জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেতা ফেরদৌস আহমেদ। সিনেমা ক্যারিয়ারের ২৫ বছরেও তিনি রঙিন। আগের মতো অঢেল না হলেও এখন কাজ করছেন বেছে-বেছে। গত ২৩ সেপ্টেম্বর মুক্তি পেয়েছে তার অভিনীত ‘বিউটি সার্কাস’। চলতি মাসেই শুরু করেছেন ‘আহারে জীবন’ ছবির কাজ। সম্প্রতি রায়হান রাফির দামাল সিনেমার প্রচারণায় গিয়েছিলেন এই রোমান্টিক চিরসবুজ নায়ক। সেখানে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি ও নিজের কাজসহ বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন এই অভিনেতা।
শরিফুল রাজ, সিয়াম আহমেদসহ আরও অনেক তরুণ অভিনেতা ভালো কাজ করছে। এই ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে তাদের করণীয় কি?
ভালো কাজের কোনো বিকল্প নেই। ভালো সিনেমা করতে হবে। কারণ মানুষ আমাদের কাছ থেকে নতুন নতুন কিছু দেখতে চায়। সেই হিসেবে এখন ওদের/তাদের ওপর বড় দায়িত্ব পড়ে গেছে। যাতে ওদের/তাদের পরে যারা আসবে তারা ভালো কাজ করতে পারে। আমরা রাজ্জাক-আলমগীর, সালমান শাহ’র মতো দুর্দান্ত অভিনেতাদের কাছে থেকে শিখেছি। এদের দায়িত্ব এমন কিছু নজির তৈরি করা যাতে তাদের পরবর্তী যারা আসবে তারা যেনো কিছু শিখতে পারে।
চলচ্চিত্র শিল্পীদের নিয়ে সম্প্রতি বেশ কিছু বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এতে করে ইন্ডাস্ট্রির উপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কি না?
না, না। এটা কোনো প্রভাবই ফেলছে না। চলচ্চিত্র শিল্পীদের নিয়ে তো বিতর্ক হবেই। চলচ্চিত্রের মানুষদের নিয়ে মানুষের জানার আগ্রহ অনেক বেশি। তবে আমাদের ফিল্ম স্টারদের উচিৎ ব্যক্তিগত বিষয়ে প্রকাশ্যে না আনার চেষ্টা করা। কারণ মানুষ আমাদের রোল মডেল ভাবে। সুতরাং মানুষ যেনো আমাদের রোল মডেল হিসেবেই দেখে।
আপনার সর্বশেষ কাজ সম্পর্কে জানতে চাই / আপনার কাজের আপডেট সম্পর্কে জানতে চাই।
সামনে আমার বেশ কয়েকটি সিনেমা মুক্তি পাবে। এর মধ্যে রয়েছে ‘দামপাড়া’, ‘১৯৭১ সেইসব দিন’, ‘মানিকের লাল কাঁকড়া’। কয়েকদিন আগে ‘সুজন মাঝি, ‘আহারে জীবন’ সিনেমার শুটিং শুরু করেছি। ‘রাসেলের জন্য অপেক্ষা’ নামে একটি শিশুতোষ চলচ্চিত্রে অভিনয় করছি। করোনার পর থেকেই আমি চেয়েছি নিজেকে ভিন্ন লুকে পর্দায় আনতে। আশা করি দর্শক সেভাবেই পাবে।
বলিউডসহ বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিতে সিনিয়র শিল্পীরাও দাপিয়ে কাজ করছে। কিন্তু আমাদের দেশে এই প্রবণতাটা এতো কম কেনো?
আমার প্রজন্মকে নিয়েই যদি বল; শাবনূর, মৌসুমী, পূর্ণিমা, পপি, রিয়াজ, আমিন খান, অমিত হাসানসহ আরও যারা আছেন সত্যি কথা বলতে আমাদের নিয়ে কেউ-ই ভাবে না। আমাদের নিয়ে সেই ধরণের চরিত্রটা কেউ ভাবে না। এখনো আমার কাছে সিনেমা আসে, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি। আমার নিজের কাছে তো এই চরিত্রে আমি স্বস্তি বোধ করি না। আমার বয়স ও আমার ইমেজ নিয়েই আমার কাছে কাজ আসতে হবে। আমাকে ভেবে কিছু তৈরি করতে হবে। আর বাইরের দেশগুলোতে একজন অভিনেতার বয়স ও ইমেজের উপর গল্প তৈরি করা হচ্ছে। সেই দিক থেকে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। ফলে আমাদের বহু শিল্পী সময়ের আবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে।
এই জায়গাতে দূর্বলতা কাদের বলে আপনি মনে করেন?
এই দূর্বলতা আসলে যারা গল্প লিখছেন ও যারা সিনেমা পরিচালকদের। কারণ পরিচালকদের তো আমাদের নতুন করে পরিচিতি দিতে হবে। নতুন করে উপস্থাপন করতে হবে। আমি ও শাবনূর একই ধরনের চরিত্র করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম। সো, আমাদের চেঞ্জ করতে হবে।
এখন ওটিটি প্ল্যাটফর্ম অনেক জনপ্রিয়। দেশের পাশাপাশি বিদেশেও প্রশংসা পাচ্ছে। তো, ওটিটি নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কি?
ওটিটি হলো আমাদের জন্য নতুন একটি রাস্তা। এটা নিয়ে আমার ভাবনা অনেক পজিটিভ। এটাতে আমিও কাজতে অনেক আগ্রহী। আমার সঙ্গে মেলে এমন গল্প পেলে অবশ্যই কাজ করবো।
সিনেমা প্রযোজনা কিংবা পরিচালনার আপনার কেনো ইচ্ছা আছে?
আমার প্রযোজন প্রতিষ্ঠান থেকে ‘এক কাপ চা’, ‘হঠাৎ সেদিন’ বানিয়েছি। বর্তমানে ‘হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি’ ও ‘যদি আরেকটু সময় পেতাম’ নামে দুটি সিনেমার কাজ শেষ। ভবিষ্যতে আরও সিনেমা প্রযোজনার পরিকল্পনা আছে। তবে পরিচালনার কোনো ইচ্ছে নেই। কারণ পরিচালনা অনেক কঠিন একটি কাজ।
ভক্তদের উদ্দেশ্যে কি বলবেন?
আপনাদের জন্য আজকে আমি ফেরদৌস। আপনাদের জন্যই আমি এখানে দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারছি। আপনারা আমাদের জন্য সিনেমা হলে যাবেন। বেশি বেশি বাংলা সিনেমা দেখবেন। বাংলা সিনেমা বেঁচে থাকলে আমরা বেঁচে থাকবো।