একঝাঁক রেকর্ড গড়ে ব্রিটেনের ৫৭তম প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনাক। দেশটিতে এই প্রথমবারের মতো কোনো অশ্বেতাঙ্গ এবং অভিবাসী পরিবারের সন্তান ব্রিটেনের প্রধান একটি রাজনৈতিক দলের নেতা এবং একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী হলেন। মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) বাকিংহ্যাম প্রাসাদে ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লস সুনাককে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন।
এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলোতে আলোচনার কেন্দ্রে আছেন ৪২ বছর বয়সী সুনাক। তবে শুধু সুনাক একা নন, সংবাদমাধ্যমগুলোর এখন বারবার শিরোনামে আসছেন সুনাকের স্ত্রী অক্ষতা মূর্তি।
ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অক্ষতা মূর্তি ভারতের বিল গেটস খ্যাত ধকুবের নারায়ণ মূর্তির মেয়ে। ব্রিটেনে বসবাস করলেও এখনো ভারতীয় নাগরিক।
১৯৮০ সালে ভারতের কর্নাটকের হুব্বালিতে অক্ষতার জন্ম। বেঙ্গালুরুর স্কুলে পড়াশোনা করেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে এমবিএ পড়ার সময় সুনাকের সঙ্গে পরিচয়। পরবর্তীতে তা প্রণয়ে রুপ নেয়, শেষমেশ ঠেকে পরিণয়ে।
২০০৯ সালের আগস্টে ভারতে তাদের বিয়ে হয়। তাদের বিয়েতে রাজনীতিক, শিল্পপতি, তারকাসহ হাজারখানেক অতিথি ছিলেন। এই দম্পতির আনুশকা ও কৃষ্ণা নামে দুই মেয়ে রয়েছে।
, অক্ষতা কয়েক বিলিয়নের উত্তরাধিকারী অক্ষতা মূর্তি। তবে ব্রিটেনে তার ‘নন-ডোমিসাইল’ স্ট্যাটাসের জন্য বছরের শুরুর দিকে বেশ আলোচনায় এসেছিলেন। ব্রিটেনের তিনি স্থায়ী বাসিন্দা না হওয়ায় দেশটির বাইরে থেকে অর্জিত কোনো আয় বা সম্পদের ওপর কর দিতে হতো না তাকে। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। পরে অবশ্য যুক্তরাজ্যের বাইরে উপার্জিত আয়ের ওপরে কর দিতে সম্মত হয়েছিলেন অক্ষিতা ।
মূর্তি তার প্রথম কর্মজীবন শুরু করেছিলেন ২০১১ সালে। ক্যালিফোর্নিয়ায় নিজের ফ্যাশন হাউজ ‘অক্ষতা ডিজাইন’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শুরু করেন এই যাত্রা। তবে গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুরুতেই ধাক্কা খান অক্ষতা। তিন বছরের মধ্যেই অক্ষতার এই ব্যবসা ধসে যায়।
তবে দমে যাননি তিনি। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে ঋষি এবং অক্ষতা দুজনে মিলে ক্যাটামারান ভেঞ্চারস-এর লন্ডনভিত্তিক শাখা চালু করেন। তবে করোনার কারণে রাজস্ব কমে যাওয়ায় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এই সংস্থাটিকেও মূল প্রশাসনের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
তবে অন্যান্য ব্যবসায়ে তেমন নাম করতে না পারলেও বাবার সম্পত্তিতে বিশাল ভাগ রয়েছে অক্ষতার। সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইনফোসিসের ০.৯ শতাংশ শেয়ারের মালিক অক্ষতা। যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৭০০ মিলিয়ন পাউন্ড।
২০২১ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রয়াত রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের চেয়েও ধনী অক্ষতা মূর্তি। দেশটির ২৫০ জন ধনী ব্যক্তির তালিকায় নাম রয়েছে তার।
এ ছাড়া সানডে টাইমস-এর ‘রিচ লিস্ট’ অনুযায়ী, ঋষি ও তার স্ত্রী অক্ষতা মূর্তির যৌথ সম্পদের পরিমাণ ৭৩ কোটি পাউন্ড। সম্পদের দিক থেকে তারা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, এমনকি ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লসকেও পেছনে ফেলেছেন।
ফরচুন বলছে, রাজা তৃতীয় চার্লস ও ক্যামিলার সম্পদের মূল্য ৩৫ কোটি পাউন্ড আর ঋষি সুনাকের সম্পদমূল্য ৭৩ কোটি পাউন্ড। যা রাজার আনুমানিক সম্পদের চেয়ে দ্বিগুণ।
ব্লুমবার্গ-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিট প্রথমবারের মতো বিলিয়নিয়ার পরিবার পেলো। এ ছাড়া নিউজউইক ম্যাগাজিন বলছে, ব্রিটেনের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের মধ্যে একজন সুনাকের স্ত্রী অক্ষতা মূর্তি।
ব্রিটিশ মিডিয়া চর্চায় বহুবার অক্ষতা-ঋষি দম্পতির বিলাসবহুল জীবন উঠে এসেছে। এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে গত আগস্টে, যুক্তরাজ্যের এক এস্টেটে শুধু সুইমিং পুলের জন্যই ৪ লাখ পাউন্ড ব্যয় করেছিলেন তারা।
এদিকে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো বলছে, ধনকুব এই দম্পতি যুক্তরাজ্যে কমপক্ষে চারটি বাড়ির মালিক। এরমধ্যে লন্ডনের কেনসিংটনে পাঁচ বেডরুমের বাড়িও রয়েছে, যার আনুমানিক মূল্য ৭০ লাখ পাউন্ড। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সান্টা মনিকাতেও তাদের বাড়ি রয়েছে।
প্রচুর সম্পদশালী দলেও মিডিয়ার সামনে সবসময় নম্রতা বজায় রেখেছেন অক্ষতা।