সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে এখন শিল্পীদের নানান কনসার্টের খবর যেমন হরহামেশা পাওয়া যায়, তেমনি অসহায়ত্বও দেখা যায়। কারও কারও ক্ষেত্রে এক ধরণের বিভ্রান্তিও তৈরি হয়। ঘটে প্রতারণাও!
গত কয়েক বছর ধরে কণ্ঠশিল্পী আকবর তার দীর্ঘ অসুস্থতা ও চিকিৎসার জন্য বারবার সাহায্য চাওয়াতে অবস্থাদৃষ্টে এমন দাঁড়িয়েছে, যেন তার চিকিৎসার জন্য কেউই এগিয়ে আসেননি। আকবরকে নিয়ে মনগড়া খবরে বিভ্রান্ত ও বিব্রত অনেকেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর সাহায্য তহবিল থেকে নিয়মিত আর্থিক সহযোগিতার ব্যবস্থা করানো হয়েছে আকবরের পরিবারের জন্য। শুধু তাই নয়, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল হাসপাতালের বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থাও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ উদ্যোগে করতে বলে দিয়েছেন। মূলত গণমাধ্যমব্যক্তিত্ব হানিফ সংকেত নিজ উদ্যোগে এই বিষয়গুলো যোগাযোগ করিয়ে দেন।
হানিফ সংকেতের ইত্যাদির মাধ্যমেই মূলত একজন রিকশাশ্রমিক থেকে শিল্পী হিসেবে উত্তরণ হয় আকবরের। এরপর শিল্পী হিসেবে তার পরিচিতি তৈরি হলে মাঝখানে কিছু বিশৃঙ্খল জীবনাচরণের জন্যই আকবর বিচ্ছিন্ন হয়ে যান ফাগুন অডিও ভিশন থেকে। সেই ভুলের কথা আকবর একটি ইন্টারভিউতেও স্বীকার করে বলেছেন, ‘জীবনে কিছু ভুল আমি করেছিলাম।’
কিন্তু এখন শিল্পীর যাপিত জীবনের ভুল আর অনিয়মের কথা বারবার বিভিন্নভাবে প্রচার পাওয়ায় তা যেন বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে ক্রমশ।
এদিকে, ডিপজল ও জায়েদ খান থেকে শুরু করে একাধিক শিল্পী বিভিন্ন সময়ে আকবরের পাশে দাঁড়িয়েছেন বিচ্ছিন্নভাবে এবং আর্থিক সহযোগিতা করেছেন। একাধিক শিল্পীও বিভিন্ন সময়ে তার পাশে দাঁড়িয়েছেন। অথচ এখন অবস্থাদৃষ্টে আকবরের এই অসহায়ত্বকে কেন্দ্র করে চলছে যেন কারও করও ভিডিও কন্টেন্ট বাণিজ্য। বিভিন্ন ধরণের ইউটিউব চ্যানেলে চলছে ভিউ বাণিজ্য।
এ প্রসঙ্গে ফাগুন অডিও ভিশনের কর্মকর্তা মিঠু বলেন, ‘আমরা শুরু থেকে আজ অবধি নিয়মিত অর্থসাহায্য এবং ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার খরচ সবকিছুই দেখাশোনা করে আসছি। কিন্তু যখন দেখি তার অসহায় শরীরের সামনে বা তাকে নিয়ে কিছু টাকা খামে দিয়ে নানান ভিডিও এবং সেখানে এমাউন্টের কথাও উল্লেখ থাকে না, তখনই বুঝি এটা ডিজিটাল প্রতরণা! এর ভেতরে আকবরের স্ত্রী জানালেন, কেউ কেউ ভিডিও করে অর্থসাহায্য দেবার প্রতিশ্রুতি দিলেও পরে আর দেয়নি। কিন্তু আমাদের সাথে আকবরের প্রথম স্ত্রীর অভিযোগও যেমন শুনতে হয়, তেমনি আকবরকে নিয়ে এ সকল প্রতারণার বিষয়গুলোও সুরাহা করতে হয়।’
এ বিষয়ে কণ্ঠশিল্পী রবি চৌধুরী বলেন, ‘আমার কাছে বিষয়টি এখন বিভ্রান্তিকর ও বিব্রতকর মনে হয়। আকবর আমাদেরই ভাই। যেখানে হানিফ সংকেতের মতো মানুষের ছায়া রয়েছে এবং তার কল্যাণে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নিজেই দায়িত্ব নিয়েছেন, মাসিক ভাতার মতো অর্থসাহায্য করে দিয়েছেন, সেখানে এসব ঘটনা সত্যিই দুঃখজনক। কারণ যার সত্যিকারের অর্থে সহযোগিতার মানসিকতা থাকে, সে কখনও প্রচার করবে না। তাই এসব দেখে আমিও শিল্পী হিসেবে বিব্রত হই। প্লিজ কারও অসহায়ত্বকে কেন্দ্র করে নিজের প্রচার করবেন না।’
এদিকে শিল্পীদের সংগঠনসহ একাধিক টিভি চ্যানেলও বিভিন্ন সময়ে খোঁজখবর নেওয়া ও আকবরের দেখাশোনা করছে। তাই একদিকে যেমন আকবরের এই অসহায়ত্বের প্রচারে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছেন এই ভেবে যে, তাকে বোধহয় দেখার কেউ নেই। অন্যদিকে ভুঁইফোড় কিছু চ্যানেলে কিছু গায়ক বা শোবিজকর্মী আর্থিক সাহায্যের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতারণা করছেন।
এ প্রসঙ্গে হানিফ সংকেতের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘আজকের আকবর ইত্যাদির শ্রোতা দর্শকদের ভালবাসার কল্যাণে। শিল্পীদের যে কোনো সংকটে আমি পাশে থেকেছি। কিন্তু তা নিয়ে কখনও বলতে আমি পছন্দ করি না। শিল্পী আকবর আমার ফাগুন অডিও ভিশনের পরিবারের একজন। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী এমন একটি সুব্যবস্থা করে দিয়েছেন ওর পরিবারের জন্য। সেখানে কিছু কিছু অশিল্পীকে যখন দেখি আকবরকে নিয়ে ভিউ বাণিজ্য করছে আবেগকে বিক্রি করে, তখন পীড়া দেয় বিষয়গুলো।’