এবার দফায় দফায় বাড়ছে লবণের দাম। বস্তাপ্রতি (৭৫ কেজি) প্রায় ৪০০ টাকা বেড়ে গেছে। বাজারে প্যাকেটজাত ভোজ্য লবণের দামও কেজিতে দুই-তিন টাকা করে বেড়েছে। কাঁচামালের সংকটে দেশের ৯০ শতাংশ লবণ মিল বন্ধ রয়েছে। লবণ ব্যবসায়ীরা জানান, দেশে বার্ষিক চাহিদা অনুপাতে ৫ লাখ টন লবণের ঘাটতি ছিল। কিন্তু আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে দেড় লাখ টন। আবার ক্যাটাগরি করে আমদানির লাইসেন্স দেওয়ায় মাফিয়ারা ঢুকে পড়েছে। ফলে দেশের গুটিকয়েক বড় মিল মালিকের কাছে লবণের মজুত চলে গেছে। তাই ঘাটতির কারণে লবণের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এখন লবণ উৎপাদনের মৌসুম শুরু হচ্ছে। নতুন মৌসুমের লবণ মিলে আসতে আগামী জানুয়ারির মাঝামাঝি সময় লাগবে। ফলে আগামী আড়াই মাসের চাহিদা মেটানোর মতো লবণ দেশে মজুত নেই। এতে সামনে দাম আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতি বস্তা ৮০০/৯০০ টাকার লবণ এখন দাম বেড়ে ১ হাজার ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আয়োডিনবিহীন খোলা লবণ বিক্রি হচ্ছে প্রতি বস্তা ১ হাজার ৫০০ টাকায়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে চাষিদের হাতে কোনো লবণ মজুত নেই। মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে প্রায় ৪৮ হাজার টনের মতো লবণ মজুত রয়েছে। আর মিল মালিকদের কাছে প্রায় ১ লাখ টনের মতো লবণ মজুত রয়েছে। এসব লবণ দিয়ে নতুন মৌসুমের লবণ আসা পর্যন্ত বাজারের চাহিদা মেটানো যাবে না। বিসিকের মতে, দেশে মাসে পৌনে ২ লাখ টনের মতো লবণের চাহিদা রয়েছে।
বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি নুরুল কবির ইত্তেফাককে বলেন, ঘাটতি পূরণে যথাসময়ে লবণ আমদানির সুযোগ না দেওয়ায় বাজারে সংকট দেখা দিয়েছে। ক্রুড লবণের সংকটে বর্তমানে ৯০ শতাংশ লবণের মিল বন্ধ রয়েছে। এই সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অবৈধ ভাবে সোডিয়াম সালফেট আমদানি করছে। তারা এসব সোডিয়াম সালফেট বাজারে প্যাকেটজাত করে ভোজ্য লবণ হিসেবে বিক্রি করছে। এতে জনস্বাস্থ্য মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। নতুন মৌসুমের লবণ মিল হয়ে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের আগে বাজারে আসবে না। এখন খোলা লবণ দাম বেড়ে প্রতিবস্তা (৭৫ কেজি) ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’
কক্সবাজার জেলার টেকনাফ, কক্সবাজার সদর, মহেষখালী, কুতুবদিয়া, চকরিয়া, পেকুয়া ও বাঁশখালী উপজেলার উপকূলীয় এলাকায় লবণ উৎপাদন হয়ে থাকে। গত বছর ২২ লাখ ১৭ হাজার টন লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তার বিপরীতে উত্পাদন হয়েছিল ১৮ লাখ ১৫ হাজার টন। জানতে চাইলে বিসিক কক্সবাজার কার্যালয়ের ডিজিএম জাফর ইকবাল ভুঁইয়া ইত্তেফাককে বলেন, বর্তমানে মাঠে লবণ মজুত আছে ৪৮ হাজার টন। আর মিল মালিকদের কাছে প্রায় ১ লাখ টনের মতো লবণ মজুত রয়েছে। এখন দাম বেড়ে মিল গেটে প্রতিবস্তা (৭৫ কেজি) ১ হাজার ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে কুতুবদিয়া ও বাঁশখালীতে লবণ উত্পাদন শুরু হয়েছে। আগামী ২০/২৫ দিনের মধ্যে কিছু লবণ পাওয়া যাবে। আমরা তথ্যউপাত্ত মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। আমদানির প্রয়োজন মনে করলে মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিবে।’
চট্টগ্রাম ছাড়াও কক্সবাজারের ইসলামপুর এলাকায় প্রায় দেড় শতাধিকের মতো লবণের মিল রয়েছে। ক্রুড লবণের সংকটের কারণে অধিকাংশ লবণের মিল বন্ধ রয়েছে। ইসলামপুর লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি শামসুল আলম আজাদ ইত্তেফাককে বলেন, ‘চাহিদার তুলনায় প্রায় ৫ লাখ টন লবণের ঘাটতি ছিল। লবণ আমদানির অনুমোদন দেওয়ার ক্ষেত্রে ক্যাটাগরি করায় মাফিয়ারা ঢুকে পড়েছে। এদের মধ্যে বড় মিল বরাদ্দ পেয়েছে ১০ হাজার টন আবার ছোট মিল পেয়েছে ৫/৬ হাজার টন। ফলে গুটিকয়েক মিল মালিক লবণ আমদানির সুযোগ পেয়েছে। বাকি মিল মালিকদের কাছে কোনো লবণ নেই। সবাইকে আমদানির সুযোগ দিলে মিল বন্ধ থাকত না। বাজারে ভারসাম্য থাকত। ক্রুড লবণের সংকটে আমার দুটি মিলের মধ্যে একটি বন্ধ রয়েছে।’