দায়িত্ব নিয়েই অর্থনীতি সামলানোর চেষ্টা শুরু করেছেন ব্রিটেনের প্রথম এশিয়ান প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। তিনি সবসময়ই দুর্বল মানুষদের কল্যাণে কাজ করবেন। তিনি ধনীদের কর বাড়ানোর কথা বলেছেন। এগুলো ছিল তার নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পরই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে ফোন করেছেন ঋষি সুনাক। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গেও কথা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী সুনাকের। তবে প্রথম দিনেই সমালোচনার মুখে পড়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে সুয়েলা ব্রেভারমানকে নিয়োগ দিয়ে।
প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক তার প্রথম ভাষণেই বলেছেন, অর্থনীতিকে স্থিতিশীল অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে মানুষকে কষ্ট করতে হবে। কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে তাকে। ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের সাবেক গভর্নর মারভিন কিংও এ বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন, সাবেক অর্থমন্ত্রী কোয়াজি কোয়ার্টাঙ যেসব কর ছাড়ের পরিকল্পনা দিয়েছিলেন, নতুন অর্থমন্ত্রী জেরেমি হান্ট সাবেক অর্থমন্ত্রীর সব পরিকল্পনা বাতিল করে দিয়েছেন। সরকারি ব্যয়ও হ্রাসের কথা বলেছেন। তা সত্ত্বেও সরকারের ঋণ এখন যে পর্যায়ে আছে, তা শোধ করতে গেলে জনগণের করের বোঝা বাড়বে। ঋষি সুনাক সেই পথেই যাচ্ছেন। তবে ৩১ অক্টোবর একটি অর্থনৈতিক পরিকল্পনা পেশ করার কথা ছিল। এই পরিকল্পনায় যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নত করার চেষ্টায় কিছু কঠোর পদক্ষেপও নেওয়া হতে পারে। কিন্তু সেই পরিকল্পনা পেশ করতে বিলম্ব ঘটবে বলে সরকার জানিয়েছে। আগামী ১৭ নভেম্বর অর্থনৈতিক পরিকল্পনা পেশ করা হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী সুনাক জানিয়েছেন, যথাযথ পরিকল্পনা করেই অর্থনৈতিক নীতি বাস্তবায়ন করা হবে।
জেলেনস্কি ও বাইডেনের সঙ্গে ফোনালাপ
ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে ফোন করে ঋষি সুনাক বলেছেন, তার পুরোপুরি সমর্থন রয়েছে ইউক্রেনের ওপর। আশ্বাস দিয়েছেন যুদ্ধে ইউক্রেনের পাশেই থাকবে ব্রিটেন। ডাউনিং স্ট্রিট জানিয়েছে, ব্রিটেনের প্রধামন্ত্রীর আসনে বসার পর ঋষি সুনাক প্রথম যে বিদেশি নেতার সঙ্গে কথা বললেন, তার নাম জেলেনস্কি। ঋষির এক মুখপাত্র বলেন, ‘জেলেনস্কিকে আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ইউক্রেন ও ব্রিটেনের সম্পর্ক বরাবরের মতো ভালো থাকবে। বস্তুত, তার আমলে দুই দেশের সম্পর্ক আরো শক্তিশালী হবে। তিনি প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে আশ্বস্ত করেছেন যে, সংহতির ক্ষেত্রে তার সরকারের ওপর ভরসা এবং নির্ভর করতে পারেন তিনি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নিয়োগ নিয়ে সমালোচনা
সুনাক মন্ত্রিসভা সাজাচ্ছেন নতুন মুখ দিয়ে। ফিরিয়ে আনছেন কিছু পুরোনো মুখকেও। তার মধ্যে অন্যতম পুরোনো মুখ সুয়েলা ব্রেভারম্যান। ইতিমধ্যেই সুয়েলার নিয়োগ নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে। এক সহকর্মীকে ব্যক্তিগত ই-মেইল অ্যাকাউন্ট থেকে দাপ্তরিক নথি পাঠানোর পর বিতর্ক সৃষ্টি হলে গত ২০ অক্টোবর পদত্যাগের ঘোষণা দেন সুয়েলা। ঐ ঘটনাকে তিনি ‘প্রযুক্তিগত বিধি লঙ্ঘন’ বলে মনে করেন। সুয়েলা বলেন, ‘আমি ভুল করেছি। আমি দায় নিচ্ছি, পদত্যাগ করছি।’ বিধি লঙ্ঘনের দায় নিয়ে সদ্য পদত্যাগ করা একজনকে আবারও পদে ফিরিয়ে আনায় বিরোধীরা সরব হয়েছেন। তারা ঋষি সুনাকের প্রতি তাদের প্রশ্ন, সরকারি গোপনীয়তা সংক্রান্ত নিয়ম লঙ্ঘন করে যিনি পদত্যাগ করেছেন, এক সপ্তাহের ব্যবধানে কীভাবে তাকে সরকারের শীর্ষপদে ফিরিয়ে আনা হলো? লেবার পার্টির এমপিরা বলছেন, সুনাকের সঙ্গে তার পূর্বসূরি বরিস জনসন বা লিজ ট্রাসের কোনো পার্থক্য নেই। শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে ইস্তফা দেওয়া কনজারভেটিভ পার্টির নেত্রীকেই মন্ত্রিসভার জন্য পছন্দ হলো সুনাকের!