ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটে ব্রিটিশ আমলের একটি ঝুলন্ত সেতু ধসের ঘটনায় ৯ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রবিবার সন্ধ্যায় মোরবি জেলায় মাচ্চু নদীর ওপর ঐ ঝুলন্ত সেতুটি কয়েক শ মানুষ নিয়ে হুড়মুড়িয়ে ধসে পড়ে অন্তত ১৩৫ জন নিহত হয়। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সোমবার সকালে নিহতের সংখ্যা ১৪১ বলে জানায়, পরে তা সংশোধন করা হয়।
সে সময় সেতুতে থাকা অনেকেই অন্ধকারের মধ্যে ছিটকে নদীতে পড়ে যান। সোশ্যাল মিডিয়ায় আসা ভিডিওতে ভেঙে পড়া সেতু থেকে বহু মানুষকে ঝুলে থাকতেও দেখা গেছে। এ সময় সাহায্য পাওয়ার জন্য অনেকে চিত্কার করছিলেন। নিহতদের মধ্যে বহু শিশু, নারী ও বৃদ্ধ লোক আছে। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে নতুন করে কাউকে খুঁজে পাওয়ার আশা ক্রমেই মিলিয়ে যাচ্ছে।
আহমেদাবাদ থেকে ৩০০ কিলোমিটার দূরে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিল ১৯ শতকে, ভারতে ব্রিটিশ শাসনের সময়। স্থানীয়দের কাছে জুল্টো পুল নামে পরিচিত ২৩০ মিটার দীর্ঘ ঐ সেতুতে অনেকেই বেড়াতে যান। সাত মাস বন্ধ রেখে সংস্কার কাজ সেরে মাত্র পাঁচ দিন আগে গুজরাটের নববর্ষের দিন সেতুটি খুলে দেওয়া হয়। কেন সেটি ভেঙে পড়ল তা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে গুজরাট প্রশাসন।
পুলিশ জানিয়েছে, যে ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে তারা সবাই ওরেভা গ্রুপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, এই কোম্পানি সেতুটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে। এই গোষ্ঠীর অন্তর্গত অজন্তা ম্যানুফ্যাকচারিং প্রাইভেট লিমিটেডের সঙ্গে সেতু সংস্কারের কাজ নিয়েমোরবি পৌরসভার চুক্তি হয় বলে জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম। উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা অশোক কুমার যাদব জানান, তাদের সবাইকে অপরাধমূলক হত্যার জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, এই ৯ জনের মধ্যে দুই জন সেতুস্থলে ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেন আর অন্য দুই জন টিকিট বুকিং কেরানি। বাকি পাঁচ জনের মধ্যে দুই জন সেতু সংস্কারের ঠিকাদারি কাজ পেয়েছিলেন ও অপর তিন জন নিরাপত্তা রক্ষী যাদের কাজ ছিল ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা। এই গ্রেফতারের বিষয়ে তাত্ক্ষণিকভাবে ওরেভা গ্রুপ কোনো মন্তব্য করেনি বলে জানা গেছে । এর আগে কোম্পানিটির একজন মুখপাত্র ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বলেন, যদিও আমরা আরো তথ্যের জন্য অপেক্ষা করছি, প্রথম দৃষ্টিতে বলা যায়, সেতুটির মাঝামাঝি জায়গায় অতিরিক্ত লোক থাকায় সেটি ধসে পড়েছে, তারা সেতুটিকে দোলনার মতো দোলাচ্ছিল।
ওরেভা গ্রুপ এক সময় নিজেদের ‘বিশ্বের সর্ববৃহত্ ঘড়ি নির্মাতা কোম্পানি’ হিসেবে বর্ণনা করেছিল। পরে তারা ব্যাটারি চালিত বাইক, গৃহস্থালি যন্ত্রপাতি ও টেলিভিশন নির্মাণ শুরু করে। এ রকম একটি কোম্পানিকে কেন সেতু রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হলো তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সেতুটি খুলে দেওয়ার আগে নিরাপত্তা পরীক্ষা ঠিকমতো করা হয়েছিল কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সংস্কারের জন্য সেতুটি আট থেকে ১২ মাস বন্ধ রাখার কথা থাকলেও মাত্র সাত মাসের মাথায় কেন খুলে দেওয়া হলো এ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।