দেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু দুই মাস ধরে এই অনলাইন ব্যাংকিং লেনদেনে ভাটা চলছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মোবাইল আর্থিক সেবার (এমএফএস) হালনাগাদ পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের আগস্ট মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে গ্রাহকরা ৮৭ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা লেনদেন করেছেন, যা জুলাই মাসে লেনদেনের চেয়ে ১ হাজার ৭২৩ কোটি টাকা কম। জুলাই মাসে ৮৯ হাজার ১৬৯ কোটি টাকার লেনদেন হয়। এর আগে জুনে লেনদেন হয় ৯৪ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা।
বিকাশ, রকেট, এমক্যাশ, উপায়সহ দেশে বর্তমানে ১৩টি প্রতিষ্ঠান মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আর্থিক সেবা দিচ্ছে। ডাক বিভাগের সেবা ‘নগদ’ একই ধরনের সেবা দিচ্ছে। তবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটির মোবাইল ব্যাংকিং সেবা এই হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তবে এমএফএসের কর্মকর্তারা এটিকে স্বাভাবিক চিত্র হিসেবেই দেখছেন। তারা বলছেন, জুন মাসে ঈদ গেছে। ঐ সময় বেশি লেনদেন হয়েছে। সাধারণত ঈদ-পরবর্তী সময়ে লেনদেন কমে যায়। ঈদের আগের মাস জুনে মানুষ কেনাকাটা বেশি করেছে। বেতন-বোনাস মোবাইল ব্যাংকিংয়ে দেওয়ায় লেনদেনে বেড়ে যায়। ঈদের পর জুলাই-আগস্ট মাসে লেনদেনটা কম হয়—এটা ব্যতিক্রম কিছু নয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের আগস্ট মাসে যে লেনদেন হয়েছে, তা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৬ হাজার ২১৭ কোটি টাকা বেশি। গত বছরের আগস্টে টাকা জমা, উত্তোলন, স্থানান্তর, পরিশোধ, বিল পরিশোধ সবকিছু মিলে লেনদেন হয়েছে ৭১ হাজার ২২৯ কোটি টাকা।
নিবন্ধিত গ্রাহকসংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ কোটি ৩২ লাখ ২৪ হাজার ৬১০। এর মধ্যে পুরুষ ১০ কোটি ৬২ লাখ ২০ হাজার ৮৮১ এবং নারী গ্রাহক ৭ কোটি ৬৫ লাখ ৯৬ হাজার ৩৮২। মোবাইল ব্যাংকিং সেবা এখন আর শুধু টাকা পাঠানোতেই সীমাবদ্ধ নেই। এর মাধ্যমে দৈনন্দিন কেনাকাটা, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানিসহ বিভিন্ন বিল পরিশোধ ও মোবাইলে রিচার্জসহ নানা ধরনের সেবা মিলছে।
রাজধানী ও জেলা শহরে গাড়িচালক ও গৃহপরিচারিকাদের বেতনও এখন দেওয়া হচ্ছে বিকাশ, রকেট ও নগদের মতো সেবা মাধ্যম ব্যবহার করে। শ্রমজীবীরাও এখন এমএফএস সেবার মাধ্যমে গ্রামে টাকা পাঠাচ্ছেন। আগস্টে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ২৬ হাজার ৮৪৩ কোটি টাকা পাঠানো হয়েছে। আর উত্তোলন করা হয়েছে ২৩ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা। এমএফএস সেবায় ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি হিসেবে ২৪ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকা লেনদেন হয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা বাবদ বিতরণ হয় ২ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা। বিভিন্ন পরিষেবার ২ হাজার ২৬২ কোটি টাকার বিল পরিশোধ হয় এবং কেনাকাটায় ৩ হাজার ৩৪ কোটি টাকা লেনদেন হয়। লেনদেন উত্সাহিত করতে সমপ্রতি মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেনে সীমা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন গ্রাহকরা দিনে এজেন্ট থেকে ৩০ হাজার টাকা এবং ব্যাংক হিসাব বা কার্ড থেকে ৫০ টাকা জমা করতে পারেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মধ্য দিয়ে দেশে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের যাত্রা শুরু হয়। এর পরই ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে বিকাশ। বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং বাজারের সিংহভাগই বিকাশের দখলে।