আছে। এই জনগণই দেখিতেছে সরকারি অফিস-আদালতে, সরকারি ভবনে, সরকারি ব্যয়ে অপচয়ের বাড়বাড়ন্ত। ফলে তাহারাও শিখিবার প্রয়োজন বোধ করিতেছে না। কাউকে দিয়া কিছু শুনাইতে হইলে বা পালন করাইতে হইলে নিজের তাহা পালন করিতে হয়। ইহা ইসলামের প্রিয় নবির শিক্ষা। যাহারা দেশ পরিচালনা করেন, তাহারা আমাদের চাইতে ঢের বেশি জানেন, কী করিয়া দেশ পরিচালনা করিতে হয়। সুতরাং আমাদের অধিক পরামর্শ দেওয়া বেমানান। কিন্তু যেই সকল ক্ষেত্রে অপচয় হইতেছে, সেই অপচয়গুলি অপ্রকাশ্য নহে। উহা বন্ধ করুন। বিভিন্ন দপ্তর লোকবলের অভাব বোধ করিতেছে, আবার বিভিন্ন দপ্তর রহিয়াছে যাহাতে এত লোকবল আছে যাহাদের মাছি মারিবার মতো কাজটুকুও নাই। সেই সকল জায়গার লোক কমাইয়া আনুন। অথবা অন্যত্র কাজে লাগান। যেই সকল অফিসে কর্মকর্তারা তাহাদের কর্তব্যকাল সম্পন্ন হওয়ার পূর্বেই অফিস ত্যাগ করেন, সেই সকল অফিসের দিকে গভীর রাত্রিতে তাকাইয়াও বাতি জ্বলিতে দেখা যায়। এই সকল সমস্যা মিটানোও কম জরুরি নহে! সুতরাং সকলকেই এখন ধৈর্য ধরিতে হইবে, সংযমী হইতে হইবে। চোখে দেখিয়াও উন্নত বিশ্ব হইতে আমরা অনেক ইতিবাচক বিষয় শিখি নাই, গ্রহণ করি নাই। এই যুদ্ধাবস্থা হইতে অন্তত আমরা এই বিষয়গুলি শিখিতে পারি।